ইম্ফলে মেইতেই মহিলাদের বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই। —নিজস্ব চিত্র।
ইরম শর্মিলা চানু থেকে মনোরমা, মণিপুরের মেইরা পাইবি বা মেইতেই মহিলাদের সংগঠনগুলি মানবাধিকারের লড়াইয়ে সর্বজনবিদিত নাম হয়ে উঠেছিল। রাজ্যে আফস্পা, ভুয়ো সংঘর্ষের বিরুদ্ধে তাঁদের যৌথ লড়াই, মনোরমার ধর্ষণ ও হত্যার পরে কাংলা দুর্গের সামনে তাঁদের নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ কার্যত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু শর্মিলা চানুর অনশন ভঙ্গের পরে এবং সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সেই মেইরা পাইবির বিরুদ্ধেই একের পর এক মানবাধিকার ভঙ্গ, নারী-নির্যাতন, সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ, জঙ্গিদের ছাড়িয়ে নেওয়া ও সেনাকে বাধা দানের অভিযোগ উঠছে। সেই তালিকাতেই জুড়ল ভাইরাল ভিডিয়ো কাণ্ডে সাসপেন্ড হওয়া ওসির পক্ষে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ।
কাংপোকপিতে ৪ মে দুই মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটানোর ঘটনা যে থানা এলাকায় ঘটেছে, সেই নোংপক সেকমাইয়ের ওসি কেইশাম প্রেমকুমারকে কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তা নিয়েই ছড়িয়েছে অশান্তি। নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানো তরুণী ও মহিলার দাবি, তাঁরা পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। পুলিশের সামনেই মেয়েটির বাবা ও ভাইকে পিটিয়ে মারে জনতা। দুই মহিলাকে পুলিশের গাড়িতে বসানোর পরেও গাড়ি না চালিয়ে তাঁদের জনতার হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই এত বড় গাফিলতির পরে সাসপেন্ড হয়েছেন ওসি।
কিন্তু মেইতেই মহিলা সংগঠনের দাবি, ওসিকে সাজা দেওয়া যাবে না। কারণ ওই দিন প্রায় সাত হাজার মানুষ হামলা চালিয়েছিল কুকি গ্রামে। খোদ ডিজিপি (ঘটনাক্রমে তিনিও কুকি ছিলেন) এলেও তা সামলাতে পারতেন না। তাই এক জন মেইতেই অফিসারকে বলির পাঁঠা করা চলবে না। থানার দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে, বালির বস্তা রেখে দেন তাঁরা। বলেন, ওসিকে সাসপেন্ড করলে রাজ্যের পরিস্থিতি সামলাতে না পারা ৬০ বিধায়ককেও পদত্যাগ করতে হবে। তাঁরা এমনও দাবি করেন, সরকার কুকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সারাক্ষণ মেইতেইদের নিশানা করছে। শুধু তাই নয়, মহিলা সংগঠনগুলি হুমকি দিয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রেমকুমারের সাসপেনশন প্রত্যাহার করতে হবে এবং আগে শান্তি ফিরিয়ে পরে মহিলাদের নগ্ন হয়ে হাঁটানোর তদন্ত চালালেই হবে।
মণিপুরে ভাইরাল ভিডিয়ো কাণ্ডে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া এক নাবালক-সহ ৭ জনের মধ্যে ধৃত হেইরাম হিরোদাস, অরুণ খুনদোংবাম, ইয়ুমলেমবাম জীবন ও নিংগোম্বাম তোম্বা সিংহকে বিশেষ আদালত পুলিশি হেফাজত শেষ হওয়ার পরে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে। ধৃতেরা অবশ্য জামিনের আবেদন জানিয়ে দাবি করেছে, তারা নির্দোষ। দুই মহিলার জবানবন্দি তুলে ধরে অভিযুক্তদের আইনজীবী বলেন, এফআইআরে গণধর্ষণের কথা বলা থাকলেও মহিলারা জানিয়েছেন তাঁদের ধর্ষণ করা হয়নি। কয়েক জন তাঁদের নগ্ন করে হাঁটালেও পরে অন্যদের হস্তক্ষেপে পোশাক ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে ঘটনার ভিডিয়ো মোবাইলবন্দি করা জীবন। সে পরে সেটি এক ভাইকে পাঠিয়েছিল। তাকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এখন মেইরা পাইবি বলছে, সিবিআই যদি কুকিদের সঙ্গে হওয়া হিংসার তদন্ত করে, তবে মেইতেইদের বিরুদ্ধে হওয়া সব অপরাধের তদন্তের ভারও তাদের নিতে হবে।
সিবিআই আগেও অস্ত্র লুটের তদন্তে গিয়ে মেইরা পাইবির বাধার মুখে পড়েছে। চান্ডেলে সেনা কনভয়ে হামলা চালিয়ে ১৮ জন জওয়ানকে হত্যার ঘটনায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত কেওয়াইকেএলের জঙ্গি নেতা ও তার ১১ জন সঙ্গীকে পাকড়াও করেও মহিলাবাহিনীর চাপে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে সেনা। কুকি এলাকায় হামলা হলেই মেইতেই মহিলার দল রাস্তা অবরোধ করে সেনাকে বাধা দিয়েছেন, এমনকি পোশাক খুলে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে সেনা বেশি করে মহিলা ব্যাটেলিয়ন পাঠাতে বলেছে মণিপুরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy