Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

কাল ধর্না সংসদে, আজ ফের দিল্লি যাচ্ছেন মমতা

নোট-বিতর্কে বিরোধী রাজনীতির নেতৃত্বে উঠে আসার জন্য তাঁর প্রাথমিক চেষ্টায় সকলকে পাশে পাননি। পরিস্থিতি বুঝে এ বার যৌথ অভিযানে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে এক ছাতার তলায় থাকার ইঙ্গিত দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৬
Share: Save:

নোট-বিতর্কে বিরোধী রাজনীতির নেতৃত্বে উঠে আসার জন্য তাঁর প্রাথমিক চেষ্টায় সকলকে পাশে পাননি। পরিস্থিতি বুঝে এ বার যৌথ অভিযানে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে এক ছাতার তলায় থাকার ইঙ্গিত দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত সপ্তাহে দিল্লি ছাড়ার আগেই মমতা ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ফের রাজধানীমুখী হবেন। পাশাপাশি নোট সঙ্কট নিয়ে কেন্দ্র বিরোধিতায় কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য দলের নেতাদের নির্দেশও দিয়েছিলেন। এর পর আজ সকালে রাহুলের উপস্থিতিতে বিরোধী দলগুলি বৈঠকে বসে। তাতে সামিল হন লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থির হয়, নোট বাতিলের ঘটনায় মানুষের চরম ভোগান্তি নিয়ে সরব হয়ে প্রায় দু’শো জন বিরোধী সাংসদ বুধবার সংসদে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ধর্না দেবেন। সংসদ ভবনে বিরোধী দলের নেতারা ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পরই কলকাতায় মমতাও জানিয়ে দেন, মানুষের সঙ্কটের মুহূর্তে তিনি কোনও ‘ইগো’ রাখছেন না। প্রয়োজনে অন্য দলের ডাকা প্রতিবাদ কর্মসূচিতেও সামিল হতে তিনি প্রস্তুত। সে জন্য আগামিকালই দিল্লি যাবেন তৃণমূল নেত্রী।

শুধু ধর্না দেওয়া নয়, বিরোধী নেতারা মিলে এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। তার দিনক্ষণ যদিও চূড়ান্ত হয়নি। এমনকী যৌথ ভাবে বিরোধী দলগুলি মিলে একটি ধর্মঘট ডাকার পরিকল্পনাও করছে। সেটা অবশ্য ভাবনার স্তরে রয়েছে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, সনিয়া-রাহুলের সঙ্গে এখন নিরন্তর যোগাযোগ রাখছেন মমতা। গত সপ্তাহে তৃণমূল নেত্রী যখন দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন, তার আগেও রাহুলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। কিন্তু গত বারের সঙ্গে এ বারের ফারাক হল, তখন একতরফা কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মমতা। তাতে কংগ্রেস ও অন্য দলকে সামিল হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ বার আলোচনার মাধ্যমে যৌথ কর্মসূচি গ্রহণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। রাহুলের উপস্থিতিতে বিরোধী দলগুলির কৌশল নির্ধারণ বৈঠকে সুদীপের থাকাটা সে কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকে সুদীপ রাহুলকে বলেন, রাস্তায় নেমে কংগ্রেসকে এখনও আন্দোলন করতে দেখা যাচ্ছে না। তা ছাড়া যৌথ আন্দোলনের দিনক্ষণও দ্রুত চূড়ান্ত করতে হবে। জবাবে রাহুল জানান, আপাতত সব বিরোধী দল মিলে সংসদ চত্বরে ধর্নায় বসা যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি ভবনেও যাওয়া যেতে পারে এক সঙ্গে।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রস্তাবিত এই যৌথ আন্দোলনের নেতৃত্ব কে দেবেন, তা নিয়ে আজ কোনও আলোচনা হয়নি। কংগ্রেসও দাবি করেনি যে নেতৃত্বে রাহুলই থাকবেন। বরং বৃহত্তর বিরোধী ঐক্য ধরে রাখার স্বার্থে সেই বিষয়টিকে খোলা রাখা হয়েছে। কারণ, কংগ্রেস বা বামেরা যেমন মমতার নেতৃত্ব মেনে নিতে প্রস্তুত নন, তেমনই রাহুলের নেতৃত্ব মেনে নিতে নিমরাজি সপা-বিএসপি-র মতো দলগুলি। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এতে তাঁদেরও কিছুটা সুবিধা হয়েছে। কেন না, যৌথ আন্দোলনে সামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও এর ফলে রাহুলের সঙ্গে সমানে সমানে রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছেন মমতা। তা ছাড়া তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেস ও সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে এই বার্তাও দিয়েছেন, নোট বিরোধিতায় তাঁর দলের সাংসদরা যেমন তাঁদের সঙ্গে ধর্নায় বসবেন, তেমনই এ ব্যাপারে তৃণমূলের কর্মসূচিতেও যেন সামিল হন তাঁরা। বস্তুত সে জন্য জাতীয় স্তরে তাঁর পৃথক কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন তৃণমূল নেত্রী।

নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা আজ জানান, নোট বাতিলের বিরোধিতায় আগামী ২৩ বা ২৪ তারিখ দিল্লির যন্তরমন্তরে সভা করবেন তিনি। তার পর ২৯ তারিখ লখনউয়ে সভা করবে তৃণমূল। আগামী মাসের ১ বা ২ তারিখ বিহারে সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। সেই সঙ্গে পঞ্জাবেও সভা করবেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যেমন অন্য দলের কর্মসূচিতে যোগ দিতে প্রস্তুত। কোনও ইগো রাখছি না। তেমনই অন্যদেরও আমাদের কর্মসূচিতে স্বাগত জানাচ্ছি।’’

এখন প্রশ্ন, তৃণমূলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবন অভিযানে এ বার কি সামিল হবেন বামেরা? সূত্রের খবর, আজ বিরোধী দলগুলির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার সময় কোনও স্পষ্ট জবাব দেননি সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি জানান, দলের পলিটব্যুরোতে আলোচনা করে তার পর জানাবেন। তাঁর আরও বক্তব্য, যৌথ স্মারকলিপির খসড়া কী হবে, সেটিও দলে আলোচনাসাপেক্ষ বিষয়।

বস্তুত শুধু তৃণমূল-সিপিএম নয়, নোট বাতিল নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় বিরোধী দলগুলির মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে মতান্তর রয়েছে। যেমন কংগ্রেস, বামেরা যৌথ সংসদীয় কমিটি চাইলেও তৃণমূল তার পক্ষে নয়। আবার তৃণমূল যে ভাবে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে, তার সঙ্গে এক মত নয় কংগ্রেস বা সপা। এমনকী বামেরাও সেই দাবি তোলেনি। ফলে বুধবারের ধর্নায় একযোগে ঠিক কী দাবি তোলা হবে, তা-ও স্থির হয়নি। মোটামুটি ভাবে শুধু এটুকু ঠিক হয়েছে, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে ভোগান্তি হচ্ছে আমজনতার। এবং এই মোদ্দা বিষয়কে সামনে রেখেই এক ছাতার তলায় আসছেন রাহুল-মমতাও।

সে দিক থেকে উভয়ের মধ্যে মিলটাও চোখে পড়ার মতো। আজ সকালে দিল্লির কিছু এটিএম ঘুরে দেখেন রাহুল। তার পর বলেন, ‘‘এর ফলে শুধু পনেরো-বিশ জনের কোষাগার ভরবে! তাঁদের ঋণ মাফ হবে! যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তাঁদের দুর্দশা কাটবে না।’’ একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘এত বড় একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত মাত্র ৩-৪ জনকে জিজ্ঞাসা করে করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর কাছে এর হদিশ ছিল না।’’ নবান্নে বসে একই অভিযোগ করেন মমতাও। বলেন, ‘‘কিছু কালো কারবারিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ তিনিও বলেন, ‘‘এর নেপথ্যে মোদীর লুকনো উদ্দেশ্য রয়েছে। তাই অর্থমন্ত্রীও বিষয়টি জানতেন কিনা সন্দেহ!’’ আজ সংসদের উভয় কক্ষে কংগ্রেস-তৃণমূল সাংসদদের কার্যত এক যোগে সরকার বিরোধী স্লোগান তুলতেও দেখা যায়।

স্বাভাবিক ভাবেই মমতা-রাহুল জোট মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে বিজেপি-র। যে কারণে গত কালই খোদ প্রধানমন্ত্রী চিটফান্ডের প্রসঙ্গ তুলে পরোক্ষে তৃণমূল নেত্রীকে খোঁচা দিয়েছেন। তাতে যে খুব কাজ হয়েছে, তা নয়। ফলে নতুন কৌশল নির্ধারণে এখন দফায় দফায় বৈঠক করছেন জেটলি-অমিত শাহরা। তাঁদের মূল লক্ষ্য, বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানো। না হলে দেওয়াল লিখন পরিষ্কার। নোট বিতর্কে জলে যেতে চলেছে সংসদের শীত-অধিবেশন।

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi demonetization
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy