জলসন্ধান: জলাধারের জল পায় মুম্বই। নাশিকের অদূরে বরডে-চি-ওয়াড়ি গ্রামে এ ভাবেই চলছে জীবন। —নিজস্ব চিত্র।
দেওয়াল বেয়ে দড়ি ধরে তাঁদের মসৃণ ওঠা-নামা দেখে লজ্জা পাবে সরীসৃপও। নাশিক থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরের বরডে-চি-ওয়াড়ি গ্রামের মহিলাদের কাছে এ হল বেঁচে থাকার লড়াই। প্রয়োজনীয় জলটুকু জোটাতে এই আদিবাসী গ্রামের মহিলারা দড়ি বেয়ে রোজ নেমে যান কুয়োর অতলে। জল নিয়ে আবার উঠে আসেন।
এমনটাই গত দেড়-দু’দশক ধরে চলে আসছে ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরের অদূরে আদিবাসী-অধ্যুষিত এই এলাকাগুলিতে। ভোটের মুখে নেতারাও আরও এক বার জলকষ্ট ঘোচানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। শুধু বরডে-চি-ওয়াড়ি নয়, নাশিক তালুকের অন্তত ১১০টি গ্রাম ফি-বছর জলের সমস্যায় ভুগে থাকে। অথচ নাশিকের কাছেই ইগতপুরীতে রয়েছে বৈতরণা জলাধার। এলাকার বাড়তি বৃষ্টিপাতের জল ধরে রেখে মুম্বইয়ে জোগান দেয় এই জলাধার। কিন্তু প্রদীপের নীচের অন্ধকারের মতো ওই জলাধারেরই দশ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা গ্রামগুলি ভোগে তীব্র জলসঙ্কটে। একাধিক বার ওই জলাধার থেকে পাইপে করে গ্রামগুলিতে জল পৌঁছনোর পরিকল্পনা করা হলেও সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন জমি থেকে তিন-চারতলা বাড়ির সমান নীচে নামতে হয় বিভা-কুসুমদের।
কার্যত পাতাল-প্রবেশ। বিশাল হাঁ-করা কুয়োয় জল একেবারে তলানিতে। বালতি ঝুলিয়েও নাগাল পাওয়া মুশকিল। তাই কুয়োর ভিতরের দেওয়ালের গা-বেয়ে নামানো আছে দড়ি। সেই দড়িকে দু’হাতে আর পায়ের দু’আঙুলের ফাঁকে চেপে ধরে সরসর করে নেমে যান বিভারা। শাড়ি পরেও দিব্যি ভারসাম্য রেখে ট্রাপিজ খেলোয়াড়দের মতো ওঠা-নামা করেন, কোনও সমস্যা হয় না। এক-এক বারে ৪-৫ লিটার জল তুলে ফেলতে পারলেই দিনের মতো নিশ্চিন্ত। নীচে পাওয়া জল বালতিতে ভরে দড়িতে হাল্কা টান দেন কুসুম। উপরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে নীতা তখন টেনে নেন সেই বালতি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আর হ্যাঁ, প্রাণ হাতে নিয়ে শুধু মেয়েদেরই এ ভাবে জল তুলতে দেখা যায় কুয়ো থেকে। গ্রামের পুরুষেরা নাকি ভয় পান দড়ি ধরে ওঠানামা করতে!
বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই সরব ভগবান মেধার মতো একাধিক সমাজকর্মী। তাঁদের মতে, মুম্বই যে এলাকার জলে বেঁচে রয়েছে, সেখানকার জন্যই কোনও জল নেই— এর চেয়ে হাস্যকর কিছু হতে পারে না। দীর্ঘদিনের সমস্যা, অথচ কারও এতে নজর নেই। বিষয়টি নিয়ে জেলা ও রাজ্য স্তরে একাধিক বার দরবার করেছে স্থানীয় শ্রমজীবী সংগঠন। তার জেরে তীব্র গরমের সময়ে অন্তত ট্যাঙ্কার আসা শুরু হয়েছে কিছু এলাকায়।
এরই মধ্যে শুরু হয়েছে লোকসভা ভোট। নাশিক কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে জল সমস্যার পাকাপাকি সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এনসিপি প্রার্থী সমীর ভুজবল। গত পাঁচ বছরে রাজ্য ও কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকা সত্ত্বেও জলের সমস্যা না-মেটায় শিবসেনার বিদায়ী সাংসদ হেমন্ত গডসের উপরে তাঁরা ভরসা হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নাশিকের মতো লাগোয়া দিন্দৌরি কেন্দ্রের সমস্যাও একই। সেখানেও জলাভাব তীব্র।
সমস্যা মেটাতে ছোট ছোট জলাধার বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী জে পি গাভিট। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই এলাকায় চাষের জন্য মাটির তলা থেকে পরিকল্পনাহীন ভাবে জল তুলে নেওয়া চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। ফলে জলস্তর ক্রমশ নেমে গিয়েছে। দ্রুত ওই জলস্তর ‘রিচার্জ’ না-করলে এর পরে জল পাওয়াটাই দুষ্কর হয়ে পড়বে। স্থানীয় সিপিএম নেতা সুনীল মালসারের মতে, এলাকায় বৃষ্টিপাত ভালই হয়। কিন্তু সেই জল গোদাবরী দিয়ে বয়ে যায় আরব সাগরে। তাই ছোট ছোট জলাধার করে বাড়তি বৃষ্টির জল ধরে রাখতে হবে। তাতে এক দিকে জল মাটির নীচে পৌঁছবে। অন্য দিকে, প্রয়োজনে জলাধারের জল নিজেদের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারবেন গ্রামবাসীরা। সুনীলের দাবি, বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। কিন্তু সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের এ ছাড়া কোনও পথ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy