ওমপ্রকাশ সাইনি
কর্মজীবন শুরু করেছিলেন দিল্লি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে। ছ’বছর পুলিশে চাকরি করার পরে সরকারি পরীক্ষায় বসে বিচারবিভাগে চাকরি পান। সে বছর মাত্র একজনই ওই পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন। বিচারক ওমপ্রকাশ সাইনি।
টু-জি স্পেকট্রাম রায়ে এ রাজা-কানিমোঝি-সহ সব অভিযুক্তকে রেহাই দিয়ে বিশেষ আদালতের বিচারক সাইনি এখন দেশের নজরে।
সকলেই জানতে চান, কে এই ব্যক্তি, যিনি নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমানাতেও মনমোহন-সরকারের দুর্নীতি খারিজ করে দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেন?
দিল্লির আইনজীবীরা বলেন, ওমপ্রকাশ সাইনি এক কথায় ‘নো-ননসেন্স’ বিচারক। যাঁর কাছে আইনি প্রমাণই শেষ কথা। তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলা মুশকিল। রাজনৈতিক নিরপেক্ষতাও প্রশ্নাতীত। মিষ্টভাষী, কিন্তু কড়া। এজলাসে কোনও রকম হট্টগোল সহ্য করেন না।
টু-জি মামলার এক অন্যতম আইনজীবীর মতে, ‘‘এই দুর্নীতির অভিযোগে যে ভাবে রাজনৈতিক তোলপাড় হয়েছে, কেন্দ্রে পালাবদল ঘটেছে, তার পরেও স্রোতের বিপরীতে হেঁটে, আইনি তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে একেবারে উল্টো রায় দিতে গেলে যথেষ্ট সাহস দরকার।’’ সেই সাহসের জন্যই টু-জি রায়ের পরে বিচারক সাইনিকে আইনজীবীদের অনেকে কুর্নিশ ঠুকছেন।
টু-জি শুনানির সময় অভিযুক্তদের সম্পর্কে কোনও নরম মনোভাব দেখাননি বিচারক সাইনি। কানিমোঝি অন্য আদালত থেকে জামিন আদায় করেছিলেন। সেই জামিন খারিজ করে দেন তিনি। কানিমোঝির মা তথা করুণানিধির স্ত্রী, দয়ালু আম্মাল বয়সের কারণে আদালতে হাজিরা দেওয়া থেকে রেহাই চেয়েছিলেন। তাঁকে রেয়াত করেননি সাইনি।
টু-জি মামলার রায়ে বিচারক সাইনি লিখেছেন, সাত বছর তিনি সারা দিন আদালতে বসে থেকেছেন, যদি কেউ উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে উপস্থিত হন। কেউই আসেননি। যা পড়ে অনেকেরই ‘জলি এলএলবি’ ছবির সৌরভ শুক্ল অভিনীত বিচারকের কথা মনে পড়ে গিয়েছে। তিনিও বলেছিলেন, টেবিলে ফাইলের পর ফাইল জমা হয়। কিন্তু এক পৃষ্ঠাও এমন নথি মেলে না, যা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে ধরা যায়।
আদতে হরিয়ানার মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান বিচারক সাইনি এর আগেও সাহসী রায় শুনিয়েছেন। ২০০০ সালে লালকেল্লায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিচারক সাইনি-ই পাকিস্তানি লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি মহম্মদ আরিফ ওরফে আশফাককে ফাঁসির আদেশ দেন। তখন তিনি অতিরিক্ত নগর দায়রা আদালতের বিচারক। আরও দুই অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েই ছাড়েননি। আশফাকের ভারতীয় স্ত্রী রেহমানাকে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য সাত বছরের কারাদণ্ডের শাস্তিও দিয়েছিলেন। টু-জি-র আগে কমলওয়েল্থ গেমস দুর্নীতির মামলায় সুরেশ কলমডীর তিন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে জেলে পাঠিয়েছিলেন তিনিই।
বিভিন্ন মামলায় একের পর এক কড়া সাজার জন্যই বিচারক সাইনি এখন ‘ওয়াই-ক্যাটেগরি’-র নিরাপত্তা পান। নিম্ন আদালতের বিচারকদের মধ্যে যা সে ভাবে দেখা যায় না।
৫৮ বছর বয়সী এই বিচারকের টু-জি রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিবিআই ও ইডি। অনেকেরই প্রশ্ন, সেই মামলা কি ধোপে টিকবে? সময়ই তার উত্তর দেবে। কিন্তু মামলার এক আইনজীবী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘স্পেকট্রাম বণ্টনের যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় এই বিচারকের নখদর্পণে ছিল। তাঁর লেখা রায়ে ছিদ্র খোঁজা খুব সহজ হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy