প্রতীকী চিত্র।
আপনি জন্মদিনে বন্ধুকে মোবাইল উপহার দেবেন বা দার্জিলিঙে বেড়াতে যাবেন ভেবে গুগলে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করলেন। কিছু ক্ষণ পরে ফেসবুক খুলে দেখলেন, আপনার ফেসবুকের ওয়ালে নানা রকম মোবাইল আর দার্জিলিঙের হোটেলের বিজ্ঞাপন আসছে। নতুন মোবাইল কেনা বা পরিবারকে নিয়ে দার্জিলিঙে বেড়াতে যাওয়ার মনের ইচ্ছে দুনিয়া জেনে ফেলেছে।
ব্যক্তিগত তথ্যের এই সুরক্ষার জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল’ নিয়ে এসেছিল। দু’বছর ধরে তা নিয়ে বিচার করার পরে যৌথ সংসদীয় কমিটি সংসদে আজ রিপোর্ট পেশ করল। কিন্তু ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় কড়া নিয়মের সুপারিশ করলেও সংসদীয় কমিটি পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনীর মতো সংস্থাকে জাতীয় নিরাপত্তার নামে ছাড় দেওয়ারই সুপারিশ করল। অর্থাৎ সরকার চাইলে আপনি মোবাইল কিনছেন, না দার্জিলিং যাওয়ার কথা ভাবছেন, তার উপরে নজরদারি করতেই পারে। সরকারের ক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ, যে-হেতু সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের বিপুল পরিমাণ তথ্য মজুত থাকে, তাই প্রতিটি মন্ত্রকে ও দফতরে তথ্য সুরক্ষার জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ তৈরি করতে হবে।
বিজেপি সাংসদ পি পি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কমিটি সরকারকে যথেচ্ছ ছাড় দিতে চাওয়ায় বিরোধী সাংসদেরা আপত্তি তুলেছিলেন। গত মাসে রিপোর্ট চূড়ান্ত হওয়ার সময় কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজু জনতা দলের সাংসদেরা তাঁদের আপত্তি জানিয়ে ‘ডিসেন্ট’ দিয়েছিলেন। তাঁদের মূল অভিযোগ ছিল, আমজনতার তথ্য যাতে যে কেউ নিজের স্বার্থে কাজে লাগাতে না-পারে, তার জন্য কড়া আইনের বন্দোবস্ত হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা সাধারণ মানুষের তথ্য যেমন খুশি কাজে লাগাতে পারে। সাধারণ মানুষের কোনও রক্ষাকবচ থাকছে না।
জেপিসির সুপারিশ
• তথ্য সুরক্ষা নিয়ে বেসরকারি সংস্থার জন্য কড়া আইন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি সংস্থাকে ছাড়
• কেন্দ্রীয় সরকার যে কোনও সরকারি সংস্থাকে আইন থেকে ছাড় দিতে পারে
• ফেসবুক-টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যের দায় সংস্থাকে নিতে হবে
• সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা
• একই আইনে ব্যক্তিগত ও ব্যক্তিগত নয়, এমন তথ্যের সুরক্ষা, একটিই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ
• অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া শিশু-নাবালকদের তথ্য ব্যবহার নয়
• কর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারে নিয়োগকারীর অবাধ স্বাধীনতা নয়
তথ্যের গোপনীয়তার পক্ষে সওয়ালকারী সংস্থা ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন’-এর বক্তব্য, আয়কর দফতর, আধার কর্তৃপক্ষের মতো সংস্থাকে অনুমতি ছাড়াই ব্যক্তিগত তথ্য কাজে লাগানোর ক্ষমতা বিলে দেওয়া হয়নি। সংসদীয় কমিটি এতে বদলের সুপারিশ করেনি, তা দুশ্চিন্তার। এটা ব্যক্তিগত পরিসরকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে যে কোনও সংস্থাকে আইন থেকে ছাড় দেওয়ার ক্ষমতা নিয়েও কমিটি আপত্তি তোলেনি।
যৌথ কমিটির সুপারিশ, ফেসবুক-টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সব তথ্য, ছবি মানুষ তুলে ধরেন, তার দায় প্রকাশক হিসাবে ওই সংস্থাগুলিকে নিতে হবে। কী ছবি, তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে, তার উপরে নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি তৈরি করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে ভারতে প্রযুক্তি কাঠামো তৈরি করতে হবে। প্রতিটি অ্যাকাউন্ট যাচাই করতে হবে। তথ্য ফাঁসের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের খেলাপ হলে ১৫ কোটি টাকা বা সংস্থার বিশ্ব জুড়ে ব্যবসার মূল্যের ৪ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
ডিজিটাল যুগে সংবাদমাধ্যমের উপরে নিয়ন্ত্রণের জন্যও সংস্থা তৈরির সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। অনলাইন হোক ছাপানো পত্রিকা, সেখানে এই সংস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকবে। প্রেস কাউন্সিলের ধাঁচে সংস্থার সুপারিশ করা হলেও কমিটির বক্তব্য, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে-ভাবে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, তার জন্য প্রেস কাউন্সিল যথেষ্ট নয়। একক বিধিবদ্ধ সংস্থার প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় সরকার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিলের খসড়া তৈরি করেছিল। কমিটির সুপারিশ, বিলের নাম বদলে শুধু তথ্য সুরক্ষা বিল করা হোক। একই আইনে ব্যক্তিগত ও ব্যক্তিগত নয়, এমন তথ্যের সুরক্ষার ব্যবস্থা হোক। তার জন্য একটিই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ তৈরি হোক।
শিশু-নাবালকদের তথ্য সম্পর্কে কমিটি সুপারিশ করেছে, যে-সব সংস্থা এই সব তথ্য মজুত করছে, তারা বয়স খতিয়ে দেখে, অভিভাবকদের অনুমতি নিয়েই ওই তথ্য ব্যবহার করতে পারবে। শিশুদের অধিকার রক্ষা করেই তথ্য কাজে লাগানো যাবে। বিলে শিশুদের স্বার্থে তথ্য ব্যবহারের কথা ছিল। তা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। শিশু-পণ্যের বিজ্ঞাপনে তাদের তথ্য কাজে লাগানো যাবে না। চাকরির ক্ষেত্রে কর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারে নিয়োগকারীদের পুরো স্বাধীনতা না-দেওয়ার পক্ষে সুপারিশ করেছে কমিটি।
বহু সংস্থাই এ দেশ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য মজুত করে। কমিটির সুপারিশ, ইতিমধ্যেই যে-সব তথ্য বিদেশে চলে গিয়েছে, তার মধ্যে সংবেদনশীল ও জরুরি ব্যক্তিগত তথ্যের প্রতিলিপি নিরাপত্তার স্বার্থে দেশে রাখা হোক। ভবিষ্যতে সমস্ত তথ্যই যাতে দেশে মজুত করা হয়, তার জন্য নীতি তৈরি হোক। এ দেশে ব্যবসায় যুক্ত বিদেশি সংস্থাগুলিকে তথ্য সুরক্ষা অফিসার নিয়োগ করতে হবে। তার যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়েছে কমিটি। এই আইন না-মানলে পাঁচ কোটি টাকা বা সংস্থার বিশ্ব জুড়ে ব্যবসার মূল্যের ২% পর্যন্ত জরিমানার সুপারিশ করেছে কমিটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy