Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
parliament

Parliament Disruptions: সংসদে সবচেয়ে বেশি হল্লা করেছে বিজেপি-ই! জেটলি-সুষমার পুরনো অস্ত্র হাতে নিচ্ছে বিরোধীরা

সংসদের বিক্ষোভ গণতন্ত্রের অংশ, সংসদ সচল রাখার দায়িত্ব সরকারের, বিরোধীদের নয় বলে একসময় মন্তব্য করেছিলেন জেটলি এবং সুষমা।

মোদী সরকারের আমলে গড়ে ৯০ শতাংশ সময়ই বিনা বাধায় কাজ হয়েছে সংসদে।

মোদী সরকারের আমলে গড়ে ৯০ শতাংশ সময়ই বিনা বাধায় কাজ হয়েছে সংসদে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২১ ১৫:২৯
Share: Save:

দিনভর সংসদে হাঙ্গামা করছেন বিরোধীরা। তার জেরে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে তাঁর। তা নিয়ে বুধবার রাজ্যসভায় কেঁদে ফেললেন বেঙ্কাইয়া নায়ডু। কিন্তু বেঙ্কাইয়ার মন্তব্যকে পরিহাস হিসেবেই দেখছেন বিরোধী সাংসদরা। তাঁদের অভিযোগ, বিরোধী থাকাকালীন হামেশাই সংসদে হাঙ্গামা করতেন তৎকালীন বিজেপি সাংসদরা। আপত্তি তুললে বলতেন, সংসদ চালানোর দায়িত্ব সরকারের, বিরোধীদের নয়। বিজেপি-র দেখানো পথেই তাঁরা হাঁটছেন বলে দাবি বিরোধী নেতাদের।

বিরোধীদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ ঘিরে গোড়া থেকেই উত্তাল সংসদের বাদল অধিবেশন। তাই শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা না করে, বুধবারই লোকসভায় বাদল অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন স্পিকার। বিরোধীদের আচরণে গণতন্ত্রের মন্দির সংসদ ভবন কলুষিত হয়েছে বলে বুধবার রাজ্যসভায় মন্তব্য করেন নায়ডু। তাতেই তাঁকে আয়না ধরাচ্ছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, ২০১৪ সালে সরকার গড়ার আগে পর্যন্ত সংসদে বিজেপি-ই সবচেয়ে বেশি হট্টগোল করেছে।

ইউপিএ আমলে দিনের পর দিন সংসদে বিরোধীদের হট্টগোলের বিষয়টি উঠে এসেছে সংসদীয় বিষয় নিয়ে গবেষণাকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চের পরিসংখ্যানেও, যা সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’-এর একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ইউপিএ দ্বিতীয় সরকারের সময়কার যে হিসেব তুলে ধরেছে তারা, তাতে দেখা গিয়েছে, ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য মনমোহন সিংহ জয়ী হওয়ার পর ৯৩ শতাংশ সময়ই বিনা বাধায় কাজ হয়েছিল লোকসভায়। কিন্তু ২০১৩ পর্যন্ত তা নামতে নামতে ৪৬ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। ১০২ শতাংশ থেকে ২০১৩ সালে রাজ্যসভায় নেমে আসে ৫৮ শতাংশে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

২০১৪ সালে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। ২০১৪ সালে লোকসভায় ৮৪ শতাংশ সময়ই বিনা বাধায় কাজ হয়েছে। ২০১৯ সালে সেই হার একধাক্কায় বেড়ে ১৩৫ শতাংশে ঠেকে। ২০২০ সালে ১৫৩ শতাংশ সময়ই বিনা বাধায় কাজ হয়েছে লোকসভায়। ২০১৪ থেকে রাজ্যসভার কাজকর্মও মসৃণ ভাবে এগোতে শুরু করে। ২০১৯ সালে ১০০ শতাংশ সময়ই বিনা বাধায় কাজ হয়েছিল রাজ্যসভায়। ২০২০-তে তা সামান্য কমে হয় ৯১ শতাংশ।

তাই বিরোধীদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে সংখ্যার জোরে সংসদে একের পর এক বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে মোদী সরকার। বিরোধীদের আলোচনার সময় পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এমনকি পেগাসাস নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যেও একের পর এক বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে কেন্দ্র। বিরোধীদের আপত্তি জানানোর সময় দেওয়া তো দূর, এক একটি বিল পিছু গড়ে মাত্র সাত মিনিট সময় খরচ করা হয়েছে, সংসদের ইতিহাসে যা কার্যত নজিরবিহীন।

বিরোধীদের হাঙ্গামায় সংসদ অচল থাকায় ১৩০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে সম্প্রতি জানায় কেন্দ্র। জনগণের টাকা এ ভাবে নষ্ট করায় তাঁদের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। তার জবাব দিতে গিয়ে মোদী সরকারের প্রয়াত দুই মন্ত্রী তথা সময়কার বিজেপি সাংসদ অরুণ জেটলি এবং সুষমা স্বরাজের মন্তব্যও টেনে এনেছেন অনেকে, যেখানে ২০১১ সালের ৩০ অগস্ট জেটলিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সংসদ সব কিছু নিয়ে আলোচনার জায়গা। কিন্তু অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এড়িয়ে যায় সংসদ। সেই পরিস্থিতিতে অধিবেশনে বাধা সৃষ্টি করা হয়, যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষে শুভ। সংসদে বিক্ষোভ দেখানো একেবারেই অগণতান্ত্রিক আচরণের মধ্যে পড়ে না।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

২০১২ সালের ২৬ অগস্টও একই মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল জেটলিকে। সে বার তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘সংসদে বিক্ষোভ হলে, তা দেশের পক্ষে মঙ্গলই। কারণ সরকার সংসদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে না, বিরোধী হিসেবে তা হতে দেওয়া যায় না। কোনও রকম আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে যেতে পারে না সরকার।’’ কয়লা খনির বরাত দেওয়া নিয়ে ২০১২ সালে বাদল অধিবেশন তদানীন্তন বিজেপি-র বিক্ষোভে যখন উত্তাল, সেই সময় ৭ সেপ্টেম্বর সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘‘সংসদ অচল করে রাখাও গণতন্ত্রেরই একটি রূপ।’’ সুষমা আরও বলেন, ‘‘সরকারের আসল রূপ সামনে আনতে সংসদ অচল করা ছিল উপায় ছিল না। তা ছাড়া, সংসদ সচল রাখা সরকারের দায়িত্ব, বিরোধীদের নয়।’’

তাই পেগাসস নিয়ে মোদী সরকার বিরোধীদের বিরুদ্ধে আঙুল তুললেও, বিরোধীরা জেটলি এবং সুষমার মন্তব্যকেই ঢাল করছেন। সংসদ অচল করায় মোদী বিরোধীদের আক্রমণ করলে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের ডেপুটি নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘আমাদের বাধাদানকারী বলে কটাক্ষ করা উচিত নয়। বিরোধীরা তাঁদের কর্তব্য করছেন। প্রধানমন্ত্রীই বরং অগণতান্ত্রিক আচরণ করছেন।’’ আনন্দের যুক্তি, কেন্দ্র পেগাসাস নিয়ে আলোচনা করলে, বিল পাশ করানোর সময় বিরোধীদের মতামতকে গুরুত্ব দিলে, এত হাঙ্গামাই হত না। তা না করে কেন্দ্র নিজের গা বাঁচাতে ব্যস্ত বলেই অভিযোগ করেছেন আনন্দ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy