Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

পঠানকোট কাণ্ডে ডোভালের পাশে মোদী-জেটলিরা

পঠানকোটে কাণ্ডের পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, এ বার তাঁর সমর্থনে মাঠে নামলেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিরা। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের যুক্তি, ডোভাল গোটা অভিযানের তত্ত্বাবধানে থাকায় এ যাত্রায় বড় মাপের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তাঁরই কুশলী চালেই রুখে দেওয়া গিয়েছে জঙ্গিদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:১৪
Share: Save:

পঠানকোটে কাণ্ডের পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, এ বার তাঁর সমর্থনে মাঠে নামলেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিরা। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের যুক্তি, ডোভাল গোটা অভিযানের তত্ত্বাবধানে থাকায় এ যাত্রায় বড় মাপের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তাঁরই কুশলী চালেই রুখে দেওয়া গিয়েছে জঙ্গিদের। অভিযানের দীর্ঘসূত্রিতা, জঙ্গি দমনে নেতৃত্বের প্রশ্নে ধোঁয়াশার মতো বিষয়গুলি নিয়ে বিরোধীরা ডোভালের বিরুদ্ধে সরব হলেও, জঙ্গি হামলা সত্ত্বেও, যে ভাবে গোটা ঘাঁটি অক্ষত থেকে গিয়েছে তা যথেষ্ট কৃতিত্বের বলেই মনে করছে সরকার। এ দিকে তদন্তে নেমে গোটা পঠানকোট কাণ্ডের যোগসূত্র যিনি হতে পারেন সেই গুরুদাসপুরের পুলিশ সুপার সালবিন্দ্র সিংহকে পলিগ্রাফ পরীক্ষার জন্য সোমবার দিল্লি ডেকেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

ঘটনার পরে শুধু বিরোধীরাই নয়, ডোভালের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সরকার তথা দলের মধ্যেই। শুক্রবার রাতেই গোটা অভিযানের রাশ নিজের হাতে নিয়ে নেন ডোভাল। সূত্র বলছে, গোটা অভিযানটি কী ভাবে ধীরে ধীরে পরিণতির দিকে এগোচ্ছে সে বিষয়ে ডোভাল, প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছাড়া অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে সম্পূর্ণ তথ্য ছিল। ফলে অভিযোগ ওঠে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই শুধু নয়, সেনাপ্রধানকেও সব কিছু জানানো হয়নি। যা নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় সরকারের অন্দরমহলেও। অভিযোগ ওঠে, সব পক্ষের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় সেনা এবং এনএসজি-র তালমিলে সমস্যা হয়েছে। অভিযান দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে।

বিরোধী ও দলের মধ্যে এই অভিযোগ উঠতে শুরু করায় ডোভালের পক্ষে মুখ খুলতে বাধ্য হন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। ঘনিষ্ঠ মহলে জেটলিদের দাবি, যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গেই এত বড় মাপের আত্মঘাতী হামলা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গিরা ঘাঁটিতে ঢুকে পড়া সত্ত্বেও যে ভাবে তাদের ছোট জায়গায় আটকে রাখা সম্ভব হয়েছিল তা সেনা এবং এনএসজি-র জন্য বড় মাপের কৃতিত্ব বলেই দাবি সরকারের। কেন্দ্রের বক্তব্য, জঙ্গি হামলার খবর আসার পরেই দ্রুত ঘাঁটিতে সেনা এবং এনএনজি কম্যান্ডো মোতায়েন করা হয়েছিল। এর ফলেই ঘাঁটির কোনও ক্ষতি হয়নি। বা নিরীহ মানুষ মারা যাননি। কেন্দ্রের মতে, বিরোধীরা সমন্বয়হীনতার প্রশ্নে অভিযোগের আঙুল তুললেও এই অভিযানের গোটা কৃতিত্বই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের। তিনি পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে দ্রুত পদক্ষেপ করে সেনা মোতায়েন করেন। সরকারের দাবি, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের হামলা না হয় তার জন্য সুরক্ষার ছিদ্রগুলিকে খুঁজতে এনআইএ-কে বিশেষ ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আর সেই কাজে নেমে প্রথমেই সলবিন্দ্র রহস্যের সমাধান করতে চাইছেন গোয়েন্দারা। জঙ্গিদের হাতে প্রথম অপহৃত হয়েও ছাড় পেয়ে যাওয়া সলবিন্দ্রের বয়ানে অসঙ্গতি ছিল শুরু থেকেই। গত দু’দিন ধরে তাঁকে দফায় দফায় জেরাও করেন এনআইএ গোয়েন্দারা। তাঁর গুরুদ্বারা যাওয়া ও সেখান থেকে ফেরা এবং জঙ্গিদের হাতে অপহরণ ও মুক্তি— গোটা ঘটনাক্রমে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। প্রকৃত সত্যটি কী তা জানতে তাঁকে সোমবার দিল্লিতে এনআইএ-র সদর দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছে। সূত্রের খবর, সেখানে তাঁর পলিগ্রাফ পরীক্ষা হবে। সাহায্যের আশ্বাস এসেছে প্রতিবেশী দেশ থেকেও। ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে তদন্তে গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও।

পুলিশ সুপারের ভূমিকা ছাড়াও সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি অনুপ্রবেশের পিছনে ভিতরের আর কোনও লোকের হাত ছিল কি না তা খতিয়ে দেখছে এনআইএ। প্রাথমিক ভাবে এনআইএ গোয়েন্দারা মনে করছেন, জঙ্গিরা সম্ভবত ঘাঁটির ভিতর থেকে স্থানীয় কোনও ব্যক্তির সাহায্য পেয়েছিলেন। অভিযানের শেষে মৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে যে পরিমাণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয় তার থেকে এনআইএ মনে করছে, বায়ুঘাঁটির কোনও কর্মীর সাহায্য ছাড়া এই পরিমাণে হাতিয়ার ঘাঁটিতে ঢোকানো সম্ভব ছিল না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বলছে, গত এক মাসে দেশের বিভিন্ন সেনা ঘাঁটি থেকে পাক চরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা থেকে পঠানকোট ঘাঁটিতেও পাক চরের উপস্থিতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

গত কাল বিএসএফ জানিয়েছিল পঞ্জাব সীমান্ত দিয়ে কোনও জঙ্গি অনুপ্রবেশ হয়নি। কিন্তু আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, সীমান্ত লাগোয়া বামিয়াল গ্রামে এক কৃষকের ক্ষেতে একটি জুতোর ছাপ পাওয়া গিয়েছে। তাতে যে জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থাটির নাম ফুটে উঠেছে সেটি পাকিস্তানের। এ ছাড়াও মৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে ব্যথানাশক ওষুধ বা সিরিঞ্জ পাওয়া গিয়েছে সেগুলিও করাচিতে তৈরি। পাকিস্তানের হাতে প্রমাণগুলিও তুলে দিতে চলেছে ভারত। আপতত সেগুলির ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় ফরেনসিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত তদন্তে একটি বিষয়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত যে ছ’জনের জঙ্গিরা দু’দলে ভাগ হয়ে বায়ুঘাঁটিতে প্রবেশ করে। প্রথম দলে ছিল দু’জন জঙ্গি। দ্বিতীয় দলে চার জন। দু’জনের জঙ্গির দলটি শুক্রবারের মধ্যেই ঘাঁটিতে ঢুকে যায়। মর্টার নিয়ে ঢোকা এই দলের উপরেই মূলত ঘাঁটির স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসেট নষ্ট করার দায়িত্ব ছিল। আর দ্বিতীয় দলটির চার জন শনিবার ভোর রাতে ঘাঁটিতে প্রবেশের চেষ্টা করে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, দ্বিতীয় দলটির কাজ ছিল হামলা চালিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করে দেওয়া। যাতে সেই সুযোগে প্রথম দলটি ঘাঁটির গুরুত্বপূর্ণ অংশে হামলা চালাতে সক্ষম হয়। যা ডোভালের কুশলী চালে সম্ভব হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

modi arun narendra jaitley delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy