পড়ুয়াদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান। —নিজস্ব চিত্র।
হস্টেলের ভাড়া বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে ফের পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে পড়ুয়াদের অবস্থান। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের জলকামান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনড় মনোভাব। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছুটে যাওয়া। সব মিলিয়ে সোমবার সকাল থেকেই উত্তাল দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)।
সোমবার সকাল থেকেই জেএনইউ ক্যাম্পাসের বাইরের রাস্তায় জড়ো হতে শুরু করেন পড়ুয়ারা। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও তাঁদের বিক্ষোভ চলতেই থাকে। রাস্তায় বসে অবস্থান বিক্ষোভ থেকে শুরু করে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে প্রতিবাদ দেখানো, প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার দাবি— এ সবেরই সাক্ষী থাকল জেএনইউ। পড়ুয়াদের উপর পুলিশ ও আধাসেনা দ্বারা নিগ্রহের অভিযোগ তুলে এ দিনের ঘটনার নিন্দা করেছে এসএফআই।
পড়ুয়াদের দাবি সত্ত্বেও সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দেখা করেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম জগদেশ কুমার। এ দিন সকাল থেকেই দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বিক্ষুব্ধ পড়ুয়াদের। জলকামান চালিয়েও তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরিস্থিতি সামলাতে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল। তাঁর সঙ্গে দেখা করেন পড়ুয়াদের এক প্রতিনিধিদল। তবে তা সত্ত্বেও কোনও সমাধানসূত্রে পৌঁছন যায়নি। প্রায় তিন ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার পর সেখান থেকে চলে যান তিনি।
বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের জোর করে সরিয়ে দিচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।
রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম সংগঠনগুলির জোট পরিচালিত ছাত্র সংসদের ডাকে এ দিন সকাল থেকেই পড়ুয়াদের জমায়েত শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা ক্যাম্পাসে ঢোকে। পুলিশের ব্যারিকেড উপেক্ষা করে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়েন বেশ কয়েক জন পড়ুয়া। বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের জোর করে সরিয়ে দেন পুলিশকর্মীরা। পড়ুয়াদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামানও ব্যবহার করে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছিল আধাসেনাও। তবে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও পড়ুয়াদের বিক্ষোভ থামেনি।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে সেনা-বিজেপি দ্বন্দ্বে নয়া মোড়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে শিবসেনার ইস্তফা
Delhi: Jawaharlal Nehru Students' Union organises protest over different issues including fee hike, outside university campus. pic.twitter.com/KGU8epEOwD
— ANI (@ANI) November 11, 2019
এ দিন দুপুরে সমাবর্তনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হন উপরাষ্ট্রপতি এম বেঙ্কাইয়া নায়ডু। বসন্তকুঞ্জের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে হাজির ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি। সকাল থেকেই বসন্তকুঞ্চ কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। তবে গত বছরের মতো চলতি বছরের সমাবর্তনও বয়কটের ডাক দিয়েছিল ছাত্র সংসদ। এ দিন এআইসিটিই প্রেক্ষাগৃহে সেই সমাবর্তন শুরু হওয়ামাত্র পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বসন্তকুঞ্জের দিকে এগোতে থাকেন পড়ুয়ারা। সমাবর্তন চলাকালীনই প্রেক্ষাগৃহের বাইরে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। পড়ুয়াদের সেখান থেকে সরিয়েও দেন পুলিশকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদে মুখর পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।
জেএনইউ কর্তৃপক্ষের নয়া হস্টেল নীতির বিরুদ্ধে গত ১৫ দিন ধরেই প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন পড়ুয়ারা। হস্টেলের জল ও বিদ্যুতের ভাড়া বৃদ্ধি, লাইব্রেরি ব্যবহারের সময়ে পরিবর্তন, পড়ুয়াদের পোশাক বিধিতে বদল-সহ বেশ কিছু নীতি পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেনএনইউ কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধে গত মাসের শেষের দিক থেকেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন পড়ুয়ারা। পরিস্থিতি সামলাতে ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে তাতে পড়ুয়াদের প্রতিবাদে ছেদ পড়েনি।
আরও পড়ুন: মসজিদ বেআইনি হলে আডবাণীর বিরুদ্ধে মামলা কিসের ভিত্তিতে, প্রশ্ন ওয়াইসির
নয়া হস্টেল নীতি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।
এ দিনও দেখা যায়, বিশাল সাইজের পোস্টার-ব্যানার নিয়ে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানাচ্ছেন পড়ুয়ারা। বিক্ষোভ চলাকালীন ভিড়ের মধ্যে থেকে এক পড়ুয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘‘অন্তত ৪০ শতাংশ পড়ুয়া অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল পরিবারের।’’ পড়ুয়াদের অভিযোগ, নয়া হস্টেল নীতির জেরে এক বারে প্রায় ৩০০ শতাংশ ফি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ফি বাড়ালে কী ভাবে এখানে পড়াশোনা চালাবেন তাঁরা?’’ ওই পড়ুয়ার দাবি, গত ১৫ দিন ধরে আন্দোলন চালালেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন: ধর্ষকের সাজা কমানোর বদলে বিপুল ক্ষতিপূরণ! বিচারকের প্রস্তাব ফেরালেন যুবতী
জেএনইউ কর্তৃপক্ষের নয়া হস্টেল নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর পড়ুয়ারা। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।
পড়ুয়াদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও পরিবর্তিত হস্টেল নীতিতে অনড় রয়েছেন জেএনইউ কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের কাছে অন্দোলন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। তবে তাতে কাজের কাজ হয়নি। ওই হস্টেল নীতি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন পড়ুয়ারা।
আরও পড়ুন: পাক জাদুঘরে অভিনন্দন বর্তমানের মূর্তি, ভারতীয়দের তীব্র কটাক্ষের মুখে সাংবাদিক
তবে জেএনইউ কর্তৃপক্ষের মতে, পড়ুয়াদের বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনে বিঘ্ন ঘটছে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এই ধরনের বিক্ষোভে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা একটা বড় অংশের পড়ুয়ার স্বাভাবিক পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। তাঁরা নিজেদের পড়াশোনা, পরীক্ষায় মনোনিবেশ করতে পারছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy