ছবি: সংগৃহীত।
রবিবার রাতে রাজধানীর রাস্তার দখল নিলাম আমরা। ২০১২ সালে ১৬ ডিসেম্বরের রাতে আমাদেরই বয়সি এক মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। নগ্ন, রক্তাক্ত দু’টো মানুষ পথচলতি গাড়িকে হাতজোড় করে থামতে বলেছিল। ভারতের রাজধানী পাশ কাটিয়ে চলে যায়। মেয়েটির মৃতদেহ হায়দরাবাদ, কামদুনি পেরিয়ে উন্নাওয়ের ঝলসে যাওয়া শরীরের পাশে নিজের নাম লিখিয়েছে। সরকারে যেই থাকুক না কেন, ‘জ্বর-সর্দির’ মতো সমাজের শরীরে ধর্ষণ বহমান! তাই তো প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর মাঝরাতে আমাদের পথে নামা। আমরা মেয়েরা যাদের অধিকার ছিল অর্ধেক আকাশে, দিল্লির রাতে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা ‘দখল’ করতে পথে নামি প্রতি বছর।
এ বার একটু ‘বেনিয়ম’ হল। কাল সন্ধেবেলা থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ভরে উঠেছিল রক্তাক্ত ছবিতে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢিল ছোড়া দূরত্বে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে থাকে আমার বন্ধুরা। কাঁদানে গ্যাসের শেলে কারও হাত থেঁতলে গিয়েছে, কারও বা পা ভেঙেছে, লাইব্রেরির ভিতরে উর্দিধারী, মেয়েদের হস্টেলে পুলিশ। দু’হাত তুলে সার বেঁধে বার করে আনছে পড়ুয়াদের, নিজেদেরই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যেন তারা অপরাধী, তারা সন্ত্রাসবাদী। ছাত্রদের কারও মাথায় ফেজ টুপি, কারও বা পরনে হিজাব। কোনও কোনও বলিউড প্রেমীর ‘কমনসেন্স’ মনে মনে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে পুরো ছবিটা— ‘মুসলমানরা একটু ও রকমই!’
কিন্তু আমরা, মেয়েরা যারা সবাই নির্ভয়া হতে চাই, ভয় পাই চারপাশের হিংস্র চোখগুলোকে। আমরা জানি, আমাদের ধর্ষণকারী শাসকদলের মন্ত্রী-নেতা হলে আমাদের বাবারা মরে যেতে পারেন থানার ভিতরে, আমরা জামিন পাব না, পরীক্ষায় বসতে পারব না, আমাদের ধর্ষকদের বাঁচাতে বরং ঝান্ডা নিয়ে মিছিল হতে পারে।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে মার্শাল আছেন, তবে ভয় কাটেনি
তাই জামিয়ার ঘটনা জানার পরে আমরা ছুটে যাই আইটিওতে দিল্লি পুলিশের সদর দফতরে। পুলিশের ব্যারিকেডে ছয়লাপ চার দিকে, একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মেট্রো স্টেশনের ঝাঁপ। তবু পিলপিল করে জড়ো হচ্ছে মানুষ— শিক্ষক, ছাত্র, রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষজন। সবাই রাগে ফুঁসছেন। ঠিক যেমন হয়েছিল নির্ভয়া কাণ্ডের পরে। কাল রাত ৩টে পর্যন্ত দিল্লির বুকে পুলিশের সদর দরজায় পাহারায় রইলাম আমরা, আমাদের বন্ধুরা যাতে সুস্থ, সুরক্ষিত থাকতে পারে। স্লোগান উঠল ‘আজাদি’ চেয়ে। মনুবাদ, ব্রাহ্মণ্যবাদ, জাতিবাদ আর পুরুষতন্ত্র থেকে আজাদির।
এ লড়াই রাস্তা, ক্যাম্পাস, লাইব্রেরি, হস্টেল ফিরে পাওয়ার লড়াই। নিজের ইচ্ছেমতো পোশাকে, ইচ্ছেমতো বন্ধুর সঙ্গে, পছন্দের গান, কবিতা অথবা স্লোগান মুখে কাকদ্বীপ থেকে কনট প্লেস হেঁটে বেড়ানোর লড়াই। হাতে থাকুক সংবিধান, প্রিয় মানুষের হাত। আর অনেকটা সাহস।
যা আমাদের, তা ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ের সাক্ষী হয়ে রইল আরও এক নির্ভয়া রাত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy