কমলেশ তিওয়ারি (বাঁ দিকে)। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া সেই দুই ব্যক্তি।
হিন্দু মহাসভার প্রাক্তন নেতা কমলেশ তিওয়ারি খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে তিন জনকে এ দিন সকালে গুজরাত থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সুরাত ও আমদাবাদের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। অন্য দিকে, এই ঘটনায় দুই মৌলবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর থেকে।
গুজরাত থেকে যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হল—রশিদ আহমেদ পাঠান, ফৌজান পাঠান এবং মৌলবী মহসিন শেখ। পুলিশের অনুমান এই রশিদই কমলেশ খুনের মূল চক্রী। পুলিশ জানিয়েছে, কমলেশের বাড়িতে যে মিষ্টির বাক্স নিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা, সেই বাক্স কিনেছিল ফৈয়াজ।
শুক্রবার দুপুরে লখনউয়ে খুরশিদ বাগে নিজের বাড়িতে খুন হন হিন্দু মহসভার প্রাক্তন নেতা কমলেশ। তাঁকে কুপিয়ে, গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। কমলেশের খুনের পর থেকেই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে পুলিশ-প্রশাসনের উপর ক্রমশ চাপ বাড়তে থাকে। তদন্তের নেমে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নেপথ্যে বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজি ওপি সিংহ বলেন, “আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের ধরব। গ্রেফতারও করেছি তাদের।” কী ভাবে এত তাড়াতাড়ি অভিযুক্তদের ধরা সম্ভব হল? এ প্রসঙ্গে সিংহ জানান, ছোট ছোট দল তৈরি করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তদন্ত শুরু হয়। তবে প্রথম থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল এই খুনের যোগসূত্র রয়েছে গুজরাতেই। এমনটাই জানিয়েছেন ডিজি। কমলেশের বাড়িতে পাওয়া মিষ্টির বাক্স থেকে বেশ কয়েকটি সূত্র উঠে আসে। সেই সূত্র ধরেই গুজরাতের একটি মিষ্টির দোকানের খোঁজ পায় পুলিশ। যোগাযোগ করা হয় সে রাজ্যের ডিজির সঙ্গে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ একটি দলও পাঠায় সেখানে। তদন্তে নেমে সুরাত ও আমদাবাদ থেকে এ দিন প্রথমে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কমলেশ তিওয়ারির শোকস্তব্ধ পরিবার। ছবি সৌজন্য টুইটার।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, কমলেশকে যারা গুলি করেছিল, সেই দুই শুটারকেও চিহ্নিত করা গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ফুটে়জে দু’জন পুরুষ এবং এক জন মহিলাকে দেখা গিয়েছে। তবে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া ওই দুই ব্যক্তিকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে কমলেশের বাড়িতে দুষ্কৃতীদের পৌঁছে দিতে এবং সেখান থেকে তাদের সুরক্ষিত অবস্থায় বেরিয়ে যেতে সাহায্য করেছে স্থানীয় কোনও বাসিন্দাই। পুলিশের হাতে যে সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে তাতে দেখা গিয়েছে, ঘটনার কিছু ক্ষণ আগে দুই ব্যক্তি কমলেশের বাড়িতে ঢোকে।
আরও পড়ুন: অভিজিতকে নোবেল কটাক্ষ মোদীর মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের
আরও পড়ুন: জিয়াগঞ্জে নিহতের স্বজনদের আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর
এই খুনের পিছনে মহম্মদ মুফতি নইম এবং আনওয়ারউল হক নামে বিজনৌরের দুই মৌলবীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন কমলেশের স্ত্রী কিরণ তিওয়ারি। তাঁর অভিযোগ, ২০১৬-য় কমলেশকে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন ওই দুই মৌলবী। কিরণের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এ দিন তাঁদের দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি ওপি সিংহ জানান, ‘দুষ্কৃতীমূলক’ বিষয়ই এই খুনের কারণ, এটা স্পষ্ট। এর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী হামলার কোনও যোগ নেই বলেই জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
অন্য দিকে, ময়নাতদন্তের জন্য শুক্রবারই সীতাপুর জেলার মাহমুদাবাদে পাঠানো হয় কমলেশের দেহ। এই মাহমুদাবাদই কমলেশের জন্মস্থান। শনিবার তাঁর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যদিও কমলেশের পরিবার তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অস্বীকার করে। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে দেখা করতে হবে এবং পরিবারের এক জনকে চাকরি দিতে হবে। এই দাবি পূরণ না করা হলে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতির হুমকিও দিয়েছেন কমলেশের স্ত্রী কিরণ তিওয়ারি।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, কমলেশকে ১৩ বার কোপানো হয়েছে। তাঁর ঘাড়ের কাছে অদ্ভুত একটা ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের এক সূত্রের খবর, কাউকে খুনের সময় জঙ্গিরা যে ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে, কমলেশের ঘাড়ে পাওয়া ক্ষতের সঙ্গে সেটার অনেকটাই মিল রয়েছে। ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, কমলেশের মুখের ভিতরে গুলি করা হয়। সেই গুলি তাঁর পিঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy