(বাঁ দিকে ) জ়োরাবর। স্ট্রাইকার (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
লাদাখ উপত্যকার চিনা পিপল্স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র মোকাবিলার ভারতীয় সেনার হাতে জোড়া অস্ত্র তুলে দিতে উদ্যোগী হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক— দেশীয় প্রযুক্তিতে হালকা ট্যাঙ্ক জ়োরাবর এবং আমেরিকার থেকে আমদানি করা ‘আর্মড পার্সোনেল ভেহিকল্’ স্ট্রাইকার।
‘ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা’ (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন বা ডিআরডিও)-র তৈরি জ়োরাবরের এক দফা পরীক্ষা ইতিমধ্যেই হয়েছে পাহাড়ঘেরা লাদাখের শীতল মরুভূমিতে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে সম্প্রতি সেই ট্যাঙ্কের প্রথম ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্রের খবর, পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক। লাদাখের পাশাপাশি গুজরাতের হজ়িরায় ‘এল অ্যান্ড টি হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর সহযোগিতায় হয়েছে ‘ট্র্যাক ট্রায়াল’ (ট্যাঙ্ক বহনকারী ইস্পাতের চেনের সক্ষমতার পরীক্ষা)।
লাদাখে সম্ভাব্য চিনা হামলা ঠেকাতে হালকা ট্যাঙ্কের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল চার বছর আগেই। ২০২০-র অগস্টে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’র হামলায় ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পরে। সম্ভাব্য চিনা হামলার আশঙ্কায় দ্রুত ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায়’ (এলএসি) সেনা মোতায়েন করার সময় খামতি ধরা পড়ে হালকা ট্যাঙ্কের ক্ষেত্রে। ডিআরডিও-র তৈরি ‘অর্জুন’, রুশ টি-৯০ (ভীষ্ম), টি-৭২ (অজেয়) ওজনে ভারী হওয়ায় লাদাখের পাহাড়ি অঞ্চলে যুদ্ধের উপযুক্ত নয়।
সে সময় চিনা হালকা ট্যাঙ্ক জ়েডটিকিউ-১৫-র মোকাবিলায় ভারতীয় সেনাকে ভরসা করতে হয়েছিল আশির দশকে রাশিয়া থেকে আনা বিএমপি-২ ‘ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল্’ (সাঁজোয়া গাড়ি)-এর উপর। লাদাখে টানাপড়েনের সময়ই সেনার তরফে হালকা ট্যাঙ্কের আবেদন জানানো হয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে। প্রাথমিক ভাবে চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানির কথা ভাবা হলেও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ স্লোগান অনুসরণ করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিআরডিও-কে হালকা ট্যাঙ্ক নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের সহযোগী হয়েছে এল অ্যান্ড টি।
দু’বছরের মাথাতেই সেই প্রকল্পে প্রাথমিক সাফল্য পেলেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যাতায়াতে সক্ষম ‘জ়োরাবর’ হাতে পেলে ভারতীয় সেনার পক্ষে এলএসি-তে চিনা আগ্রাসনের মোকাবিলা অনেক সহজ হবে বলে সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন। গত জানুয়ারি মাসে লাদাখে জ়োরাবরের প্রথম পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। সে সময় ডিআরডিও-র তরফে জানানো হয়, লাদাখে যুদ্ধ মহড়ার পরীক্ষা চলবে আগামী চার মাস। তাতে উত্তীর্ণ হলে, পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যেই সেনার জন্য ‘জ়োরাবর’-কে প্রস্তুত করার কাজ শুরু হবে। সেই পালা শুরু হতে চলেছে এ বার।
অন্য দিকে, চার দশকের পুরনো রুশ বিএমপির বদলে স্ট্রাইকার সাঁজোয়া গাড়ি আমদানির উদ্যোগ গত বছর শুরু হয় বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সেনার অগ্রগতি রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এই সাঁজোয়া গাড়ি। বরফে ঢাকা অসমতল, পাহাড়ি এলাকায় স্ট্রাইকারের সচ্ছন্দ যাতায়াত নজর কেড়েছে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। একাধিক ক্ষেত্রে রুশ টি সিরিজ়ের ট্যাঙ্কের উপরেও সফল হামলা চালিয়ে ‘গোল দিয়েছে’ ইউক্রেন সেনার স্ট্রাইকার।
দ্রুত সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি স্ট্রাইকারের অস্ত্রভান্ডারে রয়েছে ৫০ মিলিমিটারের এম-২ ব্রাউনিং ভারী মেশিনগান, এমকে-১৯ গ্রেনেড লঞ্চার এবং এম-২৪০ মিডিয়ম মেশিনগান। যা পাহাড়ি অঞ্চলে যুদ্ধের ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে বলে অনুমান সামরিক বিশ্লেষকদের একাংশের। ‘দ্য প্রিন্ট’-এ প্রকাশিত খবর জানিয়েছে, লাদাখের পাশাপাশি রাজস্থানের মরুভূমির পাক সীমান্তেও স্ট্রাইকার মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে সেনার। এই উদ্দেশ্যে কেনা হতে পারে ৬৫০টি আমেরিকান ‘আর্মড পার্সোনেল ভেহিকল্’। শীঘ্রই তাদের কার্যকারিতা পরীক্ষা শুরু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy