সব জেনেশুনেই তাঁকে ‘বিষ’ পান করতে হল!
তিনি, তৃণমূলের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ হারানো কোণঠাসা সাংসদ, মুকুল রায়। দলের হুইপ মেনে আজ তাঁকে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার সংশোধনী প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এর কিছু ক্ষণ পরেই মুকুল বোঝাতে চেয়েছেন যে বাধ্য হয়েই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যেতে হয়েছে তাঁকে। কেননা, এই ভোটকে তিনি মন থেকে মানতে পারছেন না কিছুতেই।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপরে বিরোধীদের আনা সংশোধনী পাশ হয়েছে অতীতেও। সংসদীয় ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যাবে, ১৯৮০ সালে জনতা পার্টির আমল (৩০ জানুয়ারি) কিংবা ১৯৮৯-তে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের জমানা (২৯ ডিসেম্বর) অথবা ২০০১ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে (১২ মার্চ) এমন ঘটনা ঘটেছে। সেই হিসেবে আজ চতুর্থ বার এ ভাবে সরকারের হেরে যাওয়ার ঘটনা ঘটল। সংসদে এত দিন দলের শীর্ষ পদে থাকা নেতার পক্ষে এ সব বিষয়ে অন্ধকারে থাকার সম্ভাবনা কম। অথচ ভোট দিয়ে বেরিয়েই মুকুল রায়ের মন্তব্য, “দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও হয়নি। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপর ভোটাভুটি করা সংসদীয় রীতিনীতির বিরুদ্ধ কাজ।”
বিজেপির দিকে পা বাড়িয়ে থাকা কোণঠাসা মুকুল বোঝাতে চান, রাষ্ট্রপতি এক বার যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়ে দেওয়ার পরে তা ফের বদলানো হবে, এটা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। কোন পরিস্থিতিতে তাঁকে ভোট দিতে হল, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুকুল বলেন, “দলের হুইপ ছিল। যদি তা অমান্য করি, তা হলে সংসদের সদস্যপদ চলে যাবে। আমি এখনও তৃণমূলের সাংসদ।” রাজনৈতিক শিবিরের মতে, সবেধন সাংসদ পদটি এখন কোনও ভাবেই হারাতে চাইছেন না তৃণমূলের প্রাক্তন নাম্বার টু। সে জন্যই দলের হুইপ মেনে ভোট দিয়েছেন তিনি। নিয়ম হল, কোনও সাংসদকে অধিবেশনে হাজির থাকার জন্য হুইপ দিতে হলে ৪৮ ঘন্টা আগে বাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে তা জানাতে হয়। কিন্তু মুকুল রায়ের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। আজ তিনি রাজ্যসভায় এলে তৃণমূলের নতুন নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন তাঁর হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন। যাতে হুইপের প্রসঙ্গ লেখা ছিল।
এর পরে মুখ বুজে মুকুলকে দলের নির্দেশ মানতে হয়েছে। কারণ এখন তিনি ঘরে বাইরে কোথাও ঠিক ভাবে নেই। বিজেপি তাঁকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে ভাঙতে চাইছে। কিন্তু সিবিআই ক্লিনচিট না দেওয়া পর্যন্ত তাঁকে দলে নিতে চাইছেন না বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেছেন, “ভাবমূর্তিতে দাগ রয়েছে এমন কোনও ব্যক্তিকে আমরা নেব না।” তাই ‘দাগমুক্ত’ না হওয়া পর্যন্ত সতর্কতার সঙ্গেই থাকতে হচ্ছে মুকুলকে। তবে এর মধ্যেই বিজেপির প্রতিও সদর্থক বার্তা দিতে কসুর করছেন না তিনি। আগেই কেন্দ্রীয় বাজেটের প্রশংসা করেছিলেন। আজও রাজ্যসভায় বসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা মন দিয়ে শুনতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে মোদীর বক্তৃতার মধ্যেই সরব হয়েছেন সুখেন্দুশেখর রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েনরাএক বারের জন্যও গলা মেলাননি মুকুল। বরং পরে মন্তব্য করেছেন, “বাংলার আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন সবটাই ঠিক।”
শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি আসছেন। কিন্তু মমতা যখন দিল্লিতে, মুকুলের তখন কলকাতায় থাকার সম্ভাবনা। মুকুলকে নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই আজ দিল্লি পৌঁছেছেন তৃণমূলের নতুন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দলের বিভিন্ন কাজকর্মে নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়েছেন মুকুল রায়। আজ সেখানে গেলেন সুব্রত বক্সী। দলের নতুন ওয়ার্কিং কমিটির তালিকা তিনি জমা দিলেন কমিশনে। তবে মুকুলকে নিয়ে সংসদে হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হলেও কোনও জবাব দিতে চাননি বক্সী। তৃণমূলের এক নেতার মতে, “মুকুল রায় কী ভাবে তৃণমূলে ভাঙন ধরাবেন? এত দিন ধরে তিনিই তো নেত্রী ও অন্য নেতাদের মধ্যে পাঁচিল হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। এখন তিনি ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার অর্থ, সেই পাঁচিল সরে যাওয়া।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy