Advertisement
০৪ জুলাই ২০২৪
Mahua Moitra

‘ভয় পাবেন না’, মহুয়া-খোঁচা মোদীকে

গত ৮ ডিসেম্বর সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল মহুয়াকে। সে দিন তিনি বেরিয়ে বলেছিলেন, ‘শেষ’ দেখে ছাড়বেন। সেই শীতে যেখানে শেষ করেছিলেন, এই গ্রীষ্মে সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন।

(বাঁ দিকে) কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

(বাঁ দিকে) কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪ ০৬:৪৯
Share: Save:

এ ভাবেও ফিরে আসা যায়!

সোমবার অষ্টাদশ লোকসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনায় কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র প্রথম মুখ খোলার পরে এমনটাই বলছেন অনেক নেতা-নেত্রী।

গত ৮ ডিসেম্বর সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল মহুয়াকে। সে দিন তিনি বেরিয়ে বলেছিলেন, ‘শেষ’ দেখে ছাড়বেন। সেই শীতে যেখানে শেষ করেছিলেন, এই গ্রীষ্মে সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন। রাজনৈতিক শিবির বলছে, ঝাঁঝ স্বাভাবিক ভাবেই এ বার আরও বেশি। ট্রেজ়ারি বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে মহুয়ার বক্তব্য, ‘‘আমি আমার সাংসদ পদ হারিয়েছি। বাড়ি হারিয়েছি। অস্ত্রোপচার করে ইউটেরাসও বাদ দিতে হয়েছে। কিন্তু জানেন, আমি কী পেয়েছি? আমি পেয়েছি ভয় থেকে মুক্তি। আমি আর আপনাদের ভয় করি না। আমি আপনাদের শেষ দেখব।’’

রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার আবার তাঁর বক্তৃতায় বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার উপরে জোর দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের উপরে আর্থিক অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। একশো দিনের কাজ, আবাস-সড়ক-স্বাস্থ্যকেন্দ্র যোজনায় প্রায় পৌনে দু’লক্ষ কোটি টাকা আটকে রাখা হয়েছে। বাংলার প্রতি তাদের বিশেষ বিদ্বেষ রয়েছে। কারণ,
বার বার সেখানে তারা হেরেছে।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন, তৃণমূল একমাত্র দল যারা লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে ৩৮শতাংশ মহিলাকে সংসদে পাঠিয়েছে। জহরের কটাক্ষ, ‘‘আগে বৃষ্টি পড়লে ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়ত। কিন্তু অর্থমন্ত্রী ১০-১১ লক্ষ কোটি টাকা প্রতি বছর পরিকাঠামোয় ব্যয় করার পরে দেখা যাচ্ছে, যখনই বৃষ্টি হচ্ছে ছাদ ভেঙে পড়ছে। ফাঁস হচ্ছে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও।’’

এ দিন মহুয়া শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করেছেন। তিনি বলতে শুরু করার সঙ্গেই সঙ্গেই মোদী উঠে লোকসভা থেকে বেরিয়ে যান। প্রস্থানোদ্যত মোদীকে লক্ষ্য করে মহুয়া বলতে থাকেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমার কথা শুনে যান। দয়া করে শুনে যান। ভয় পাবেন না! আমার কেন্দ্রে (প্রচারে) দু’বার এসেছেন। এ বার তো আমার কথা শুনে যান!’’ মোদী অবশ্য তাতে কর্ণপাত করেননি। সেই সময় উঠে পড়েছিলেন রাহুল গান্ধীও। তিনি রাজ্যসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়া সনিয়া গান্ধী এবং সংসদে আসা প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাকে ছাড়তে সংসদের মূল ফটক পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে লোকসভায় নিজের আসনে বসেন। মহুয়ার বক্তৃতার শেষে করমর্দনও করতে দেখা যায় রাহুলকে।

মহুয়ার দাবি, তাঁকে বার করে দেওয়া বিজেপির বিরাট ভুল এবং সেই কারণে তাদের আসনও কমে গিয়েছে। তাঁর কথায় ‘‘আমাকে বসানোর কারণেই জনতা আপনার ৬৩ জন সাংসদকে বসিয়ে দিয়েছে। ৩০৩টি আসন থেকে নেমে এসেছেন ২৪০টি আসনে।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘আমাকে বসাবেন না, আরও মাসুল দিতে হবে।’’ সংসদ থেকে নিজের বহিষ্কার হওয়ার দিনটির সঙ্গে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের তুলনা টেনে মহুয়া বলেছেন, ‘‘৮ ডিসেম্বর কুরুসভা হয়েছিল সংসদে। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করেছিলেন দুঃশাসন। ধৃতরাষ্ট্র সে দিন অন্ধ ছিলেন।’’

এর পরেই মহুয়া লোকসভা ভোটের ফল তুলে ধরে জানালেন, যাঁরা সে দিন তাঁর ‘বস্ত্রহরণ’-এ শামিল হয়েছিলেন, সেই এথিক্স কমিটির সদস্যদের লোকসভা ভোটে কী হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এথিক্স কমিটি আমাকে বহিষ্কারে অনুমোদন দিয়েছিল। সেখানে ১০ জন সদস্য ছিলেন এবং এক জন চেয়ারপার্সন। পাঁচ জন সদস্য ছিলেন বিজেপির। তাঁদের মধ্যে চার জনই হেরে গিয়েছেন। চেয়ারপার্সনও হেরেছেন। কংগ্রেসের যে সাংসদ তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন, তিনি হেরেছেন। মহারাষ্ট্রের যে সাংসদ বিজেপির হয়ে বিতর্ক তুলেছিলেন, তিনিও হেরেছেন। কৃষ্ণের মতো কৃষ্ণনগরবাসী আমাকে রক্ষা করেছেন।’’

কৃষ্ণনগরের সাংসদের দাবি, মোদী বাংলা, পঞ্জাব এবং মহারাষ্ট্রে যেখানে যেখানে প্রচারে গিয়েছেন, তার বেশির ভাগ জায়গাতেই বিজেপি হেরেছে। অযোধ্যার প্রসঙ্গ আলাদা করে তুলে বলেছেন, শুধু অযোধ্যা নয়, তার আশপাশের শ্রাবস্তী, চিত্রকূট, সুলতানপুর সর্বত্র পরাজয় হয়েছে বিজেপির। তাঁর খোঁচা, ‘‘রাম বললেন, থাক, আমার নামে আর নয়। অতি দর্পে হতা লঙ্কা।’’ আর এই দর্পের জন্য ‘গণদেবতা’ মোদীকে শাস্তি দিয়েছে বলেও দাবি তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE