প্রথমে সাহাবুদ্দিন, তারপরে বিধায়ক রাজবল্লভ, এ বার রকি যাদব। আরজেডি-ঘনিষ্ঠদের পর পর জামিন পাওয়া নিয়ে রাজ্যের শাসক জোটের দুই শরিক, জেডিইউ ও আরজেডির দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। এক দিকে, আরজেডি গয়ায় ছাত্র-হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত রকি যাদবের জামিন পাওয়াকে আদালতের আইনি বিষয় বলে এড়িয়ে যেতে চাইছে। অন্য দিকে, জেডিইউ নেতৃত্বের দাবি এই জামিনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হবে। দুই শাসক দলের দুই শরিকের এমন বিবৃতিতে স্বাভাবিক ভাবেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সরকারি মহলেও। তবে বিরোধী বিজেপির অভিযোগ, দুই শরিকের অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়ার ফলেই একের পর এক অপরাধীরা জামিন পাচ্ছে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা খারাপ হচ্ছে।
গত ৩ মে রাতে বুদ্ধগয়ায় গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন গয়ার দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আদিত্য সচদেব। সেই সময়ে পিছনে আচমকা জেডিইউ বিধায়ক মনোরমা দেবীর ছেলে রকি যাদবের প্রায় দেড় কোটি টাকা দামের বিদেশি গাড়ি এসে পড়ে। পাশ দেওয়ার জন্য বারবার হর্ন বাজাতে থাকে রকি। এক লেনের রাস্তা হওয়ায় পাশ দিতে কিছুটা দেরি হয়।
এতেই বিগড়ে যায় বিধায়ক-পুত্রের মেজাজ। এগিয়ে গিয়ে রাস্তা আটকে দাঁড়ান তিনি। সে সময়ে গাড়ি থেকে বিধায়কের দেহরক্ষী নামেন। গাড়ি চালককে টেনে নামানোর চেষ্টা করা হয়। গাড়ি থেকে না নেমে কোনও মতে গতি বাড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আদিত্যের চালক। তখনই পিছন থেকে নিজের লাইসেন্স প্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চালায় রকি। গাড়ির পিছনের স্ক্রিন ফুঁড়ে মাথায় লাগে আদিত্যের। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এই ঘটনার পরেই রকিকে বাঁচানোর চেষ্টা শুরু হয়। রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে গোটা বিষয়টিকে রঙ দেওয়ার চেষ্টা করেন রকির বাবা, গয়ার ‘ডন’ বিন্ধেশ্বরী যাদব এবং মা মনোরমা দেবী। বিন্ধেশ্বরী যাদবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মনোরমাদেবীকেও বাড়ি থেকে মদের বোতল-সহ গ্রেফতার করা হয়। এরপরে বুদ্ধগয়ার ফার্ম হাউস থেকে ধরা হয় রকিকে। সেই মামলায় চার্জশিটও সময় মতো জমা দেয় গয়া পুলিশ। নিম্ন আদালতে খুনের মামলাটির ট্রায়ালও শুরু হয়েছে।
পটনা হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলে জানান আদিত্যর বাবা শ্যাম সচদেব। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে গুলি করে খুন করেছে রকি। কোনও অপরাধ করেনি ও। বিনা কারণে তাঁর প্রাণ নিয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে অপরাধী নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবে, এ কেমন আইন!’’ বিহার সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল ললিত কিশোর বলেন, ‘‘হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাব। রকির জামিন খারিজের আবেদন করা হবে।’’