ভেলিয়ারি নদীতে মৃত্যু হওয়া সেই গর্ভবতী হাতি। ছবি-পিটিআই।
বাজি ভর্তি আনারস খেয়ে হাতির মৃত্যুর ঘটনায় গত কয়েক দিন ধরে তোলপাড় সারা দেশ। সেই ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে জানাল কেরল সরকার। এই ঘটনার তদন্ত করতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।
আনারসের ভিতর বাজি ভরে দিয়েছিল কিছু অবিবেচক নিষ্ঠুর মানুষ। তা খেয়ে গত সপ্তাহে কেরলে মৃত্যু হয়েছিল একটি গর্ভবতী হাতির। নৃশংস এই ঘটনার কথা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সামনে আসতে হইচই পড়ে যায় দেশ জুড়ে। চারিদিকে ওঠে নিন্দার ঝড়। রাজনীতিক থেকে ব্যবসায়ী, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব থেকে সাধারণ মানুষ— সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ বিষয়টি নিয়ে গত দু’দিন ধরে সরব হয়েছেন। তার পরই হাতির মৃত্যুর তদন্ত ও এর সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানাল কেরলের প্রশাসন। তিন জন সন্দেহভাজনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু করা হয়েছে তদন্ত। একজনকে আটকও করা হয়েছে। বনবিভাগের কর্মীরা তাঁকে নিজেদের হেপাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন। যদিও ওই ব্যক্তির পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
কেরলের মমল্লপ্পুরমে হাতির মৃত্যুর ঘটনার উপর নজর রাখছে কেন্দ্রও। কেরলের কাছে বিষয়টি নিয়ে নোটও চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বিষয়টি নিয়ে টুইট করেছেন। ঘটনার নিন্দা করে তিনি বলেছেন, ‘‘বাজি দিয়ে প্রাণী হত্যা করা ভারতীয় সংস্কৃতি নয়।’’ ঘটনার তদন্ত হবে ও অপরাধীদের রেহাই পেতে দেবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
Central Government has taken a very serious note of the killing of an elephant in Mallapuram, #Kerala. We will not leave any stone unturned to investigate properly and nab the culprit(s). This is not an Indian culture to feed fire crackers and kill.@moefcc @PIB_India @PIBHindi
— Prakash Javadekar (@PrakashJavdekar) June 4, 2020
বন্যপ্রাণ অপরাধ তদন্তকারী দল হাতি মৃত্যুর তদন্ত করবে বলে জানানো হয়েছে কেরল সরকারের তরফে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কেরলের মুখ্য বন্যপ্রাণ ওয়ার্ডেন সুরেন্দ্র কুমার জানিয়েছেন, হাতির মৃত্যুকে ‘ইচ্ছাকৃত হত্যা’ হিসাবে দেখা হবে। তদন্তের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘‘হাতিকে হত্যার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয়েছে এই কাজ। আমাদের দফতর বিষয়টিকে এ ভাবেই দেখছে। অজ্ঞাতপরিচয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা দায়ের করেছি। তদন্তও শুরু হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই অপরাধীরা গ্রেফতার হবে।’’ কেরলের বন্যপ্রাণ দফতরের প্রধান হিসাবে গোটা বিভাগের তরফে দু:খপ্রকাশও করেছেন তিনি।
বাজি ভরা ফল খেয়ে হাতির মৃত্যু দেখে স্তম্ভিত হয়েছেন ভারতীয় শিল্পপতি রতন টাটাও। এই ঘটনাকে তিনি ‘পরিকল্পিত হত্যা’ বলেও চিহ্নিত করেছেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘এক দল লোকের হাতে বাজি ভর্তি আনারস খেয়ে নিরীহ গর্ভবতীর হাতির মৃত্যুতে আমি শোকাহত। মানুষকে পরিকল্পনা করে হত্যার অপরাধের সঙ্গে এই অপরাধের কোনও ফারাক নেই।’’
— Ratan N. Tata (@RNTata2000) June 3, 2020
আরও পড়ুন: সংক্রমণে ফের নয়া নজির! ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ৯৩০৪ জন
মৃত গর্ভবতী হাতিটি সাইলেন্ট ভ্যালি জাতীয় উদ্যানে থাকত। সেখান থেকে মল্লপ্পুরমের গ্রামে এসেছিল খাবারের খোঁজে। সেখানেই মানুষের দেওয়া বাজি ভর্তি আনারস তার মুখে ফাটে। প্রবল যন্ত্রণা সহ্য করে গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে ভেলিয়ার নদীর জলে নেমে দাঁড়িয়েছিল। গত ২৭ মে মৃত্যু হয় তাঁর। বনবিভাগের র্যাপিড রেসপন্স দলের অফিসার মোহন কৃষ্ণণের ফেসবুক পোস্ট মারফত গোটা ঘটনা সামনে আসে। চোয়ালে আঘাত নিয়ে গত এপ্রিলে আরও একটি হাতির মৃত্যু হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কেরলের বন্যপ্রাণ ওয়ার্ডেনের প্রধান সুরেন্দ্র কুমার। তিনি জানিয়েছেন, এই মৃত্যুর সঙ্গে সেই হাতির মৃত্যুর বেশ মিল রয়েছে। ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘‘দু’টি মৃত্যুই একই রকম। দু’জনেরই মুখে ক্ষত। এপ্রিলে সেই হাতির মৃত্যুর কারণ জানতে ফের রাসায়নিক পরীক্ষা করা হবে।’’
তবে বন্যপ্রাণী মূলত বন্য শূকরের অত্যাচার থেকে ফসল বাঁচাতে ফলের ভিতর ছোট ছোট পটকা ভরে রাখে সেখানকার কৃষকরা। যাতে ফাটলেই ভয় পেয়ে চলে যায়। সুরেন্দ্র কুমার বিষয়টি নিয়ে বলেছেন, ‘‘ফসল বাঁচাতে ফল বা খাবারে সঙ্গে কিছু পটকা বেঁধে রাখে কিছু কৃষক। কিন্তু তা খুবই স্বল্প ক্ষমতার ছোট পটকা। সেই পটকায় এত বড় হাতির মৃত্যু হওয়া সম্ভব নয়।’’
আরও পড়ুন: অতিমারিতে থমকে যাওয়া শাহিন বাগ ফের জাগছে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy