নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
সব নাকি ‘ঝুট হ্যায়’! এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নাকি কোনও আলোচনাই করেনি, দেশে নাকি কোনও ডিটেনশন শিবিরও নেই।
রামলীলা ময়দানের সভা থেকে এমনই দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে যাবতীয় বিরোধী স্বরকে মিথ্যাবাদী বলে দেগে দিলেন। তার মধ্যে বিরোধী দলেরা আছে, গাঁধী পরিবার আছে, শহুরে নকশালরাও আছে। মোদীর মতে, এরা সবাই সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, রাশি রাশি মিথ্যা বলছে। এনআরসি-সিএএ নিয়ে যাবতীয় বিরোধী আলোচনাই মিথ্যায় ঠাসা!
দিল্লির নির্বাচনী জনসভায় মোদীর মুখ থেকে এত নিন্দাবাক্য শোনার পর বিরোধীদের প্রশ্ন, মোদী নিজে তা হলে আজ কোন সত্যিটা বললেন? মোদী তো বললেন, সরকার এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনাই করেনি। সেটা কি সত্যি কথা? মোদী তো বললেন— ‘‘দেশের মুসলমানকে কোনও ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে না। দেশে কোনও ডিটেনশন সেন্টারও নেই’’— এটা কি সত্যি কথা? মোদীর দাবিকে কটাক্ষ করে কংগ্রেসের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কি মনে করেন ভারতীয়রা গুগল সার্চটাও করতে পারেন না? ওঁর মিথ্যে লোকে ধরতে পারবেন না?’’
মোদীর মন্তব্যে হতবাক অসমের বিজেপি নেতারাও। প্রশ্ন উঠেছে, অসমের গোয়ালপাড়ায় সাতটি ফুটবল মাঠের সমান এলাকা জুড়ে যে ডিটেনশন কেন্দ্র গড়ে উঠছে, সেটা তা হলে কী! এমনকি ক’দিন আগে সংসদে সরকারই জানিয়েছে, অসমের ডিটেনশন ৯৮৮ জন লোক রয়েছেন। শুধু তাই নয়, আর এক বিজেপি শাসিত রাজ্য কর্নাটকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের রাখার জন্য ৩৫টি অস্থায়ী ডিটেনশন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তার পরেও কী ভাবে খোদ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে ডিটেনশন কেন্দ্রের কোনও অস্তিত্ব নেই! উল্টে তা নিয়ে প্রচারের জন্য বিরোধী ও শহুরে নকশালদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি।
দিল্লিতে থেকেও এ দিন রামলীলায় আসেননি মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ। যিনি গত ক’মাস ধরে সংসদের ভিতরে, জনসভায় বা সাক্ষাৎকারে লাগাতার বলে চলেছেন, ‘‘প্রথমে নাগরিকত্ব আইন, পরে এনআরসি।’’ মোদীর কথা সত্য হলে কি অমিতের কথা মিথ্যা? প্রশ্ন সর্বস্তরে।
আগামী বছরের গোড়াতেই দিল্লিতে বিধানসভা ভোট। দলের তরফে তার প্রচারের সূচনা করতেই এ দিন সভা করেন মোদী। সেখানে দিল্লির উন্নয়ন নিয়ে কথা তো উঠলই না! যেমন উঠল না দেশের বেহাল অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, পেঁয়াজ-সহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আগুন দাম নিয়ে কথা।
পৌনে দু’ঘণ্টার দীর্ঘ বক্তৃতার প্রায় গোটাটাই মোদী খরচ করলেন নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে।
বিরোধীদের মতে, মোদী বোঝাতে চেয়েছেন অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়া দশা, বেকারি, পেঁয়াজ-সহ প্রতিটি নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম— এ সব কোনও বিষয়ই নয়। আজ মোদীর বক্তৃতার পরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল বলেছেন, ‘‘দয়া করে চাকরি, অর্থনীতি এ সব নিয়ে আলোচনার জন্য সব মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে বৈঠক ডাকুন প্রধানমন্ত্রী।’’ কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার কথায়, ‘‘অর্থনীতি তরতর করে নীচে নামছে। আর মোদী পড়ে রয়েছেন হিন্দু-মুসলমানের ভেদাভেদে! উনি বলছেন, বিরোধীরা মিথ্যা প্রচার করছে। কিন্তু কে আসলে মিথ্যা বলছে, তা দেশের লোকের কাছে স্পষ্ট।’’
মোদীর বক্তৃতার পরে রাহুল গাঁধী দেশের ছাত্রদের উদ্দেশে টুইট করলেন, ‘‘বিভাজন করার জন্য মোদী-শাহকে যেন কোনও ছাত্র অনুমতি না দেন। ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ।
এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে ওই ঘৃণার মোকাবিলা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy