২০২৬ সালে লোকসভা এবং বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন। তিনি এতটাই আশঙ্কিত যে, শনিবার দক্ষিণ ভারতের সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে বৈঠকে ডেকেছেন। ডাকা হয়েছে বাংলা, ওড়িশা এবং পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীকেও। যদিও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লন্ডন সফরের জন্য চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে থাকতে পারবেন না। ওড়িশায় বিজেপির সরকার। কিন্তু অ-বিজেপি স্ট্যালিন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝিকেও ডেকেছেন। স্ট্যালিনের আশঙ্কা, জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাসের ভিত্তিতে আসলে হিন্দির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে বিজেপি।
শেষ বার আসন পুনর্বিন্যাস হয়েছিল ২০০৫ সালে। যার ভিত্তিতে প্রথম ভোট হয়েছিল ২০০৯ সালের লোকসভায়। নিয়মানুযায়ী এক দশক অন্তর জনগণনার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস হওয়ার কথা। কিন্তু ২০১১ সালের পরে সেই গণনা হয়নি। বিরোধীদের অনেকেরই প্রশ্ন, তা হলে কিসের ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস হবে? জরুরি অবস্থার সময়ে (১৯৭৫ সাল) থমকে গিয়েছিল আসন পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া। তার পর নানা ঘাত প্রতিঘাতের পরে আসন পুনর্বিন্যাস হয় ২০০৫ সালে। জনসংখ্যার অনুপাতে আসনও বৃদ্ধির হওয়ার কথা। এখানেই অশনি সঙ্কেত দেখছে দক্ষিণ ভারত। পাল্টা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এ নিয়ে স্ট্যালিনের মতো নেতারা দেশে উত্তর-দক্ষিণ বিভাজনের চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন:
দক্ষিণী নেতাদের অনেকেরই অভিমত, তাঁরা তাঁদের রাজ্যগুলিতে যে কঠোর ভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেছে, উত্তর ভারতে তা হয়নি। ফলে উত্তর ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক। জনসংখ্যার নিরিখে আসন বৃদ্ধি হলে সার্বিক ভাবে উত্তর ভারত তথা হিন্দি বলয় হয়ে উঠবে দেশের নিয়ন্ত্রক। স্ট্যালিনদের আশঙ্কা, এর ফলে বিপন্ন হবে অ-হিন্দি ভাষা এবং সংস্কৃতিও।
এই প্রশ্ন রয়েছে, আজ থেকে ৫০ বছর আগেও লোকসভায় ৫৪৩টি আসন ছিল এখনও তাই, তা কী ভাবে সম্ভব? বিধানসভা আসনের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু সেই আসনবৃদ্ধির সূচক একমাত্র জনসংখ্যা হলে উত্তর ভারত যুগের পর যুগ ভারতকে নিয়ন্ত্রণ করবে। বিরোধীদের আশঙ্কা, ২০২৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার আসন পুনর্বিন্যাস করে লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে নিতে পারে। জনসংখ্যা অনুযায়ী লোকসভায় সাংসদসংখ্যা বৃদ্ধি হলে হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলি থেকে লোকসভার আসনসংখ্যা অনেকটা বৃদ্ধি পাবে। তুলনায় দক্ষিণের রাজ্যগুলির সাংসদসংখ্যা তেমন বৃদ্ধি পাবে না। ফলে গোটা প্রক্রিয়ায় বিজেপির লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বলে মনে করছে বিরোধী দলগুলির একটা অংশ। শনিবার স্ট্যালিনের বৈঠকে কারা যান, কী আলোচনা হয়, সে দিকেই নজর সকলের।