আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। ছবি সংগৃহীত।
যত দোষ, সবই জওহরলাল নেহরুর!
বেছে বেছে একের পর এক সন্ত্রাসবাদী হামলার জেরে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা কাশ্মীর উপত্যকা ছাড়তে শুরু করেছেন। শোপিয়ানে যে সব পরিবার নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপরে হামলার পরেও ভিটেমাটি ছাড়েননি, তাঁরাও এখন উপত্যকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এ নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে আজ মোদী সরকারের আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু জওহরলাল নেহরুকেই কাশ্মীরের যাবতীয় সমস্যার জন্য দায়ী করলেন।
কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশা নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আজ মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন। রাহুল বলেছেন, ‘‘এই বছরেই কাশ্মীরে বেছে বেছে ৩০ জনকে খুন করা হয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়েছে। ইউপিএ সরকারের ভাল কাজগুলি নষ্ট করে দিয়েছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী মোদী ক্ষমতায় আসার আগে বড় বড় কথা বলতেন। কিন্তু তিনি এখন ক্ষমতা ভোগ করছেন আর কাশ্মীরি পণ্ডিতরা নিজেদেরই দেশে শরণার্থী হয়ে রয়েছেন।’’ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিষয় নিয়ে কংগ্রেস আজ মোদী সরকারের কাছে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলেছে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। ফারুকের আশঙ্কা, অবিলম্বে পদক্ষেপ করা না হলে কাশ্মীর ১০০ শতাংশ হিন্দু-মুক্ত হয়ে যাবে। তাঁর মতে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জন্য ১৯৯০-এর মতো পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। এ বিষয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকারও দাবি তুলেছেন তিনি।
আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে দাবি করেছেন, ২০১৯-এর ৫ অগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার পরে কাশ্মীরে শান্তি ও উন্নতির নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। ২০১৯-এর ৫ অগস্টের আগের ৩৭ মাস ও পরের ৩৭ মাসের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যাবে, সন্ত্রাসবাদী হামলা ৩৪ শতাংশ কমেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের মৃত্যুর সংখ্যাও ৫৪ শতাংশ কমেছে। আইনমন্ত্রী রিজিজুর দাবি, কাশ্মীরের সমস্যাটাই নেহরুর তৈরি। তাঁর পাঁচটি ভুলের জন্যই কাশ্মীরের সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যার জেরে অগণিত মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সব ভুল শোধরাচ্ছেন।
কংগ্রেস আজ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে, মোদী সরকারের ৭০ জন মন্ত্রী কাশ্মীরে জনসংযোগ ও প্রচারে গিয়েছেন। তাঁদের কেউ কি কাশ্মীরি পণ্ডিতদের শিবিরে গিয়েছেন? কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরার অভিযোগ, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৩০ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতরা প্রাণের ভয়ে নিজেদের এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সরকারি কর্মীদের ফিরে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মোদী সরকার গত আট বছরে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জন্য কী করেছে, কী করেনি, তা জানিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবি তুলেছেন তিনি।
গত ১৫ অক্টোবর শোপিয়ানে সন্ত্রাসবাদী হামলায় কাশ্মীরি পণ্ডিত পূরণ কৃষ্ণ ভাট নিহত হন। ১৮ অক্টোবর গ্রেনেড হামলায় শোপিয়ানেই মণীশ কুমার ও রাম সাগর প্রাণ হারান। লাগাতার হামলার জেরেই কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ঘর ছাড়তে শুরু করেছেন। যদিও জেলা প্রশাসন তা অস্বীকার করেছে।
আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পরে হিংসা কমেছে বলে দাবি করলেও পবন খেরার প্রশ্ন, ‘‘সরকারকে ৩০ জনের হত্যার ব্যাখ্যা দিতে হবে। কীভাবে এটা স্বাভাবিক হতে পারে?” নেহরুকে কাশ্মীরের সমস্যার জন্য দায়ী করার জবাবে খেরা বলেন, ‘‘বিজেপি নেতারা হোয়াটসঅ্যাপ নার্সারির ছাত্র। তাঁদের ফের ইতিহাস পড়া দরকার। কখনও নেহরু, কখনও ইন্দিরা গান্ধী, কখনও পি ভি নরসিংহ রাও বা মনমোহন সিংহ, এক-একটা বিষয়ের জন্য এক-একজনকে দায়ী করাটা সহজ। কিন্তু মোদী সরকার তো আট বছর ক্ষমতায় রয়েছে। মনমোহন সিংহের সময় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিশানা করে হত্যা করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ৭৫ শতাংশ মানুষ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এখন মোদী সরকার কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জন্য কী করেছে? কেন তাঁদের সুরক্ষা দিতে পারছে না? কেন নির্বাচন করাতে পারছে না?” খেরা বলেন, ১৯৮৯-এ বিজেপি সমর্থিত ভি পি সিংহ সরকারের সময় প্রথম কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘর ছাড়তে হয়েছিল। এখন বিজেপির আমলে ফের তাঁদের ঘর ছাড়তে হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy