প্রতীকী ছবি।
বৃহস্পতিবার রাত ন’টা। দিল্লির লোদীর রোডের বারো তলায় সিবিআই অধিকর্তার ঘরে ঢুকলেন এম নাগেশ্বর রাও। নতুন করে সিবিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তার দায়িত্ব বুঝে নিলেন। তার পরে সারা রাত সিবিআই সদর দফতরের নানা ঘরে জ্বলে রইল আলো।
আলো জ্বলার প্রমাণ এল সকালেই। শুক্রবার সকালে রাও প্রথমেই নির্দেশ জারি করলেন, অলোক বর্মা যে সব অফিসারকে বদলি করে দিল্লিতে এনেছিলেন, সেই সব বদলির সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেওয়া হল। ওই অফিসারেরা যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বা পদক্ষেপ করেছিলেন, সে সবও ‘নাল অ্যান্ড ভয়েড’ করে দেওয়া হল। অর্থাৎ, সেই সব সিদ্ধান্তই খারিজ!
রাতে চলল বদলির ঝড়। সিবিআই মুখপাত্র অভিষেক দয়ালকে সরিয়ে আনা হল বাণিজ্য মন্ত্রকের মুখপাত্রের দায়িত্ব সামলানো নিতিন ওয়াকনকরকে। বদলি করা হল পাঁচ জন যুগ্ম-অধিকর্তাকে। এঁদের মধ্যে অগুস্তা এবং বিজয় মাল্যর মামলা সামলানো সাঁই মনোহরকে সরানো হলেও ওই দু’টি তদন্তের দায়িত্বে রাখা হল। একই ভাবে সরানো হলেও বিনীত বিনায়ককে রাখা হল কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্তে। সূত্রের খবর, এখন সিবিআই দফতরে চলছে বর্মার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর প্রস্তুতি!
বর্মার আস্থাভাজন অফিসারদের নিয়ে রাওয়ের এই ছিনিমিনি খেলায় অনেকেই বিস্মিত। রাজধানীতে এখন একটাই প্রশ্ন, তা হলে কি এর মধ্যেই রাফাল চুক্তির মতো ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত বা এফআইআর দায়ের করা হয়ে গিয়েছিল? সে কারণেই কি রাত জেগে নতুন নির্দেশ জারি করে সেই তদন্তকে ‘নাল অ্যান্ড ভয়েড’ করে দিলেন নাগেশ্বর রাও?
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা— এই সময়টুকুই সিবিআইয়ের অধিকর্তা পদে থাকতে পেরেছিলেন অলোক বর্মা। দায়িত্ব পেয়েই আস্থাভাজন অফিসারদের ফিরিয়ে আনছিলেন দিল্লিতে। নতুন করে নিজের ‘টিম’ তৈরি করছিলেন। চলছিল ‘অ্যাকশন’-এর প্রস্তুতিও। সিবিআই সূত্রের ব্যাখ্যা, আজ ভারপ্রাপ্ত সিবিআই অধিকর্তা সেই সমস্ত ‘অ্যাকশন’-কেই ধামাচাপা দিয়ে দিলেন। কিন্তু কী ‘অ্যাকশন’-এর প্রস্তুতি নিচ্ছিল ‘টিম-বর্মা’?
সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতেই রাকেশ আস্থানা, সাঁই মনোহর এবং দেবেন্দ্র কুমার— এই তিন সিবিআই অফিসারের বাড়ি ও দফতরে হানার সম্ভাবনা ছিল। আস্থানাই বর্মার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। আস্থানার বিরুদ্ধে পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেন বর্মা। দেবেন্দ্র কুমারের নামও রয়েছে সেই এফআইআর-এ। সেই সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং প্রধানমন্ত্রী দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তার বিরুদ্ধেও পদক্ষেপের কথা ভাবছিলেন বর্মা। ২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে বর্মাকে ছুটিতে পাঠাতে ডোভাল প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। প্রধানমন্ত্রী দফতরের ওই কর্তার নাম একটি কয়লা খনি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে।
রাওকে ফের সিবিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা হিসেবে নিয়োগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট বর্মাকে পুনর্বহাল করে বলেছিল, উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে সিদ্ধান্ত ছাড়া সিবিআই অধিকর্তা পদে কাউকে নিয়োগ বা বরখাস্ত করা যায় না। তা সত্ত্বেও সেই কমিটির অনুমোদন ছাড়া সরকার রাওকে ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা নিয়োগ করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy