Advertisement
E-Paper

‘মদীয়’ ভোটের রাজনীতি! বিহারে পাশ করেছিলেন নীতীশ, সেই সুরাস্রোতেই ভেসে গেল দু’টি সরকার

সাধারণত মদ থেকে যে হেতু বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আসে, তাই অনেক রাজ্যই এ ব্যাপারে নানা প্যাঁচ কষে বিষয়টি বজায় রাখে। বাংলায় বাম জমানায় ঢালাও মদের লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে সরব হতেন বিরোধীরা।

Liquor became one of the issues in the polls of three states within a decade

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪৬
Share
Save

রাজনীতিকদের সামনে কি এ বার ‘মদ হইতে সাবধান’ নিষেধাজ্ঞা ঝুলবে?

ভোট ‘কিনতে’ মদের ব্যবহারের অভিযোগ বাংলা তথা দেশের রাজনীতিতে নতুন নয়। কিন্তু মদ যে ভোটে অন্যতম মুখ্য বিষয় হতে পারে, তা দেখিয়েছিল ২০১৫ সালের বিহারের ভোট। মদ নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। ভোটে জিতে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষাও করেছিলেন তিনি। সেই সময়ে নানা বিশ্লেষণে উঠে এসেছিল, মদ নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নীতীশদের দিকে মহিলা সমর্থনকে জোটবদ্ধ করেছিল। ঠিক উল্টো ছবি দেখা গেল দিল্লিতে। অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি করে মদের লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। যে অভিযোগে কেজরীকে জেলও খাটতে হয়। দেখা গেল, মদের স্রোতে ভেসে গেল কেজরীর সরকার। যেমন হয়েছিল ২০২৩-এর ডিসেম্বরে। আবগারি দুর্নীতি মামলাই অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছিল তেলঙ্গানার ভোটে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সরকারের বিরুদ্ধে। কেসিআরের দলও মসনদ হারিয়েছিল দাক্ষিণাত্যে।

দিল্লির আবগারি দুর্নীতির জাল যে বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত, তা আদালতে বারংবার বলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কিন্তু কেজরীওয়াল বা তাঁর ‘ডেপুটি’ মণীশ সিসৌদিয়ার গ্রেফতারকে আপ দেখাতে চেয়েছিল ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ হিসাবে। সেই ‘রাজনৈতিক’ প্রচার যে দিল্লিবাসী মানেননি, তা ভোটের ফলে ‘মদবৎ তরলং’।

উল্লেখ্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেই কেজরীর রাজনীতিতে আগমন। অণ্ণা হাজারে যখন লোকপালের দাবিতে অনশন চালাচ্ছিলেন, তখন কেজরীই ছিলেন তাঁর প্রধান শিষ্য। পরে তিনিই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হন। অনেকের বক্তব্য, কেজরীওয়ালের যে ‘পরিচ্ছন্ন’ ভাবমূর্তি ছিল, আবগারি দুর্নীতির অভিযোগে তা ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে। কেজরীর হারের পর অণ্ণাও বলেছেন, ‘‘ওঁর নজর চলে গিয়েছিল মদের দিকে।’’

তেলঙ্গানার ভোটের আগে অবশ্য কেসিআরের দলের কোনও বড় নেতা গ্রেফতার হননি। কিন্তু ভোটের আগে থেকেই দিল্লিতে কেসিআর-কন্যা কে কবিতা রাওকে তলব করতে শুরু করেছিল ইডি। বার বার তলব এড়াচ্ছিলেন কবিতা। আর বিরোধীরা ক্রমাগত বলছিলেন, ‘মদ মে কুছ কালা’ না থাকলে এত ভয় কিসের?

আগেই কবিতা-ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছিলেন আবগারি দুর্নীতি মামলায়। ২০২৪ সালের মার্চে ওই মামলায় গ্রেফতার হন কবিতা নিজে। তার তিন মাস আগেই কেসিআর গদিচ্যুত হন তেলঙ্গানায়। পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য গড়ে তোলার অন্যতম নেতা ছিলেন কেসিআর। ফলে একটা সময় পর্যন্ত তেলঙ্গানার মানুষের আবেগ ছিল কেসিআরকে ঘিরে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা এবং দুর্নীতির ক্রমবর্ধমান অভিযোগ কেসিআরের পতন নিশ্চিত করে। গত কয়েক বছর ধরেই কেসিআরের বিরুদ্ধে নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। কিন্তু সে সব সামলে নিলেও ‘মদ’ সামলানো সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। প্রথম বারের জন্য তেলঙ্গানা দখল করে কংগ্রেস। প্রসঙ্গত, দিল্লির আবদারি দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে ইডি আদালতে একাধিক বার বলেছিল, ওই দুর্নীতিতে ‘দক্ষিণী লবি’ সক্রিয়। সেই লবিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা প্রায় সকলেই কেসিআরের দলের তহবিল ভরান বলে অভিযোগ ছিল বিজেপি এবং কংগ্রেসের।

সাধারণত মদ থেকে যে হেতু বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আসে, তাই অনেক রাজ্যই এ ব্যাপারে নানা প্যাঁচ কষে বিষয়টি বজায় রাখে। বাংলায় বাম জমানায় ঢালাও মদের লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে সরব হতেন বিরোধীরা। আবার তৃণমূল জমানায় বিরোধীদের বক্তব্য, ‘বাংলা মদের’ দেদার বিক্রি করে রাজ্য সরকার কোষাগার ভরাচ্ছে। অন্য দিকে বিপন্ন হচ্ছে যুব সম্প্রদায়। সেই প্রেক্ষিতে এক দশক আগে বিহারে নীতীশ যা করেছিলেন, তা সাহসী পদক্ষেপ বলেই মনে করা হয়। এখনও বিহার ‘ড্রাই স্টেট’। সম্প্রতিও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ বলেছেন, ‘‘কারও যদি মনে হয়, বিহারে মদ বিক্রি হয় না, তাই এটা খুব খারাপ একটা রাজ্য, তা হলে তাঁদের বলব, দয়া করে বিহারে আসবেন না।’’ বহু দিন ধরে মদ নিষিদ্ধ গুজরাতেও।

এক দশক আগে মদ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কুর্সি দিয়েছিল নীতীশকে। তার পরে একাধিক বার তিনি রাজনৈতিক ‘ডিগবাজি’ খেয়েছেন। কিন্তু ‘মদীয় রাজনীতি’ থেকে সরে আসেননি। ১০ বছর পর মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেই সুরাস্রোতই ভাসিয়ে নিয়ে গেল দুই রাজ্যের সরকারকে। প্রথমে তেলঙ্গানা। তার পরে দিল্লি।

Delhi Assembly Election 2025 Liqor Politics Delhi liquor policy case Arvind Kejriwal Nitish Kumar K Chandrashekar Rao

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}