দক্ষিণ-পশ্চিম চিনে লাল ফৌজের এই জীবনরেখাকে স্তব্ধ করে দিতে পারে ভারতের পারমা উপত্যকার বিমানঘাঁটি? —ফাইল চিত্র।
লাদাখে ভারতের প্রতিটা পদক্ষেপ এখন মাপা। কৌশলগত ভাবে চিন-পাকিস্তানকে আরও চাপে রাখা যাবে কোন উপায়ে— লাদাখে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রত্যেকটি প্রকল্পই এখন সে কথা মাথায় রেখে। শতাধিক ট্যাঙ্ক আর বিশাল বাহিনী মোতায়েন করে পূর্ব লাদাখকে দুর্ভেদ্য বানানোর কাজ ইতিমধ্যেই সারা। এ বার কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপত্যকায় পা রাখছে ভারতীয় বাহিনী। পারমা উপত্যকায় ‘অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড’ তৈরি হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য। এই বিমানঘাঁটির অবস্থান এমন একটি এলাকায়, যেখান থেকে চিনা সেনার লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে-কে যে কোনও সময় স্তব্ধ করে দেওয়া সম্ভব।
পারমা উপত্যকা কোথায় এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই উপত্যকা লাদাখে। খুবই দুর্গম এলাকা। পাঁচ দশকেরও বেশি আগে, যখন ভারত-চিন যুদ্ধ হয়েছিল, তখনও এই সব এলাকায় ঠিক মতো পৌঁছতেই পারত না ভারতীয় সেনা। গত পাঁচ বছরে লাদাখের চিন সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় পরিবহণ এবং সামরিক পরিকাঠামো দ্রুত বাড়ানো হয়েছে। তার সুবাদে পারমা উপত্যকাতেও এখন সহজে পৌঁছে যাচ্ছে ভারতীয় বাহিনী। সেই পারমাতেই এ বার ভারত ‘অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড’ বা সামরিক বিমানঘাঁটি তৈরি করছে। সেনার পদস্থ কর্তারা জানাচ্ছেন, পারমার অবস্থান এমন একটি জায়গায়, যেখান থেকে ভারত-চিন সীমান্ত অর্থাৎ লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) দেখা যায় না। অর্থাৎ পারমা বিমানঘাঁটিতে ভারত কী প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা চিনা ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখা যাবে না। কিন্তু চিনের জিনজিয়াং প্রদেশ এবং তিব্বতের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে-র নিরাপত্তা সঙ্কটে পড়ে যাবে। সীমান্তের গায়ে অবস্থান না হলেও, পারমা এমন এলাকায় অবস্থিত যে সেখান থেকে ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে পর্যন্ত উড়ে গিয়ে বোমা বর্ষণ করা ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলির পক্ষে খুব সহজ কাজ।
ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে চিনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
এই মহাসড়ককে দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের লাইফ লাইন বা জীবনরেখা বলা হয়। জিনজিয়াং এবং তিব্বতের মধ্যে সংযোগকারী মূল সড়ক এটি। লাদাখ সীমান্তে মোতায়েন চিনা বাহিনীর কাছে অস্ত্রশস্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠাতে হলে বা সীমান্তে আরও সেনা পাঠাতে হলে ওই সড়কই মূল ভরসা। তাই ওই সড়ক কোনও কারণে বন্ধ হয়ে গেলে, লাদাখ সীমান্তে মোতায়েন চিনা বাহিনীর সাপ্লাই লাইন কেটে যাবে।
এই রাস্তা ভারতের জন্য বিপজ্জনক কেন?
আরও একটি কারণে চিনের এই সড়ক কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তান এবং চিন যৌথ ভাবে যে কারাকোরাম হাইওয়ে বানিয়েছে, সেই সড়কও সিয়াচেনের বেশ কিছুটা উত্তরে মিলছে চিনের ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে-র সঙ্গে। পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এই দুই রাস্তাকে ব্যবহার করে চিন-পাকিস্তান যৌথ ভাবে হামলা চালাতে পারে ভারতের বিরুদ্ধে। তাই ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে এবং কারাকোরাম হাইওয়ে ভারতকে যথেষ্ট চাপে রেখেছিল। কাশ্মীর এবং লাদাখের যতটা অংশ ভারতের দখলে রয়েছে, সেখানে পরিবহণ ব্যবস্থা দীর্ঘ দিন ধরেই দুর্বল থাকায়, ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে আর কারাকোরাম হাইওয়ে ভারতীয় সেনার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ চিন-পাকিস্তান কখনও যৌথ অভিযান চালালে, লাদাখ এবং কাশ্মীর উপত্যকার বিরাট অংশকে খুব সহজে তাদের পক্ষে ঘিরে ফেলা সম্ভব এই দুই রাস্তাকে ব্যবহার করে। ভারত তার জবাবে কত দ্রুত সশস্ত্র বাহিনীকে সেখানে পাঠাতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল।
এখন কী পরিস্থিতি?
গত পাঁচ বছরে লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় সামরিক ও পরিবহণ পরিকাঠামো অনেকটা বাড়িয়েছে ভারত। ফলে লাদাখের দুর্গম এলাকাতেও সহজে পৌঁছে যাচ্ছে ভারতীয় সেনা। মোতায়েন রয়েছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র। এলএসি-র খুব কাছে ফুক চে, নিয়োমা এবং দৌলত বেগ ওলদি-তে ভারত বিমানঘাঁটিও তৈরি করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। ফলে লাদাখ এখন অনেক বেশি সুরক্ষিত।
পারমা বিমানঘাঁটি চিন-পাকিস্তানকে কী ভাবে সমস্যায় ফেলবে?
ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে এবং তার সঙ্গে জুড়ে থাকা কারাকোরাম হাইওয়েকে সম্পূর্ণ অকেজো করে দিতে পারবে পারমা বিমনঘাঁটি। চিনা সেনার লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ওয়েস্টার্ন হাইওয়ের খুব কাছেই পারমা। ফলে প্রথমত, ওই রাস্তা দিয়ে চিনা ও পাকিস্তানি সেনার যাতায়াত রুখে দেওয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, সীমান্তে মোতায়েন চিনা সেনার সাপ্লাই লাইনও কেটে দেওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ চিন সাগরে ফের মহড়ায় লাল ফৌজ, কিন্তু বিতর্কিত এলাকা এড়িয়ে
পারমায় ভারত অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড তৈরি করছে জেনেই, ঘোর অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে বেজিং। কিন্তু, ভারত নিজের এলাকায় নতুন উপত্যকা খুঁজে নিয়ে এই বিমানঘাঁটি গড়ছে বলে চিন আপত্তিও করতে পারছে না। ভারতীয় এলাকা আকসাই চিনকে নিজেদের দখলে নিয়ে, তার মধ্যে দিয়েই ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে বানিয়েছিল চিন। ভারতের আপত্তিকে তারা পাত্তাই দেয়নি। এ বার সেই সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে বেজিং চিন্তায় পড়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy