চোখের জলে। জঙ্গি হানায় নিহত সেনার পরিবার। মান্ডিতে। ছবি: পিটিআই।
মণিপুরে সেনা হামলার ঘটনাকে পুরোপুরি সেনা ও গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা বলেই মনে করছে সেনাবাহিনী।
সরকারি ভাবে মুখ না খুললেও সেনা সূত্রে মেনে নেওয়া হয়েছে, কুকি অধ্যুষিত চান্ডেলের সোমতাল-তেংনৌপাল এলাকায় অন্তত ৫০ জন সশস্ত্র জঙ্গি ঘোরাফেরা করার খবর গ্রামবাসীরা জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু গোয়েন্দারা তার আভাস পাননি, বা পেলেও গুরুত্ব দেননি। পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়নি চিনের মদতপুষ্ট নবগঠিত জঙ্গি সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চকেও।
মণিপুরের হামলার পরে রাজ্য থেকে আফস্পা প্রত্যাহার সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গাইখংবাম। সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ এ দিন মণিপুরে এসে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। জঙ্গি দমনে সেনাবাহিনীকে আরও জোরদার অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন তিনি। আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে ১৫ বছর ধরে অনশন চালানো ইরম শর্মিলা চানু অবশ্য আজ দিল্লিতে প্রশ্ন তুলেছেন, আফস্পা থাকার পরেও যখন জঙ্গি হামলা থামছে না, তখন এই আইনের যৌক্তিকতা কী?
সেনা সূত্রে খবর, প্রায় তিন দশকে উত্তর-পূর্বে সেনাবাহিনীর উপর এত বড় হামলা হয়নি। জঙ্গিরা আরপিজি (রকেট চালিত গ্রেনেড) হাতে ছবি প্রকাশ করলেও, কখনও হামলায় আরপিজি ব্যবহারও করা হয়নি। কিন্তু জখম জওয়ানদের থেকে জানা গিয়েছে, কাল কনভয়ের প্রথম গাড়ি লক্ষ করে প্রথমে ক্রুড মাইন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তাতে রাস্তা থেকে ছিটকে যায় গাড়িটি। পরে পিছনের গাড়ি লক্ষ করে ছোড়া হয় রকেট চালিত গ্রেনেড। তাতে ওই ট্রাকের জ্বালানিতে আগুন ধরে যায়। উদ্ধার হওয়া দেহগুলির মধ্যে ১০টি দেহ পুরোপুরি দগ্ধ ছিল। ঘটনাস্থলে জঙ্গি-বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া মেজর রাজার দেহও মেলে। সেনাবাহিনীর দাবি, জঙ্গিরা সীমান্তবর্তী থান্তাপিন গ্রাম হয়ে মায়ানমার পালিয়ে যায়।
সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গ করার পর থেকে অরুণাচল ও মণিপুরের পার্বত্য জেলাগুলিতে খাপলাং বাহিনীর প্রভাব যে বাড়ছিল, তা স্থানীয় মানুষ টের পাচ্ছিলেন। কিন্তু সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় এত বড় জঙ্গি গতিবিধির খবর কী ভাবে গোয়েন্দাদের চোখ এড়াল, এখন সেই প্রশ্নই উঠছে।
সংঘর্ষবিরতিতে থাকা কুকি জঙ্গিদের দিকেও আঙুল তুলছে সেনাবাহিনী। মণিপুরে প্রায় ২০টি কুকি জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। তারা কুকি রাজ্যের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছে। মণিপুরের যে এলাকায় কালকের হামলাটি হয়েছে, সেখানে কুকিদের অজ্ঞাতসারে কিছু হওয়া অসম্ভব। এবং সংঘর্ষবিরতিতে থাকা কুকি জঙ্গিরাই অলিখিত নিয়মানুযায়ী কুকি জমিতে হওয়া যে কোনও গতিবিধির খবর সেনা-গোয়েন্দাদের দেয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে, সম্ভবত কেন্দ্র আলাদা রাজ্যের দাবি মানছে না বলেই বিরক্ত কুকিরা জঙ্গি গতিবিধির খবর চেপে গিয়েছিল।
সেনাবাহিনীর মতে, আগেও ইন্দো-বর্মা রেভোলিউশনারি ফ্রন্ট গড়ে উত্তর-পূর্বের সব জঙ্গিকে একজোট করার চেষ্টা হয়েছিল। সেই চেষ্টা তখন ব্যর্থ হয়। এ বার চিন ও পরেশ বরুয়ার পরিকল্পনায় গঠিত ‘ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ওয়েস্টার্ন সাউথ ইস্ট এশিয়া’ সেই ক্ষেত্রে অনেকটা সফল।
চিনের মদতপুষ্ট পরেশই খাপলাংকে চালাচ্ছেন, সে খবরও গোয়েন্দাদের কাছে এসেছে। সেই সঙ্গে মিলছে চিন হয়ে নাগা জঙ্গিদের মাধ্যমে আসা অস্ত্র ও অর্থের আনুকূল্য। অসমের ডিজিপি খগেন শর্মা জানান, কিছু দিন আগেই পরেশ চিনে গিয়েছিলেন। মায়ানমারে খাপলাং ঘাঁটিতে জঙ্গি বৈঠকেও হাজির ছিলেন তিনি। মায়ানমারের জমি ও চিনের মদতে শক্তিশালী যৌথ মঞ্চকে বাহুবলে কাবু করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চিন্তিত।
সেনাবাহিনী ও পুলিশের আশঙ্কা, এ বার মিলিত মঞ্চের নিশানা হতে পারে অসম। তাই সব নিরাপত্তাবাহিনী ও পুলিশকে নিয়ে গড়া ইউনিফায়েড কম্যান্ডকে সতর্ক করা হয়েছে। সেনাকর্তারা জানান, যে হেতু জঙ্গিরা নাশকতার পরেই সীমান্ত পার হয়ে মায়ানমারে চলে যায়, তাই সেনা অভিযান নিয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনার পরেই পরিকল্পনামাফিক এগোতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, মণিপুর হামলার তদন্তভার এনআইএকে দেওয়া হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy