প্রেমকুমার নাল্লা এবং রাজেন্দ্র কেন্দ্রুকা
দম ফেলার ফুরসত নেই কারও। দু’জনেরই ‘ইভিএম-টেস্ট’ ১১ এপ্রিল। দিনভর তাই প্রচারে ছুটছেন বছর সাতচল্লিশের প্রেমকুমার নাল্লা। সদ্য সাতাশে পা দেওয়া রাজেন্দ্র কেন্দ্রুকা-ও নাওয়া-খাওয়া ভুলে পড়ে রয়েছেন হাটে-বাজারে। ওড়িশার কোরাপুট কেন্দ্র থেকে সিপিআই(এমএল)- রেডস্টারের হয়ে ভোটে লড়ছেন রাজেন্দ্র। আর প্রেমকুমার দাঁড়িয়েছেন প্রেম জনতা দলের টিকিটে। তেলঙ্গানার চেভেল্লা কেন্দ্র থেকে। ওড়িয়া ছাড়া কিছুই বলতে পারেন না রাজেন্দ্র। প্রেমকুমার কিন্তু দিব্বি সাবলীল হিন্দি ওইংরেজিতে।
বিস্তর অমিল দু’জনের। মিল শুধু ওই ভোটের পুঁজিতে― পাঁচশো টাকা। মনোনয়নের হলফনামা বলছে, রাজেন্দ্রর সম্পত্তি সামান্য বেশি, ৫৬৫ টাকা। ব্যস, আর কিচ্ছুটি নেই। দু’জনেই তবু দুর্নীতি আর এলাকায় অনুন্নয়নের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন। পায়ে হেঁটে লিফলেট বিলি করছেন, আর ভালবেসে কেউ গাড়িতে লিফট দিলে চলে যাচ্ছেন ‘মিনি’ জনসভায়।
কিন্তু ভোটে কী হবে? ফোনে কথা বলার সময় একটু যেন নড়বড়ে শোনাল প্রেমকুমারকে। ওই চেভেল্লা কেন্দ্র থেকেই দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী কোন্ডা বিশ্বেশ্বর রেড্ডি। ৮৯৫ কোটি টাকার মালিক। এ বারের ভোটে স্বঘোষিত সব চেয়ে দামি প্রার্থী। তাঁর কথা উঠতেই প্রেম জনতা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি প্রেমকুমারবাবু পরিষ্কার হিন্দিতে বললেন, ‘‘আরে কংগ্রেস তো বরাবরের বড়লোক। তবু সাধারণ মানুষ পাশে আছেন, আর প্রচারে বেরোলে স্থানীয়েরা বাড়িতে ডেকে খাওয়াচ্ছেন বলেই সাহস পাচ্ছি। এলাকায় অনুন্নয়নের বিরুদ্ধে মানুষই জবাব দেবেন ইভিএমে।’’
বছর ১৮ আগে এই দল গড়েছেন প্রেমকুমার। তাঁর লেটারহেডের ডান দিকে উপরে ‘লোকনায়ক' জয়প্রকাশ নারায়ণের ছবি। প্রার্থী বললেন, ‘‘এখনও জেপি-ই আমার নেতা।" পঁচাত্তরে ইন্দিরা গাঁধী জরুরি অবস্থা জারি করার পরে সমাজবাদী নেতা জয়প্রকাশই বিরোধীদের এক ছাতার নীচে এনে সাতাত্তরের ভোটে ধরাশায়ী করেছিলেন কংগ্রেসকে। অতীত আঁকড়ে এ বার অবশ্য কংগ্রেস নয়, বিজেপির ‘সর্বনাশ’ চাইছেন পোড় খাওয়া সমাজবাদী নেতা। প্রয়োজনে ভোটের পরে খানিক সমঝোতা করেও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজধানী হায়দরাবাদ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে থাকি আমরা। এখনও বাস যোগাযোগ নেই। ভাল রাস্তাই পেলাম না! কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে এমন বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বরং কোরাপুটে রাজেন্দ্রের ভোটে দাঁড়ানো এ বার নেহাতই ঘটনাচক্রে। বছর ছয়েক আগেও চুটিয়ে মাওবাদী আন্দোলন করেছেন তিনি। অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণ করে এ বার হঠাৎ সংসদীয় রাজনীতিতে কেন? দোভাষী এক কমরেডের সাহায্য নিয়ে রাজেন্দ্র বললেন, ‘‘এলাকায় ৩১৪টা ব্লকের সবক’টিতেই হিমঘর থাকার কথা। কিন্তু আছে মাত্র ১২৬টা। যার মধ্যে আবার ৮০টা খারাপ। আকাশছোঁয়া কলেজের ফি। ছেলেমেয়েরা পড়তে পারছে না। আমার দল এবং এলাকাবাসী চাইছেন, আমি তাঁদের হয়ে কথা বলি।’’ জানালেন, মনোনয়নের টাকাটা দল দিয়েছে। এখন প্রচারের খরচ চালাচ্ছেন বন্ধু আর রাজেন্দ্রের নিজের সম্প্রদায়ের লোকেরা। তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত এই আসনে লড়ছেন সাত জন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এখানে লড়াইটা মূলত বিজেপি, বিজেডি আর কংগ্রেসের মধ্যে। এই তিন প্রার্থীই কোটিপতি। সকালে বাজার আর বিকেলে গ্রামের হাটে ‘সস্তার প্রচার’ সেরে এসে তবু একমনে বৃহস্পতিবারের অঙ্ক কষছেন রাজেন্দ্র। প্যান কার্ড নেই প্রার্থীর। এলাকাবাসীর প্রাণপণ আস্থাটুকুই যা সম্বল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy