ভীমা কোরেগাঁওয়ে বিজয় রণস্তম্ভ ও শম্ভাজির স্মৃতি সৌধ। নিজস্ব চিত্র।
রাফাল বিতর্ক তখনও ওঠেনি। গড়গড়িয়ে ছুটছে নরেন্দ্র মোদীর রথ। সাড়ে তিন বছরের সেই রথের রশিতে প্রথম টান মেরেছিল ভীমা কোরেগাঁওয়ের দলিত সমাজ। দলিত বিক্ষোভের সেই স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। মূলত ওই বিক্ষোভ মরাঠাদের বিরুদ্ধে দলিত সমাজের হলেও, নিশানা হয়ে দাঁড়ায় বিজেপি-শিবসেনা। দেড় বছর আগে এলাকায় সেই যে তীব্র মেরুকরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার ফলে পুণে সংলগ্ন শিরুর কেন্দ্রে শিবসেনা প্রার্থীর জয় রীতিমতো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভোটের তিন দিন আগে ভীমা কোরেগাঁও আপাত নিস্তরঙ্গ। মুম্বই-কলকাতা হাইওয়ে ছুটে গিয়েছে ছোট জনপদটিকে চিরে। রাস্তার এক দিকে ব্রিটিশ ও মাহার (দলিত সমাজ)-দের হাতে পেশোয়াদের পরাজয়ের স্মৃতিতে বানানো বিজয় রণস্তম্ভ। উল্টো দিকে মূল সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলেই শিবাজি-পুত্র শম্ভাজির স্মৃতি সৌধ। প্রথমটি দলিতদের আত্মমর্যাদার তো দ্বিতীয়টি মরাঠিদের অহংকারের। জাতীয় সড়ক যেন আড়াআড়ি বিভক্ত করে রেখেছে দুই সমাজকে।
এই কোরেগাঁওয়েই ব্রিটিশদের সহযোগিতায় মাহার সমাজ পরাক্রমশালী পেশোয়া বাহিনীকে হারিয়েছিল ১৮১৮ সালের ১ জানুয়ারি। ২০১৮ সালে ছিল সেই জয়ের দু’শো বছর পূর্তি। কয়েক লক্ষ লোক হওয়ার কথা ছিল ১-৩ জানুয়ারির এই অনুষ্ঠানে। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করে ভীমা কোরেগাঁওয়ে। পরে তা সংঘর্ষের আকার নেয়। ফাটল চওড়া হয় দলিত-মরাঠা সমাজে।
কেন, তা জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় ৩৩০ বছর। ১৬৮৯ সালে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে হত্যা করা হয় শিবাজির পুত্র শম্ভাজিকে। বাঘনখ দিয়ে চেরা ছিন্নভিন্ন শরীর ফেলে দেওয়া হয় জঙ্গলে। এক দল ইতিহাসবিদের মতে, শিরকে সমাজের দুই মরাঠি স্বামী-স্ত্রী সম্রাটের নির্দেশ উপেক্ষা করে গোটা দেহ সেলাই করে অন্তিম সংস্কার করেন। অস্থি পুঁতে রাখা হয় ওডু গ্রামে। সেখানেই বর্তমানে রয়েছে স্মৃতিসৌধটি। আবার দলিত সমাজের মতে— শিরকে নয়, ঔরঙ্গজেবের নির্দেশকে অমান্য করে শম্ভাজির শেষকৃত্য করেছিলেন গোবিন্দ মাহার নামে এক দলিত। এ নিয়ে দু’পক্ষের টানাপড়েন দীর্ঘ দিনের।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ওডু গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান রমাকান্ত বিট্ঠল শিউলের কথায়, ২০১৭-এর ২৭ ডিসেম্বরের সকালে ওই স্মৃতিসৌধের উল্টো দিকে ব্যানার ঝুলতে দেখা যায়, যাতে লেখা ছিল— গোবিন্দ মাহারই শম্ভাজির শেষকৃত্য করেছিলেন। তা থেকেই বাড়ে উত্তেজনা। শুরু হয়ে যায় মরাঠা-দলিত সংঘর্ষ। যার অভিঘাতে ধাক্কা খায় নরেন্দ্র মোদী সরকারও।
তবে কারা যে ওই পোস্টার লাগিয়েছিল, জানেন না স্থানীয়রা। তবে এই সমাবেশে জিগ্নেশ মেবাণী, উমর খালিদ, রোহিত ভেমুলার মা রাধিকার উপস্থিতি ভাল ভাবে নিচ্ছিল না আরএসএস। বাবাসাহেব অম্বেডকরের পৌত্র প্রকাশ ‘বঞ্চিত বহুজন অঘাড়ি’ নামে সংগঠন গড়ে বিজেপি-শিবসেনাকে নতুন পেশোয়া বলে চিহ্নিত করে যে ভাবে দলিত সমাজকে একজোট করছেন, তা মেনে নিতে পারছে না সঙ্ঘ পরিবার। তাই দলিতদের জয়ের উদযাপন মানে ব্রিটিশ সমাজের জয়কে তুলে ধরা— ওই যুক্তি তুলে সঙ্ঘ ও শিবসেনার একাংশ ওই জমায়েত ভেস্তে দিতে তৎপর হয়। যে কারণে এ বার শিবসেনা থেকে মুখ ঘুরিয়েছে দলিত সমাজ।
ওই বিজয় রণস্তম্ভের দেখভাল কমিটির সভাপতি সরজি রাও ওয়াঘমারে দলিত হলেও একনিষ্ঠ শিবসেনা সদস্য। জানালেন, ভবিষ্যতেও তাই থাকবেন। কিন্তু এ বারের ভোট তাঁর কাছে জবাব দেওয়ার লড়াই। তিনি বলেন, ‘‘সাংসদ শিবাজি রাওয়ের ডান হাত মিলিন্দ একবোটে ও রাম গৌরের মতো লোকেরা। তাদের সে দিন দলিতদের বিরুদ্ধে উস্কানি দিতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি। একটা শিক্ষা হওয়া দরকার।’’
জবাব দিতে চাপা ক্ষোভে ফুটছে দলিত সমাজ। ওয়াঘমারের কথায়, শিরুর লোকসভা কেন্দ্রে ২ লক্ষ দলিত ভোটের অধিকাংশ পাবে এনসিপি প্রার্থী। কিছু পাবে প্রকাশ অম্বেডকরের দল। কিন্তু ওদের শক্তি কম। তাই এনসিপি প্রার্থী অমল কোলহের পাল্লাই ভারি।’’ শুধু দলিত নয়, ভাঙন ধরেছে মরাঠা ভোট ব্যাঙ্কেও। এনসিপি-র দফতরে দেখা হলে বিনয় মোরের সঙ্গে। তাঁর হিসাব— দলিত ও মুসলিম ভোট কোলহে পাচ্ছেন। ওবিসি সমাজের প্রতিনিধি হওয়ায় সেখানকার ভোট কোলহের সঙ্গে যাওয়ার কথা। যে শিবাজিকে সামনে রেখে শিবসেনা-বিজেপি
মহারাষ্ট্রে হিন্দুত্ব তাস খেলে থাকে, সেই শম্ভাজির ভূমিকায় সিরিয়ালে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া কোলহের পক্ষে থাকবে বিক্ষুব্ধ মরাঠারাও।
২০১৪-য় তিন লক্ষ ভোটে জিতেও, শিবসেনার শিবাজি রাও আধেল রাওয়ের কপালে বিলক্ষণ ভাঁজ ফেলেছে এ বারের পরিস্থিতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy