গঙ্গা সাফাই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা বৈঠকে গত কাল যোগ দিয়েছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। প্রায় দু’বছর পর মোদী-নীতীশ মোলাকাতের সেই ছবি ছিল রাজনীতির অলিন্দে অন্যতম চর্চার বিষয়। এমনকী এই জল্পনাও কেউ কেউ উস্কে দিয়েছিলেন যে, সঙ্ঘ পরিবার চাইছে, নীতীশের সঙ্গে ফের বন্ধুত্ব পাতাক বিজেপি!
কিন্তু রাত পোহাতেই জল্পনার সেই মেঘ কাটিয়ে দিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। আজ একে একে দেখা করলেন সনিয়া গাঁধী, লালু প্রসাদ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ও জেলে বন্দি জাঠ নেতা ওমপ্রকাশ চৌটালার সঙ্গে। জাতীয় রাজনীতির সমীকরণে যাঁরা সকলেই মোদীর বিরোধী!
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, খুব পরিষ্কার বার্তা দিলেন নীতীশ। তা হল যতই তিনি প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে যোগ দিন, বিহারে আসন্ন বিধানসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীর দলের সঙ্গে লড়াইয়ের রাজনীতিটাই ধরে রাখবে নীতীশের দল জেডিইউ।
বস্তুত, লোকসভা ভোটের সময় থেকেই কট্টর মোদী-বিরোধী অবস্থান নিয়ে চলছিলেন নীতীশ। এনডিএ-তে থাকাকালীনও তিনি মোদীর সঙ্গে এক মঞ্চে উপস্থিত থাকতে চাইতেন না। মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার প্রতিবাদেই বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি নতুন দফায় মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসা ইস্তক মোদী সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছেন নীতীশ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নীতীশের এই দ্বিমুখী কৌশল মোটেই রহস্যজনক কিছু নয়। নীতীশ জানেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাই না করেন (যে ভাবে দীর্ঘ সময় মোদীকে এড়িয়ে চলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়), তা হলে এই বার্তা যাবে যে দু’জনের তিক্ত সম্পর্কের কারণে রাজ্যের উন্নয়ন বাধা পাচ্ছে। বিহারে ৬ মাস বাদে বিধানসভা ভোট। মোদী-নীতীশ মুখ দেখাদেখি না থাকলে বিজেপি তখন প্রচার করবে যে, কেন্দ্রে ও রাজ্যে একই দল সরকারে থাকলে বিহারের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। বিজেপির সেই রাজনীতির দরজাতেই তালা লাগাতে চাইছেন নীতীশ। বিহারকে বোঝাতে চাইছেন, বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শে ফারাক থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার শর্ত তিনি মেনে চলবেন।
এই কারণেই সম্প্রতি সংসদে সাধারণ বাজেট পেশ হওয়ার আগে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন নীতীশ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জেটলির বাসভবনে নৈশভোজেও যান এবং বাজেটে বিহারের শিল্পায়নের জন্য উৎসাহ ভাতা আদায় করে নেন। একই সঙ্গে নিজের রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী রাজনীতিটাও ধরে রাখলেন রামমনোহর লোহিয়ার এই বুদ্ধিমান ছাত্র। বিহার বিধানসভা ভোটে লালু প্রসাদ ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়া নীতীশের লক্ষ্য। লালু ও সনিয়ার সঙ্গে তিনি সেই বিষয়েই আলোচনা করেন। দিল্লির সচিবালয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালকে বাহবা দেন বিধানসভা ভোটে বিজেপি-কে পর্যুদস্ত করার জন্য। শেষে জেলে গিয়ে চৌটালার সঙ্গে দেখা করে জাঠ সংরক্ষণের পথে বাধা নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তাঁকে তাতিয়ে আসেন। নীতীশ জানেন, উন্নয়নের কথা আলাদা। কিন্তু বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে টিকে থাকতে হলে জাতভিত্তিক রাজনীতি ছাড়া তাঁর গতি নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy