মিজ়োরামে ভোটগণনা সোমবার। — ফাইল চিত্র।
রবিবার চার রাজ্যে ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে যা পরিস্থিতি, তাতে আরও চওড়া হতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাসি। কারণ মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা, রাজস্থানের মধ্যে তিন রাজ্যেই এগিয়ে বিজেপি। আর মিজ়োরাম? সোমবার সে রাজ্যের ভোটগণনা। তা কতটা প্রভাব ফেলবে দেশের রাজনীতিতে? কতটা প্রভাব ফেলবে আসন্ন লোকসভায়? বাস্তব বলছে, বিধানসভা নির্বাচনে ৪০ আসনের ফলাফল যা-ই হোক, একটি লোকসভা আসনের মিজ়োরাম নিয়ে বিজেপি বা কংগ্রেস, কারও আর সে ভাবে কোনও মাথাব্যথা নেই। তবে অনেকের মতে, মিজ়োরাম বিধানসভার ভোটের ফলাফল প্রভাব ফেলতে পারে উত্তর-পূর্বের বাকি রাজ্যে। সে ক্ষেত্রে ধাক্কা খেতে পারে অমিত শাহের ‘কংগ্রেসমুক্ত উত্তর-পূর্ব ভারত’-এর লক্ষ্য।
মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা এবং রাজস্থানের সঙ্গে রবিবারেই ভোটগণনার কথা ছিল মিজ়োরামেও। কিন্তু স্থানীয় সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলির দাবি মেনে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে, ভোটগণনা রবিবারের পরিবর্তে সোমবার হবে। চার রাজ্যের মধ্যে তিনটি রাজ্যে ‘গেরুয়া ঝড়’ হলেও ‘মিজ়োরাম-কাঁটা’ কিন্তু এখনও বিঁধে রয়েছে বিজেপির গলায়। শাসকদল এমএনএফ (মিজ়ো ন্যাশনাল ফ্রন্ট) ২০১৬ সাল থেকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ‘নর্থ ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স’ (নেডা)-র এর সদস্য। কিন্তু সম্প্রতি সেই বিজেপির বিরুদ্ধেই সুর চড়িয়েছে এমএনএফ। তার কারণ মণিপুরের সাম্প্রতিক হিংসা। গত মে মাস থেকে কুকি এবং মেইতেই জনজাতির সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। কুকি সম্প্রদায়ের প্রায় ১৩ হাজার মানুষ মণিপুর ছেড়ে এসে মিজ়োরামে আশ্রয় নিয়েছেন। মণিপুরের কুকি-জ়ো জনজাতিরা বৃহত্তর মিজ়ো সমাজের অন্তর্ভুক্ত। দুই জনগোষ্ঠীই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। সে কারণেই তাঁরা মিজ়োরামে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক দল। দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষ।
মণিপুরে সংঘর্ষের নেপথ্যে সে রাজ্যের শাসকজোট শরিক তথা কেন্দ্রীয় শাসকদল বিজেপির ‘নিষ্ক্রিয়তা’কে দায়ী করা হয়েছে। ভোটের আগে এমএনএফ-ও তাই বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছে। এমএনএফ প্রধান তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘‘আগামী লোকসভা ভোটের পর নরেন্দ্র মোদী আর দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না।’’ তাদের ভোটের প্রচারেও অস্ত্র হয়েছে মণিপুরের হিংসা। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী-প্রভাবিত মিজ়োরামের ধর্মীয় এবং সামাজিক সংগঠনও বিজেপির সমালোচনা করেছে। মিজ়ো রাজনীতিতে প্রবল প্রভাবশালী গির্জা এবং অরাজনৈতিক ছাত্র-যুব সংগঠন ‘মিজ়ো জিরালাই পাওল’ (এমজেডপি) মণিপুরের বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করেছে। তবে নেডার সদস্য এমএনএফ নিয়ে তারা কিন্তু মুখ খোলেনি। যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে। সে কারণে সমঝে চলছে এমএনএফ। তাদের মনোবল বৃদ্ধি করেছে মিজ়োরামের রাজনৈতিক ইতিহাস। যে ইতিহাস বলছে, সেখানে প্রতি এক দশকে সরকার পাল্টায়। পাঁচ বছর অন্তর নয়। সেই ধারা মেনে ২০১৮ সালে কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল এমএনএফ। ধারা মেনে এ বারও তাদেরই ক্ষমতায় থাকার কথা। তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না তারা।
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এমএনএফ মিজ়োরামের ৪০টি আসনের মধ্যে জিতেছিল ২৬টিতে। ২০০৮ থেকে সে রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও ২০১৮ সালে কংগ্রেস মাত্র পাঁচটি আসনে জেতে। তারা তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছিল। অতীতে ইন্দিরা গান্ধীর দেহরক্ষী দলের নেতা ছিলেন লালডুহোমা। সেই প্রাক্তন আইপিএস জ়েডপিএম (জ়োরাম পিপল্স মুভমেন্ট) গঠন করেন, যা প্রথম বার ভোটে লড়ে জিতেছিল আটটি আসনে। সম্প্রতি রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরসভা লুংলেইয়ের ভোটে ১১টি আসনের সব ক’টিতেই জয়ী হয়েছেন জ়েডপিএম প্রার্থীরা। চলতি বিধানসভা ভোটে এমএনএফের মতো জ়েডপিএমও রাজ্যের ৪০টি বিধানসভা আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেসও সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে বিজেপি লড়াই করছে ২৩টি আসনে। গত বার নির্বাচনে একটি আসনে জিতেছিল তারা। একমাত্র বিজেপি বিধায়ক বুদ্ধধন চাকমাও সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের কথা জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির অবস্থা ‘দুর্বল’ বলে মনে করা হচ্ছে।
মিজ়োরামে মোট বুথ সংখ্যা ১,২৭৬। ১৭৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন রাজ্যের ৮ লক্ষ ৫২ হাজার ভোটদাতা। বুথফেরত সমীক্ষা এগিয়ে রেখেছে বর্তমান শাসকদল এমএনএফকে। এবিপি, নিউজ-সি ভোটার বলছে, তারা পেতে পারে ১৫ থেকে ২১টি আসন। ইন্ডিয়া টুডে আবার এগিয়েছে রেখেছে জ়েডপিএমকে। বলছে, তারা পেতে পারে ২৮ থেকে ৩৫টি আসন। রাজনীতিকদের একাংশ বলেন, মিজ়োরামে বরাবর ভোটের ইস্যু হয়েছে স্থানীয় সমস্যা। দিল্লি বা বাকি দেশের রাজনীতি ভোটারদের উপর খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। সে কারণেই শাসক এমএনএফ বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে দুর্নীতি, মণিপুরের সংঘর্ষকেই ভোটপ্রচারের হাতিয়ার করেছে। কংগ্রেস দুর্নীতি, মাদকাসক্তির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আঙুল তুলেছে শাসকদলের দিকে। জ়েডপিএম আবার নিজেদের ‘দুর্নীতিমুক্ত’ ভাবমূর্তিকেই প্রচারের ‘অস্ত্র’ করে তুলেছে। সেই অস্ত্র নিয়েই বিধানসভা ভোট-বৈতরণী পার করতে চাইছে তিন দল। লোকসভা ভোটেও একই ভাবে স্থানীয় ইস্যুকেই হাতিয়ার করতে চাইছে তারা। তবে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি অনুদানের জন্য কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। তাই কেন্দ্রীয় শাসকদলের সঙ্গে জোট গড়ার প্রবণতা রাজনৈতিক দলগুলির থেকেই যায়। মিজ়োরামে কি এ বার সেই ধারাই থাকবে, না কি ব্যতিক্রমী কিছু ঘটবে, জানা যাবে সোমবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy