Advertisement
২৩ জানুয়ারি ২০২৫

‘মুরগির মতো পাড়া কাঁপিয়ে ডিম পাড়ি না’

এক দিকে ধিং, অন্য দিকে গোলাঘাট— এই ২০০ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে কলিয়াবর লোকসভা কেন্দ্র।

অনাথ আশ্রমে ছোটদের সঙ্গে জিতেন গগৈ। নিজস্ব চিত্র

অনাথ আশ্রমে ছোটদের সঙ্গে জিতেন গগৈ। নিজস্ব চিত্র

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

কোনও প্রার্থীর দামি এসইউভি, কারও বিলাসবহুল সিডান। কিন্তু হাতিতে টানা গাড়ি ওই এক জনেরই আছে! ওই এক জনই বাঘের মুখে দাঁড়িয়ে জঙ্গলে তাকে ফিরে যাওয়ায় অনুরোধ জানাতে পারেন! বুনো মোষকে ধাওয়া করেন জিপ চালিয়ে! শূন্যে গুলি করে চিতাবাঘ মারেন। জঙ্গলে মাছ ধরতে গেলে বাধা পেয়ে দাবি করেন, ‘আমি কাজিরাঙার রাজা।’ এক সময়ের কট্টর জঙ্গি, দু’বারের বিধায়ক, রাজ্য রাজনীতির ব্যতিক্রমী, রঙিন ব্যক্তিত্ব জিতেন গগৈ এ বার লোকসভায় কংগ্রেস-বিজেপিকে টক্কর দিতে নেমেছেন।

এক দিকে ধিং, অন্য দিকে গোলাঘাট— এই ২০০ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে কলিয়াবর লোকসভা কেন্দ্র। সেখানেই বোকাখাতে বাড়ি জিতেন গগৈয়ের। ১৯৮৯ সালে পরেশ বরুয়ার সঙ্গে ঝগড়া করে আলফা ছেড়েছিলেন। এর পরে আলফা তাঁর ‘মৃত্যুদণ্ড’ ঘোষণা করে। এর ফলে কোমরে এখন তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী পিস্তল। বছর তিনেক আগে সেই পিস্তলই কোমর থেকে ছিটকে পড়ে গুলি ছুটে ভেঙে দিয়েছে পায়ের হাড়। অস্ত্রোপচারে ইঞ্চিখানেক খাটো হয়েছে পা। কিন্তু তেজ কমেনি জিতেনের। রাজার মতোই বোকাখাতের বাড়িতে ‘প্রজাদের’ নিয়ে সভা বসান। মাথা খাটিয়ে বার করেন নতুন পরিকল্পনা। চালান একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, অনাথালয়। আবার কাজিরাঙা থেকে গ্রামে বাঘ, হাতি, গন্ডার ঢুকলেও তাঁরই তলব পড়ে।

বৈঠকখানায় বসে সোজাসাপটা জিতেন জানান, তথাকথিত দিল্লিওয়ালা সাংসদদের মতো তিনি হতে পারবেন না। মানুষের মধ্যে থেকে কাজ করতে হবে তাঁকে। ২০০১-এ বিধায়ক হওয়ার পরে তাঁর আমলেই কাজিরাঙায় ‘হস্তী মহোৎসব’ শুরু হয়। নিজের তিনটি হাতি, দু’টি ঘোড়া আছে। কাজিরাঙায় বন টহলে তিনটি নৌকার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। দু’দফায় বিধায়ক থাকার পরে দিসপুর-রাজনীতি থেকে দূরে থাকা জিতেন কাকচাং জলপ্রপাতকে ঘিরে অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন গড়ে তুলেছেন। তৈরি করেছেন হাতিতে টানা বিরাট গাড়ি। তাঁর অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া সঙ্গীতা বর্মনের বিয়েতে বর এসেছিল তাঁর হাতিতে। আর বরযাত্রী হাতিতে টানা গাড়িতে। বরকে নিজের ৬০০ বিঘার চা বাগানে চাকরিও দিয়েছেন জিতেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অনাথ আশ্রমের পাশাপাশি এখন বৃদ্ধাশ্রম খোলার কথা ভাবছেন জিতেন। কারণ তাঁর ধারণা, বাচ্চারা প্রবীণদের স্নেহ খোঁজে, প্রবীণরাও ছোটদের কাছে চান। গোলাঘাটে সাম্প্রতিক বিষ মদে মৃত্যুর ঘটনার পরে অনাথ ১০টি শিশুকেও আশ্রয় দিয়েছে তাঁর অনাথ আশ্রম। বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে খেলতে জিতেন দুঃখ করেন, এত বছর কলিয়াবরের সাংসদ আসন ধরে রাখা গগৈ পরিবার একবারের জন্যেও আশ্রমে আসেনি। অথচ তিনি কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়ে গিয়েছেন। উল্টে কংগ্রেস আমলে, কাজিরাঙায় মাছ ধরার অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় তাঁকে বিধায়ক থাকাকালীনই গ্রেফতার করা হয়েছিল।

৫৭ বছরের জিতেন দু’বার বাঘ ও বাঘিনীর মুখোমুখি গিয়ে তাদের তাড়িয়েছেন। ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ থাকাটা তাঁর ধাতে নেই। এক বার তাঁর বাগানে চিতাবাঘ ঢোকে। সাজার তোয়াক্কা না করে জিতেন বলেন, “গাছ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার সময় শূন্যে গুলি করেই মেরে ফেলি ওটাকে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাগান শ্রমিকেরা সেটিকে খেয়ে ফেলে।”

জংলা প্যান্ট, টুপিতে এখনও আলফার দিনের কথা মনে করানো জিতেনের সোজা কথা, “অনুপ্রবেশকারী তাড়াতে আন্দোলন করে লাভ নেই। হয় মেরে তাড়াও না হলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কর। আমি এই কারণে সশস্ত্র আন্দোলন করেছি। এমন জেল নেই যেখানে থাকিনি। আমি পদের লোভও করি না। আমার কাজ মাছের মতো। নীরবে জলের তলায় ডিম পাড়ি। মুরগির মতো সশব্দে পাড়া কাঁপিয়ে ডিম পাড়ি না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jiten Gogoi Lok Sabha Election 2019 জিতেন গগৈ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy