২০০৮ সালের মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানার জন্য তৈরি রয়েছে মুম্বইয়ের জেল। শুক্রবার জানিয়ে দিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীস। তিনি আরও জানালেন, এর আগে হামলাকারী অজমল কসাবকেও রাখা হয়েছিল মুম্বইয়ের জেলে। তাই রানাকে রাখা নিয়ে নিরাপত্তাজনিত কোনও সমস্যা হবে না। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে রানাকে ভারতে ফেরানোর বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়েছেন ট্রাম্প। তার পরেই এই মন্তব্য করলেন ফড়ণবীস। যদিও রানাকে মুম্বইয়ের জেলে ভরার আগে বেশ কিছু সম্ভাব্য প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই নিয়েও ইঙ্গিত দিয়েছে মুম্বই পুলিশের বিভিন্ন সূত্র।
মুম্বই হামলার সময় ধরা পড়ে গিয়েছিল জঙ্গি কসাব। তাকে পরে ফাঁসি দেওয়া হয়। সেই কসাবও ছিল মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলে। সেই প্রসঙ্গই মনে করিয়ে দিয়ে ফড়ণবীস বলেন, ‘‘আমাদের জেল রানার জন্য প্রস্তুত। আমরা অজমল কসাবকেও রেখেছি। তাই এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হবে না।’’
রানা আদতে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবাকে মদত দেওয়ার জন্য আমেরিকায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। মুম্বই হামলার অন্যতম এই চক্রীকে দীর্ঘ দিন ধরে এ দেশে ফেরানোর দাবি তুলেছে নয়াদিল্লি। অবশেষে তাতে অনুমোদন দিলেন ট্রাম্প। মহারাষ্ট্রের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী ফড়ণবীস এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কথাই মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘‘রানাকে দীর্ঘ দিন ধরে ফেরত চাইছিল ভারত। ওকে প্রত্যর্পণের পরেই চূড়ান্ত সুবিচার হবে। ২৬ নভেম্বরের হামলার অন্যতম চক্রী তিনি। এর আগে অনলাইনে রানাকে জেরা করেছি আমরা। কিন্তু ওঁকে ফেরাতে চাইছিলাম এ দেশে, যাতে রাজি হচ্ছিল না আমেরিকা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর হস্তক্ষেপ বিষয়টিতে সাহায্য করেছে।’’ মহারাষ্ট্রের পুলিশমন্ত্রী যোগেশ কদমও একই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আরও এক বার প্রমাণিত হল যে, পাকিস্তান ওই হামলায় জড়িত ছিল। আরও এক বার এ-ও প্রমাণিত হল যে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্ব কতটা কার্যকরী। পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। রানার নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ করবে মহারাষ্ট্র সরকার।’’
আরও পড়ুন:
রানাকে এ দেশে ফেরত আনার জন্য এর পরে ঠিক কী কী প্রক্রিয়া রয়েছে? সরকারি একটি সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে আইনি নথি এবং পরোয়ানা জারি করে আমেরিকাকে পাঠানো হয়েছে। ওই সূত্রেরই দাবি, ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ঠিক কবে, কখন রানাকে এ দেশে ফেরানো হবে, তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিদেশ মন্ত্রক ছাড়পত্র পেলে আমেরিকায় যাবে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র একটি দল। এ দেশে ফেরানোর পরে রানাকে এনআইএ আদালতে হাজির করানো হবে। সেখানে তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে জেরার জন্য নিজেদের হেফাজতে চাইবে। মুম্বই পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (এসিপি) ইকবাল শেখ বলেন, ‘‘এনআইএ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার পরে রানাকে মুম্বইয়ে নিয়ে আসা হবে। ওঁর প্রত্যর্পণ ২৬/১১ মুম্বই হামলায় পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের যোগকেই প্রমাণ করে। ২০০৮ সালে ওঁর গ্রেফতারির পর থেকেই আমেরিকার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে মুম্বই পুলিশ। মুম্বইয়ে হামলাস্থল চিহ্নিত করার জন্য তিনি ডেভিড হেডলিকে সাহায্য করেছিলেন। মুম্বই পুলিশ ওঁকে হেফাজতে পেলে আরও তথ্য পাবে। ছাবাড় হাউসের মতো জায়গা চিহ্নিত করার জন্য ওঁকে স্থানীয় কেউ সাহায্য করেছিলেন কি না, তা-ও জেরা করেই জানা যাবে।’’