দিল্লির রাজনীতিকদের অনেকেরই ধারণা, সিবিআই অধিকর্তাক পদ থেকে সরে গিয়েও নরেন্দ্র মোদীর মাথাব্যথা হয়ে উঠতে চলেছেন অলোক বর্মা।
তাঁদের মতে, অলোক বর্মার অপসারণে মোদী সরকার আশু বিপদ কাটাতে পারে, কিন্তু বর্মাকে তাড়াহুড়ো করে সরানোর সিদ্ধান্তই লোকসভা নির্বাচনে মোদীর জন্য বুমেরাং হয়ে উঠতে পারে।
কী ভাবে? কংগ্রেসের অভিযোগ, বর্মা রাফাল চুক্তির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু করতে পারেন, এই আশঙ্কাতেই তাঁকে সরানো হল। যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরিদের অভিযোগের ভিত্তিতে বর্মা আদৌ রাফাল চুক্তি নিয়ে এফআইআর-এর নির্দেশ দিতেন কি না, তা তিনিই জানেন। কিন্তু সিবিআই অধিকর্তাকে এ ভাবে সরানোয় আমজনতা সন্দেহ করবেন— তদন্তের ভয়েই মোদীর এই ‘বর্মা হঠাও’ অভিযান। বিশেষত, মোদী নিজে যে ভাবে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে বর্মাকে সরালেন, তা থেকে প্রমাণ হয়— সরকার অনেক কিছু গোপন করতে চাইছে।
সেই সন্দেহ উসকে দিতেই দলের প্রচারের সুর বেঁধে দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। গত কালই তিনি বলেন, মোদীর মনে ভয় গেড়ে বসেছে। তিনি ঘুমোতে পারছেন না। তাই সিবিআই অধিকর্তার পদ থেকে পর পর দু’বার বর্মাকে হটিয়েছেন তিনি। প্রচারে এই ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়টিই সামনে আনবে কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: ‘তোতা’ আবার খাঁচাবন্দি, অলোক বর্মার অপসারণে কটাক্ষ কংগ্রেসের
দ্বিতীয় ইউপিএ-সরকারের আমলে এই সন্দেহ তৈরির কাজটাই করেছিলেন তদানীন্তন সিএজি বিনোদ রাই। প্রথমে টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির হিসেব। তার পর কয়লা খনি বণ্টন, কমনওয়েল্থ গেমস থেকে একের পর এক বিষয়ে বিরূপ রিপোর্ট দেন তিনি। মনমোহন সরকারে বিরুদ্ধে দুর্নীতির সন্দেহের চারা তিনিই পুঁতে দেন। বিরোধীদের অঙ্ক, মোদী সরকারের জন্য ঠিক এই কাজটিই করবেন অলোক বর্মা।
বর্মা নিজে কী করবেন, তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। দিল্লিতে অনেকেরই ধারণা, বর্মা কংগ্রেসে যোগ দিয়ে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হবেন। সেই জল্পনা উসকে দিয়ে আজ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি দলকে প্রস্তাব দেব, যাতে বর্মার সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে মোদীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী করা হয়।’’ এই প্রস্তাবে সহমত অনেক বিরোধী নেতাই।
শুধু বর্মা নন। বিরোধীদের অভিযোগ, রঘুরাম রাজন, উর্জিত পটেল— যখনই যিনি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁকেই সরানো হয়েছে। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির অভিযোগ, ‘‘সিবিআই অধিকর্তাকে সরাতে মোদী সরকার ভিজিল্যান্স কমিশনার কে ভি চৌধরির দফতরকে কাজে লাগিয়েছে। সিভিসি-র অভিযোগের জবাবে বর্মার বক্তব্যটুকুও শোনা হয়নি।’’ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বদলি অনৈতিক ও অসাংবিধানিক। এক জনকে পছন্দ হচ্ছে না বলে তাকে এ ভাবে সরিয়ে দেওয়া য়ায় না। সব লক্ষণরেখাকে ওরা অতিক্রম করে গিয়েছে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘রাজনীতি ও ভোটের স্বার্থে কাজে লাগাতে সিবিআইয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ করতেই বর্মাকে সরানো হল। সমালোচকদের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করতে চায় বিজেপি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy