রামনাথ কোবিন্দ। ফাইল চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা ঘিরে রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের টানাপড়েন ফের নতুন মাত্রা পেল কেরলে। দেশের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে সাম্মানিক ডি লিট দেওয়ার জন্য রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের সুপারিশ রাজ্য সরকারের কথায় অগ্রাহ্য করা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নেই বেধেছে বিতর্ক। সরব হয়েছে বিরোধীরা। রাজ্য সরকার অবশ্য এমন দাবি অস্বীকার করেছে।
সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের সাম্প্রতিক চার দিনের রাজ্য সফরের আগে কেরল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রাজভবনে ডেকেছিলেন রাজ্যপাল। সেখানেই তিনি রাষ্ট্রপতিকে সাম্মানিক ডি লিট দেওয়ার সুপারিশের চিঠি উপাচার্যের হাতে তুলে দেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তেমন কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেনি। বিতর্ক সেখান থেকেই। শাসক দল সিপিএম এবং বিরোধী কংগ্রেস ও বিজেপি অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে সাম্মানিক ডি লিট দেওয়ায় তাদের নীতিগত আপত্তি নেই। কিন্তু রাষ্ট্রপতির জন্য রাজ্যপালের সুপারিশ করা এবং তা মানা ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে, বেধেছে বিতর্কও।
কেরলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিয়োগ সংক্রান্ত নানা বিষয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলছে বলে অভিযোগ করে আচার্য পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল আরিফ। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে চিঠি লিখে সম্প্রতি তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীকেই আচার্য করে দেওয়া হোক! তার জন্য অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) আনা হলে তিনি সই করে দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই সংঘাতের রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার রাজ্যপাল আরিফের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘কেরলের রাজ্য সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত দেশের সম্মানে আঘাত করেছে।’’
রাজ্যপাল বিশদে কিছু না বললেও রাজ্যের প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের রমেশ চেন্নিথালা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি কোবিন্দকে কেরল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি লিট দেওয়ার জন্য আচার্যের সুপারিশ কি রাজ্য সরকারের আপত্তিতে খারিজ করা হয়েছে? এটাও কি সত্যি যে, আচার্যের সুপারিশ পাওয়ার পরে উপাচার্য কি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে আলোচনার বদলে রাজ্য সরকারের পরামর্শ নিয়েছিলেন? রাষ্ট্রপতিকে সাম্মানিক উপাধি দিতে কীসের আপত্তি?’’
আরও এক ধাপ এগিয়ে বিজেপির কেরল রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনের অভিযোগ, ‘‘এই ঘটনা কেরলের পক্ষে লজ্জাজনক। দেশের রাষ্ট্রপতির অবমাননা হচ্ছে রাজ্য সরকারের কাজকর্মে। সরকারের ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত, কেন তারা রাষ্ট্রপতিকে সম্মান দেওয়ার সিদ্ধান্তে আপত্তি করেছে।’’
রাজ্যের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী আর বিন্দু অবশ্য জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার ডি লিট সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও আপত্তিই তোলেনি। তাঁর বক্তব্য, স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরাই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। রাজ্য হস্তক্ষেপ করে না, আর রাজ্যপালের কোনও সুপারিশ সরকারের কাছে আসেওনি।
বাকি বিরোধীরা হইচই করলেও বর্তমান বিরোধী দলনেতা ভি ডি সতীশনের সুর অবশ্য ভিন্ন। তাঁর মতে, আচার্য হিসেবে রাজ্যপাল যদি উপাচার্যের কাছে ডি লিটের জন্য কোনও সুপারিশ করে থাকেন, তা হলে সেটা তাঁর পদের ‘অপব্যবহার’। বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে মূল বিতর্ক থেকে নজর সরাতে এই বিষয়টা সামনে আনা হচ্ছে।
অতীতে রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণনকে ডি লিট দিয়েছিল কেরল বিশ্ববিদ্যালয়। এখন বিরোধীদের তোপের জবাবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘‘যদি আমাদের দলের কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, তা হলে বলব, রাষ্ট্রপতির জন্য সাম্মানিক ডি লিটে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এটা তো দলের বিষয় নয়। দলের কাছে বিষয়টা আসেইনি! রাজ্য সরকারও তা-ই জানিয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy