Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Manipur Violence

‘ওই কুকি আসছে’, দুরন্ত বাচ্চাকে ভয় দেখাচ্ছেন মা, কুকি শিশু বলছে, ‘বড় হয়ে আমি মেইতেই মারব’

নিজের নিজের এলাকায় পাহারা দিচ্ছে কুকি, মেইতেই দুই জনগোষ্ঠীই। রাস্তায় রাস্তায় নজরদারি। গাড়ি থামিয়ে, কাচ নামিয়ে ভিতরে উঁকিঝুঁকি চলছে। মণিপুরে গিয়ে যা দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।

Agitation

ইম্ফলের এক ত্রাণশিবিরে খেলায় ব্যস্ত মেইতেই শিশুরা। —নিজস্ব চিত্র।

প্রিয়ঙ্কর দে ও সুব্রত গোস্বামী
ইম্ফল শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ ১৬:০৯
Share: Save:

আমাদের কয়েকটা প্রশ্ন করেই ছেড়ে দিলেন ওঁরা। কিন্তু আমাদের গাড়ির চালককে নয়। চালক মণিপুরি যুবক। ভাষা বুঝতে পারছি না। কী প্রশ্নোত্তর পর্ব চলছে এক বর্ণও উদ্ধার করতে পারছি না। শুধু বুকটা ঢিপঢিপ করছে। ফিরে যেতে হবে না তো? সমস্যায় পড়তে হবে না তো? শেষ পর্যন্ত কোনওটাই হয়নি। এবং আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে কুকি যুবক (নাম জেনে নিয়েছিলাম, চোই) চালকের হাতের দিকে আঙুল দেখিয়ে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বললেন, “আসলে মুসলমানেরা তো হাতে এ রকম তাগা পরে না, মেইতেই হিন্দুরাই পরে, তাই…”।

গত বুধবার। ঘটনাস্থল মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর। ন্যাশনাল হাইওয়ে-২। রাস্তার দু’পাশে বেঞ্চ পেতে লাঠি হাতে বসে কুকি মহিলারা। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘুরছেন কয়েক জন যুবক। গাড়ি দেখলেই থামিয়ে জেরা চলছে। কে, কারা, কোথা থেকে, কেন... ‘সদুত্তর’ পেলে ছাড়ছেন। কলকাতা থেকে খবর করতে এসেছি বলাতে আর খুব বেশি প্রশ্ন ধেয়ে এল না বটে, কিন্তু চালকের অত সহজে নিষ্কৃতি মিলল না। তিন দিন মণিপুরে থেকে বুঝতে অসুবিধে হয়নি, এই পারস্পরিক সন্দেহ আর প্রবল অবিশ্বাসই এখন মণিপুরের হাওয়া। যেখানে মেইতেইদের দাপট, অর্থাৎ উপত্যকা অঞ্চলে, সেখানে একই রকম ভাবে গাড়ি থামিয়ে জেরা চালাল তাদের নারী সংগঠন ‘মিরা পাইবি’। কুকি মহিলাদের মতো তাঁদেরও একই বয়ান— নিজেদের এলাকাকে ‘বহিঃশত্রু’-র আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পাহারা দিচ্ছেন তাঁরা। উপত্যকায় এই ‘বহিঃশত্রু’ যদি কুকিরা হয়, তা হলে পাহাড়ে অবশ্যই মেইতেইরা।

Kuki checkpost

চূড়াচাঁদপুরে হাইওয়ের ধারে কুকি ‘চেকপোস্ট’। —নিজস্ব চিত্র।

এক অলিখিত ‘পার্টিশন’ দেখে এলাম। চূড়াচাঁদপুর বা মোরে-র মতো পাহাড়ি, কুকি অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে পালিয়ে এসেছেন মেইতেইরা। আশ্রয় নিয়েছেন ইম্ফল উপত্যকার ত্রাণশিবিরে। অন্য দিকে, ইম্ফলে থাকতেন যে সব কুকি, তাঁদের ঠাঁই হয়েছে উত্তর-দক্ষিণের পাহাড়ি এলাকার ত্রাণশিবিরে। রাজ্য জুড়ে প্রায় সাড়ে তিনশো ‘রিলিফ ক্যাম্প’। প্রতিটি ক্যাম্পেই স্বেচ্ছাসেবকদের তত্ত্বাবধানে রান্নার ব্যবস্থা। কিছু কিছু ক্যাম্পে চলছে স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণও। দেখে প্রশ্ন জাগে, তা হলে কি এগুলোই ওঁদের স্থায়ী আস্তানা হতে বসেছে? নিজের নিজের এলাকায় পাহারা দিচ্ছে দুই জনগোষ্ঠীই। রাস্তায় রাস্তায় নজরদারি। গাড়ি থামিয়ে, কাচ নামিয়ে ভিতরে উঁকিঝুঁকি চলছে।

ময়রাং ঢোকার মুখে থানার পাশেই আলাদা ‘চেকপোস্ট’ বসিয়েছেন মেইতেই মহিলারা। পুলিশ নির্লিপ্ত থাকলেও তাঁরা ভুল করছেন না সাংবাদিকের পরিচয়পত্রটি খুঁটিয়ে দেখে নিতে। দু’পক্ষেরই অনুযোগ, মিডিয়া শুধু অন্য পক্ষের কথাই বলছে। থমথমে পরিবেশে সকলেই সকলকে আড়চোখে মেপে নিচ্ছেন, এ আমাদের লোক তো! আসার সময় হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম। ঘন, কালচে সবুজ মখমলে ঢাকা পাহাড়ের নীচে এ মাথা থেকে ও মাথা ধানক্ষেত। গোটা কুড়ি পুরুষ ও মহিলা মাথায় টোকা পরে চাষের কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ ছুটে এলেন এক মহিলা। উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে লাগলেন। ভাষা না-বুঝলেও এটা বেশ বোঝা যাচ্ছিল যে, এখানে ছবি তোলা তাঁর না-পসন্দ। গাড়ির চালকের থেকে ব্যাপারটা জানা গেল। একটু আগেই পাহাড়ের উপর থেকে গুলি চলেছে, তাই বাইরের লোককে ছবি তুলতে দেখে এঁরা ভয় পাচ্ছেন। খানিক ক্ষণ বাদে এক জন স্কুটারে চেপে এসে দেখেও গেলেন আমরা কী করছি।

relief camp for Meitei

ইম্ফলে আইডিয়াল গার্লস কলেজে মেইতেইদের ত্রাণশিবির। —নিজস্ব চিত্র।

এই ‘আমরা-ওরা’-র সঙ্গে বার বার মোলাকাত হল মণিপুরে। বলা ভাল পদে পদে। ইম্ফলের নি‌উ চেকন এলাকার কুকি বসতি যে রকম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তেমনই বাদ যায়নি মোরে বাজারে মেইতেইদের বাড়ি-দোকানপাট। কুকি স্টুডেন্টস অরগানাইজ়েশনের এক নেতা বলছিলেন, “আমরা কিন্তু ওদের মতো নই, আমরা এখানকার মেইতেইদের তাদের সব সম্পত্তি, গাড়ি ইত্যাদি নিয়ে পালিয়ে যেতে দিয়েছি। ইম্ফলে মেইতেইদের হামলার সময় তো আমাদের লোকেরা শুধু প্রাণটুকু হাতে করে পালাতে পেরেছিল!” চূড়াচাঁদপুরের লম্কা বাজারে একের পর এক দোকানের গায়ে গ্রাফিতি— ‘ট্রাইবাল’ অথবা ‘এইমি দ্বর’। কুকি ছাত্রনেতা জানালেন, ‘এইমি দ্বর’-এর অর্থ ‘আমাদের দোকান’। এই দোকানগুলোয় যাতে ভাঙচুর না হয়, তাই এ ভাবে চিহ্নিত করে রাখা। মে মাসে অশান্তি শুরুর আগে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বছর বাইশের ওই তরুণ। বললেন, “নিজের লোকজন যখন আক্রান্ত, তখন আর কেরিয়ারের কথা মাথায় থাকে!” এখানেই মিলে যাচ্ছে কুকি যুবক জেরি আর ব্যাঙ্গালোরে বহুজাতিক সংস্থার কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরা মেইতেই যুবক রবি সিংহের কথা। মিল থাকলেও, দু’জনে লড়ছেন দুই যুযুধান পক্ষের হয়ে।

এই ‘আমরা-ওরা’র মধ্যে পড়ে গিয়েছেন মণিপুরি মুসলমানেরা। চূড়াচাঁদপুর ঢোকার আগে, বিষ্ণুপুর সীমানায় একটি ছোট্ট মুসলমান গ্রাম কোয়াকতা। সেখানকার বাসিন্দারা অনেকেই বলছিলেন যে, তাঁদের নিজেদের নিজেদের শিবিরে নেওয়ার জন্য চাপ আসে দু’তরফ থেকেই। দু’দিক থেকেই বারণ আছে অন্যের সঙ্গে ব্যবসা করায়। তবে মণিপুরের মুসলমানেরা যে শুধু যুযুধান দু’পক্ষের মাঝে পড়ে ‘স্যান্ডউইচ’ হচ্ছেন তা বলা যাবে না। এই মুহূর্তে মণিপুর যখন আড়াআড়ি দুই শিবিরে বিভক্ত, ‘নিরপেক্ষ’ কোনও অবস্থান খুঁজে পাওয়া যখন দুস্কর, তখন যুদ্ধরত দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংযোগ রক্ষার সুতোটাও এই মুসলমানেরাই। ইম্ফল শহরের কোনও মেইতেই গাড়িচালক কুকি এলাকায় ঢুকতে পারেন না। অগত্যা ভরসা মুসলমান চালকেরাই। তাঁরাই দলে দলে আসা সাংবাদিকদের ইম্ফল থেকে চূড়াচাঁদপুর, মোরে বা কাংপোকি নিয়ে যাচ্ছেন। ঝুঁকি আছে, তবে উপার্জনের সুযোগও আছে। ‘যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে’ চড়া দরও হাঁকাচ্ছেন কেউ কেউ। মণিপুরের এই মুসলমানেরা জাতিগত ভাবেও মেইতেই বা কুকিদের থেকে আলাদা। এঁদের পূর্বপুরুষেরা কয়েক শতাব্দী আগে মূলত সেনা হয়ে ঢুকেছিলেন বা বন্দি হয়ে থেকে গিয়েছিলেন মণিপুরে। তার পর অবশ্য স্থানীয় জনজাতির মানুষের সঙ্গে মিশেও গিয়েছেন অনেকটা।

Bishnupur-Churachandpur

বিষ্ণুপুর-চূড়াচাঁদপুর সীমান্তে মুসলমান মহল্লা। —নিজস্ব চিত্র।

বার বার মালুম হচ্ছিল ইন্টারনেট না থাকার জ্বালা। মে মাসের গোড়া থেকেই ইন্টারনেট বন্ধ মণিপুরে। এক ধাক্কায় ডিজিটাল ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। দোকানে দোকানে কিউ-আর কোডের উপরে ধুলো জমছে। চণ্ডীগড়ে পড়াশোনা করেন কোয়াকতার আরিফ। সেমেস্টার শেষে ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। তার পরে আটকে পড়েছেন। কলেজে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। আরিফের ভয় তিনি পিছিয়ে পড়ছেন। গত তিন মাসের হিংসায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ক্লান্তির ছাপ নিরাপত্তা বাহিনীর চোখেমুখেও। মণিপুর পুলিশের এক কর্মী বলেই ফেললেন, রোজ রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিউটি দিতে দিতে তিনি ক্লান্ত।

একটা গোটা রাজ্য যে ক্লান্ত, বিরক্ত, একটা দমবন্ধ করা জীবন কাটাচ্ছে সেটা চোখে না পড়ে উপায় নেই। ক্যাম্পে-ক্যাম্পে ক্ষয়ে যাচ্ছে শৈশব। পাহাড়-উপত্যকা বা মেইতেই-কুকি ‘সীমানা’ এলাকায় গুলির আওয়াজে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। কী ভাবে ছন্দে ফিরবে এই মণিপুর? দু’তরফের সাধারণ মানুষের কারওরই বীরেন সিংহের সরকারের উপর আর আস্থা নেই। চাইছেন কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করুক। মেইতেই তো বটেই, কুকিদেরও ঢালাও সমর্থন পেয়ে রাজ্যে সরকার গড়েছিল বিজেপি। আমরা যাঁদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশেরই দাবি পরের বার নির্বাচনে কংগ্রেস জিতবে। তবে ভোটের এখনও চার বছর দেরি। আর সংসদীয় রাজনীতির হাওয়া ঘুরতেও বেশি দিন সময় লাগে না। রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও আফস্পার অধীন। তবে বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল তার বিরুদ্ধে সে রকম বড় কোনও বিক্ষোভের কথা শোনা যায়নি।

army barricade

মোরের কুকি অধ্যুষিত পাহাড়ি এলাকায় সেনার ব্যারিকেড। —নিজস্ব চিত্র।

জাতিতে জাতিতে, ধর্মে-ধর্মে দ্বন্দ্ব মণিপুরে নতুন নয়। এ আগে মেইতেই-মুসলমান, মেইতেই-নাগা, নাগা-কুকি, অথবা মেইতেই-কুকি সংঘর্ষের নজির রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়নি। এ বারে তিন মাস কেটে গেলেও অশান্তি প্রশমনের লক্ষণ নেই। এই এত রকম জাতিসত্তার দাবি ও আন্দোলনের গোলকধাঁধায় কী ভাবে সমাধানসূত্র মিলবে? শিবিরে শিবিরে সকলের মোবাইল ফোনে জাতিহিংসার অগুনতি ভিডিয়ো। এখনও পর্যন্ত সেগুলো ছোট ছোট এলাকায় ব্লু-টুথের মাধ্যমে এর ফোন থেকে তার ফোনে পাড়ি দিচ্ছে। এক সঙ্গে সে সব ভিডিয়ো দেখে ঘৃণার আগুনে ঘি পড়ছে, কিন্তু সেটা স্থানীয় স্তরেই সীমাবদ্ধ। ইন্টারনেট চালু হলে? ২০০৯ সালে জঙ্গি আন্দোলনের সময়েও মণিপুরে কর্মরত ছিলেন, এমন এক সিআরপিএফ জওয়ান বলছিলেন, ‘‘সেই সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা অনেক সহজ ছিল। ওটা ছিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, আর এ বারে জাতিতে জাতিতে লড়াই। নিজেদের মধ্যেই লড়াই। তাই নিরাপত্তা বাহিনী এ বার অনেক বেশি অসহায়।’’

আরও অসহায় সব মুখ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই শিবির থেকে ওই শিবিরে। অনেকে দল বেঁধে পালিয়ে এসেছেন। অনেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। মাইলের পর মাইল হেঁটে, ঝোপের আড়াল খুঁজে খুঁজে কখনও বা কোনও মুসলমান পরিবারের আশ্রয়ে লুকিয়ে থেকে ক্যাম্পে এসে পৌঁছেছেন প্রাণ হাতে করে। সেই গল্প বলতে বলতে খানিকটা ভাবলেশহীনই হয়ে পড়ছিলেন অনেকে। সকলেই বাড়ি ফিরতে চান। কিন্তু ফিরতে পারলেও তো আবার সেই সব প্রতিবেশীদের সঙ্গেই থাকতে হবে, যাঁরা তাঁদের ঘরছাড়া করেছিলেন! দু’পক্ষের ক্যাম্পের বাসিন্দাদেরই দাবি, সরকারকে নিরাপত্তা দিতে হবে। কিন্তু ভাঙা বিশ্বাস কি আর জোড়া লাগবে? পারস্পরিক অবিশ্বাস এতটাই গভীরে যে তাকে উৎখাত করা সম্ভব কি না জানা নেই। ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরতে ঘুরতে, দুই শিবিরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বোঝা যায় যে স্থিতাবস্থা ঘেঁটে গিয়েছে। স্থিতাবস্থা বলার কারণ আছে। মণিপুরে বহু জাতির বাস। মেইতেইদের মধ্যে যে রকম হিন্দু ও খ্রিস্টান দুই-ই আছেন, তেমনই কুকি-জো জনজাতি পরিবারেরও অসংখ্য উপজাতি। আর আছেন পাহাড়ের তাংকুল নাগারা, যাঁরা সংখ্যায় কুকিদের থেকে বেশি। এই নানা গোষ্ঠীর পাশাপাশি-বসবাস কি আর ঠিক আগের মতো হবে?

relief camp

ইম্ফলের আইডিয়াল গার্লস কলেজের ত্রাণশিবিরে। —নিজস্ব চিত্র।

ইম্ফলের আইডিয়াল গার্লস কলেজের ত্রাণশিবিরে মোরে থেকে পালিয়ে আসা এক মেইতেই মহিলা তাঁর সন্তানদের গল্প শোনাচ্ছিলেন। তাঁর বাচ্চাদের যখন সন্ধ্যার সময় কিছুতেই খেলা থেকে উঠিয়ে আনা যায় না, তখন তিনি ‘ওই কুকিরা আসছে’ বলে ভয় দেখান। বাচ্চারাও সুড়সুড় করে চলে আসে। বলছিলেন মহিলা। আজ না হোক কাল, এক দিন এই অশান্তি থামবে। কিন্তু শান্তি স্থায়ী হবে তো? ক্যাম্পের এই শিশুরা বড় হবে। বুকের মধ্যে এই আতঙ্ক আর বিদ্বেষ নিয়েই। মেইতেই কিশোরের কি আর কোনও দিন কুকি বন্ধু হবে? অন্য রাজ্যে পড়তে আসা কুকি ছেলের সঙ্গে মেইতেই মেয়ের প্রেম হবে? ফাটল জুড়লেও যে দাগটা থেকে যাবে, তার কী হবে?

কুকি শিবিরে আর এক শিশুর কথা শুনে সন্দেহটাই দৃঢ় হল। চূড়াচাঁদপুরে এই মুহূর্তে অনেকগুলো কুকি ত্রাণশিবির। চার্চের মাঠে খেলে বেড়াচ্ছে এক দল শিশু। তিন থেকে তেরো নানা বয়সের। পরনে ইজের বা বারমুডা। প্রায় সবারই খালি গা। দাঙ্গা-দাঙ্গা খেলা চলছে। দেখে শিউরে উঠল বুকটা। এক বালক বার বার যেন একই কথা বলে চলেছে। বেশ জোরের সঙ্গে। চোখে-মুখে উত্তেজনার ছায়া। কী বলছে? প্রশ্ন শুনে ওর বাবা খানিক প্রশ্রয়ের হাসিতেই জবাব দিলেন ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে, ‘‘মারব, মারব, বড় হয়ে আমি মেইতেই মারব!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Manipur Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy