Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

নবীনদের ইস্তফা, প্রবীণেরা চাপে, রাহুলের দলে কামরাজ-দুই!

এটা যেন ঠিক ‘কামরাজ প্ল্যান’-এর দ্বিতীয় পর্ব। ১৯৬৩ সালে কুমারস্বামী কামরাজ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে প্রস্তাব দেন, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে কংগ্রেসের সব প্রবীণ নেতার দলের কাজ করা উচিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০২:০৯
Share: Save:

রাহুল গাঁধীর ‘মন’ বুঝে কংগ্রেসে আক্ষরিক অর্থেই শুরু হল দ্বিতীয় ‘কামরাজ প্ল্যান’। দলের শ’দেড়েক পদাধিকারী ইস্তফার চিঠি পাঠিয়ে দিলেন কংগ্রেস সভাপতির কাছে। তবে এ কাজে আপাতত এগিয়ে নবীনেরাই। তাঁদের স্পষ্ট কথা, ভোটে হারের দায় নিয়ে প্রবীণেরাও ইস্তফা না-দিলে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে তা আদায় করবেন।

এটা যেন ঠিক ‘কামরাজ প্ল্যান’-এর দ্বিতীয় পর্ব। ১৯৬৩ সালে কুমারস্বামী কামরাজ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে প্রস্তাব দেন, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে কংগ্রেসের সব প্রবীণ নেতার দলের কাজ করা উচিত। কারণ কংগ্রেস জিতলেও মানুষের সঙ্গে যোগ হারিয়ে ফেলছেন নেতারা। নেহরু নিজেই সরে যেতে চেয়েছিলেন। কামরাজ রাজি হননি। তবে লালবাহাদুর শাস্ত্রী, মোরারজি দেশাই, জগজীবন রামের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ কামরাজ, বিজু পট্টনায়েকের মতো ৬ জন মুখ্যমন্ত্রীও পদত্যাগ করেন।

লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর সভাপতি পদে আর থাকবেন না বলে নিজেই জানিয়েছেন রাহুল। প্রথম দিকে দলের প্রবীণেরা এর পর একসঙ্গে ইস্তফা দেওয়ার ‘ইচ্ছা প্রকাশ করলেও কাজে তা করেননি। এক মাসেও হারের দায় নিয়ে কেউ পদ না-ছাড়ায়, দু’দিন আগে দলের কিছু যুব নেতার কাছে ‘মনের কথা’ জানান রাহুল। আক্ষেপ করেন, তাঁর ইস্তফার পরেও দলের কোনও রাজ্য সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, মুখ্যমন্ত্রী তো পদত্যাগ করলেন না! রাহুলের ‘মনের কথা’ বুঝে কাল রাতেই প্রথম ইস্তফাটি আসে দলের আইন বিভাগের প্রধান বিবেক তনখার থেকে। রাত গড়াতে শুরু হয় ইস্তফার হিড়িক।

দিল্লির কার্যকরী সভাপতি রাজেশ লিলোথিয়া, হরিয়ানা মহিলা কংগ্রেস প্রধান সুমিত্রা চৌহান, এআইসিসি সচিব অনিল চৌধুরী, বীরেন্দ্র রাঠৌর, বিদেশ বিভাগের সচিব বীরেন্দ্র বশিষ্ঠের মতো প্রায় দেড়শো জন পদত্যাগ করেন। তাঁদের বক্তব্য, রাহুল গাঁধীর সম্মানেই ইস্তফা দিচ্ছেন। নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দেশ ও দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন রাহুল। তিনি হারের দায়িত্ব নিয়ে ইস্তফা দিতে পারলে বাকিরা নন কেন? যুব কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা আজ এআইসিসি দফতরে ফের জড়ো হয়ে গণ-ইস্তফার সিদ্ধান্ত নেন। বিকেল গড়াতে মধ্যপ্রদেশের দায়িত্বে থাকা সাধারণ সম্পাদক দীপক বাবারিয়া, গোয়ার সভাপতিও ইস্তফা দেন। দিল্লিতে শীলা দীক্ষিতও ভেঙে দিয়েছেন ২৮০ ব্লক সমিতি।

নবীন নেতারা বলছেন, ‘‘এত দিন পর্দার আড়ালে থেকে যাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন, সেই প্রবীণ নেতারা কেন ইস্তফা দিচ্ছেন না? তিন দিনের মধ্যে তাঁরাও পদত্যাগ না-করলে, বাড়ি গিয়ে পদত্যাগ আদায় করা হবে।’’

গত কালই হরিয়ানার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে গুলাম নবি আজাদ হারের কারণ সম্বলিত একটি রিপোর্ট রাহুলের হাতে তুলে দেন। আজাদ হরিয়ানার ভোটের দায়িত্বে ছিলেন। ক্ষুব্ধ রাহুল বলেন, ‘‘আমাকে দিয়ে কী হবে? আপনিই তো যেখানে প্রচার করতে বলেছেন, সেখানে গিয়েছি।’’ রাহুলের ক্ষোভ সামাল দিতে আহমেদ পটেল বলেন, ‘‘ও সব ছেড়ে দিন। ভবিষ্যতের কথা ভাবি।’’

প্রবীণরা এ বার কী করেন সেটা দেখার। কিন্তু রাহুল কি ইস্তফার সিদ্ধান্ত থেকে সরবেন? এমন আশা দেখছেন না প্রবীণ নেতা বীরাপ্পা মইলি। তাঁর কথায়, ‘‘কর্ম সমিতিতেই পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’

নবীনদের যদিও ধারণা, দলের খোলনলচে বদলানোর খোলা হাত পেলে রাহুল ফের নেতৃত্ব দেবেন। আজ তিনি দিল্লির নেতাদের সঙ্গে নিজের বাড়িতে বৈঠক করেছেন। আর এ দিনই ছত্তীসগঢ়ে মোহন মারকামকে রাজ্য সভাপতি নিয়োগ করেছেন। তাঁর ইস্তফা ঘোষণার পর আজই প্রথম দলের কোনও নির্দেশ রাহুলের নামে জারি হল। গত ক’দিন যা হচ্ছিল এআইসিসির নামে।

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Congress Lok Sabha Election 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy