Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

চাষিদের উষ্মা, মোদীর জবাব বেশি ক্ষতিপূরণ

সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতিকে অস্ত্র করে নরেন্দ্র মোদীকে ‘কৃষক-বিরোধী’ তকমা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বিরোধীরা। সঙ্গে যোগ হয়েছিল অকাল-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষোভ। রাজনৈতিক ভাবে যা কাজে লাগাতে সনিয়া গাঁধী কাল চিঠিও দিয়েছেন মোদী সরকারকে। এই জোড়া চাপ জিইয়ে না রেখে দ্রুত জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। অকাল ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের উষ্মা কমানোর চেষ্টা করলেন তাঁদের জন্য বাড়তি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে চেষ্টা করলেন সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক অস্ত্র ভোঁতা করার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতিকে অস্ত্র করে নরেন্দ্র মোদীকে ‘কৃষক-বিরোধী’ তকমা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বিরোধীরা। সঙ্গে যোগ হয়েছিল অকাল-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষোভ। রাজনৈতিক ভাবে যা কাজে লাগাতে সনিয়া গাঁধী কাল চিঠিও দিয়েছেন মোদী সরকারকে। এই জোড়া চাপ জিইয়ে না রেখে দ্রুত জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। অকাল ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের উষ্মা কমানোর চেষ্টা করলেন তাঁদের জন্য বাড়তি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে চেষ্টা করলেন সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক অস্ত্র ভোঁতা করার।

এত দিন ৫০ শতাংশ ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ পেতেন কৃষকরা। এখন থেকে ৩৩ শতাংশ ফসল নষ্ট হলেই ক্ষতিপূরণ মিলবে বলে মোদী আজ ঘোষণা করেন। ক্ষতিপূরণের পরিমাণও দেড়গুণ হয়েছে। মোদী একে স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে সবথেকে বড় মাপের ক্ষতিপূরণ বলে দাবি করলেও কংগ্রেসের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় নগণ্য।

বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তে কৃষকদের কিছুটা সুরাহা হবে। সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধিতাও কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে কৃষি সঙ্কট ও অর্থনীতিতে তার প্রভাব সামাল দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কৃষি মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঝড়-বৃষ্টিতে রবিশস্যের ক্ষতির অঙ্কটা ৭ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে যেতে পারে। বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের সমীক্ষা বলছে, মানুষকেও এর খেসারত দিতে হবে। খুব শীঘ্রই শাকসব্জি ও ফলের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে।

ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ধাক্কায় উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, পঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রতিটি রাজ্যেই কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যদিও ফসল নষ্ট হওয়া বা ঋণের চাপেই যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, সরকারি ভাবে তা মানা হচ্ছে না। সরকারি ভাবে মানা হোক বা না হোক, বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছিলেন চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। সেই ক্ষোভ এসে পড়ছে বিজেপি তথা মোদী সরকারের উপরেই। কারণ, লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা হাত উপুড় করে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রত্যাশাও তাই বেশি। আগামী বছর আর এক কৃষিপ্রধান রাজ্য বিহারে ভোট। সেখানেও ভাল ফলের আশা করছে বিজেপি। কিন্তু এক দিকে কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দলগুলি প্রচার করছে, মোদী সরকার শিল্পের জন্য সহজে জমির বন্দোবস্ত করতে গিয়ে কৃষকস্বার্থের বিরোধী জমি বিল আনছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অকাল-বৃষ্টি।

বিষয়টি যে মোদীকেও ভাবিয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে আজ। ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য এ দিন নতুন মুদ্রা-ব্যাঙ্কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই মঞ্চ থেকেই চাষিদের ওই সুরাহার ঘোষণা করেন তিনি। সঙ্গে রাজনৈতিক বার্তা দিতে উল্লেখ করেন, বাড়তি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে গিয়ে রাজকোষে বোঝা চাপবে। সেটা জেনেও সরকার দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কিন্তু বাড়তি ক্ষতিপূরণেই কি এই অকাল-বৃষ্টির ধাক্কা সামলানো যাবে?

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এমনিতেই ২০১৩-’১৪-র তুলনায় ২০১৪-’১৫-তে কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল যথেষ্ট কম। আগের বছরের ৩.৭ শতাংশের থেকে তা নেমে এসেছিল ১.১ শতাংশে। অনাবৃষ্টিতে ২০১৪-’১৫-য় খাদ্যশস্য উৎপাদন আগের বছরের থেকে ৩ শতাংশ কম হবে বলে মনে করা হচ্ছিল। মার্চে এল নতুন ধাক্কা, অকাল বর্ষণ। ১৪টি রাজ্যে ফসলের কমবেশি ক্ষতি হয়েছে তাতে। নষ্ট হয়েছে সিকি ভাগ রবিশস্য।

কৃষি মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, দেশে যথেষ্ট খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। ফলে খাদ্যাভাবের আশঙ্কা নেই। তবে সন্দেহ নেই কৃষকদের ঋণের বোঝা চাপবে। যে জন্য প্রধানমন্ত্রী ব্যাঙ্কগুলিকে কৃষকদের সহজ কিস্তিতে ঋণ শোধের ব্যবস্থা করতে বলেছেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনও জানান, তাঁরাও ব্যাঙ্কগুলিকে এই বিষয়ে নির্দেশ পাঠিয়েছেন। একই ভাবে বিমা সংস্থাগুলিকেও দ্রুত ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে মঞ্চ থেকেই এ দিন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সুরাহার দাবিতে গত কাল মোদী সরকারকে চিঠি লিখেছিলেন সনিয়া গাঁধী। তাঁর দাবি ছিল, কৃষকদের কাছ থেকে গম কেনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় খাদ্য নিগম নিয়ম শিথিল করুক। সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান আজ জানান, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনুরোধ খতিয়ে দেখে নিয়ম শিথিল করা হবে। কিন্তু কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কৃষকদের বেকুব বানাতে চাইছেন। উত্তর ভারতে ১ কোটি ১৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে রবিশস্যের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী কোনও কৃষককে সর্বোচ্চ ২ হেক্টর জমির জন্য ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। যার পরিমাণ ৯ হাজার টাকার বেশি নয়। কর্নাটকই কেন্দ্রের আড়াই গুণ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। কংগ্রেস মুখপাত্র খুশবু বলেন, ‘‘মোদী সরকারের ঘোষণা নিয়ে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি কী বলছে, জানার ইচ্ছা রইল। কারণ মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলি হেক্টর প্রতি
কেউ ১০ হাজার, কেউ বা ১৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল।’’ কংগ্রেসের দাবি, ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাড়িয়ে হেক্টর প্রতি অন্তত ২০ হাজার টাকা করা হোক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy