অক্ষয় সিংহ
বছর ঘুরতেই নাজেহাল নরেন্দ্র মোদীর সরকার! বিতর্ক যেন ঘিরে ধরছে চার দিক থেকে। ললিত মোদী বিতর্ক রয়েছেই। তাতে গদি টলোমলো বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের। তার মধ্যেই রেশন কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের। তাঁরও ইস্তফার দাবিতে সরব বিরোধীরা।
পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রধান পদে গজেন্দ্র চৌহানের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। দলীয় সাংসদ হেমা মালিনীর গাড়ির ধাক্কায় শিশুমৃত্যু নিয়েও দেশ জুড়ে প্রতিক্রিয়া বিরূপ। বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে বিরোধী ঝড়ে সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশন বানচাল হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।
মোদী সরকারের বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়ে আজ মধ্যপ্রদেশের পুরনো একটি দুর্নীতি মামলা ঘিরে রহস্য আরও ঘোরালো হল। রাজ্যে মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির দায়িত্বে থাকা মধ্যপ্রদেশ ব্যবসায়িক পরীক্ষা মণ্ডলের (ব্যাপম) কাজকর্মে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল ২০০৯ সাল থেকেই। টাকার বিনিময়ে বেআইনি ভাবে বহু প্রার্থীকে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কেবল ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল নয়, ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষাতেও এই চক্র প্রভাব বিস্তার করেছে বলে অভিযোগ। কিন্তু অভিযুক্ত ও সাক্ষী মিলিয়ে গত ক’বছরে এই দুর্নীতি মামলার সঙ্গে যুক্ত ২৪ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে পুলিশ-প্রশাসনই। যদিও সংবাদমাধ্যমের দাবি অস্বাভাবিক ভাবে মারা গিয়েছেন ৪৪ জন। আজ সেই সংখ্যা আরও একটা বাড়ল। ব্যাপম কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে রহস্যজনক ভাবে মারা গেলেন একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক।
অক্ষয় সিংহ নামে ওই সাংবাদিকের মৃত্যুর ঘটনা বিজেপির অস্বস্তিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেল। শুধু মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানই নয়, চরম অস্বস্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারও। আর বিজেপির আরও এক বিড়ম্বনায় উচ্ছ্বসিত কংগ্রেস ব্যাপম কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি করার পাশাপাশি শিবরাজের পদত্যাগও চেয়েছে। ব্যাপম কেলেঙ্কারি যে তাঁদের নতুন হাতিয়ার হয়ে চলেছে, সেই ইঙ্গিত দিয়ে অক্ষয়ের মৃত্যুতে আজ শোক প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। আগামিকাল দিল্লির নিগমবোধ ঘাটে অক্ষয়ের শেষকৃত্যেও উপস্থিত থাকতে পারেন তিনি।
২০০৯ সাল থেকে শুরু হলেও ব্যাপম কেলেঙ্কারির প্রকৃত ছবিটা সামনে এসেছিল ২০১৩ সালে, ইনদওরের চিকিৎসক আনন্দ রাই ও গ্বালিয়রের সমাজকর্মী আশিস চতুর্বেদীর চেষ্টায়। ক্রমশ গ্রেফতার হন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত শর্মা-সহ বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ায় রাজ্যপাল রামনরেশ যাদব ও তাঁর ছেলে শৈলেশেরও। হাইকোর্টের নজরদারিতে বিষয়টি নিয়ে এখন তদন্ত করছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স।
২৫ মার্চ লখনউয়ে রামনরেশ যাদবের বাড়িতে মারা যান তাঁর ছেলে শৈলেশ। তার আগে পরেও মারা গিয়েছেন একের পর এক সাক্ষী ও অভিযুক্ত। আজ মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়া শহরের কাছে মেঘনানগরে ব্যাপম কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত খবর সংগ্রহ করতে যান দিল্লির একটি সর্বভারতীয় হিন্দি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক অক্ষয়। সেখানেই থাকেন ব্যাপম কাণ্ডের শিকার বলে পরিচিত মেডিক্যাল ছাত্রী নম্রতা দামোরের পরিবার। নম্রতার দেহ উজ্জ্বয়িনী জেলায় রেললাইনের ধারে পাওয়া গিয়েছিল। তিনি ব্যাপম কেলেঙ্কারির চক্রীদের সাহায্যেই মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করেছিলেন বলে সন্দেহ ছিল তদন্তকারীদের। ব্যাপম চক্রীরাই নম্রতাকে খুন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা।
নম্রতার বাবা-মা-র সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরে কিছু নথিপত্র জেরক্স করানোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন অক্ষয়। তখন দামোর পরিবারের বাড়ির সামনেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অক্ষয়। তাঁর মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোতে শুরু করে। দ্রুত তাঁকে স্থানীয় সিভিল হাসপাতাল ও পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মেঘনানগরের পাশেই গুজরাতের দাহোড়। মধ্যপ্রদেশের হাসপাতালের পরে অক্ষয়কে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানকার একটি হাসপাতালে। গুজরাতের হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই ওই সাংবাদিককে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার পরে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ তীব্র করেছে কংগ্রেস। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহের দাবি, মধ্যপ্রদেশে যাওয়ার আগে অক্ষয়কে সতর্ক করেছিলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই শিবরাজ সরকারকে নিশানা করার চেষ্টা করছেন দিগ্বিজয়। ব্যাপম কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও করেছেন তিনি।
বিরোধীদের চাপের মুখে রক্ষণাত্মক মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দাহোড়ে তিন চিকিৎসকের একটি দল অক্ষয়ের ময়নাতদন্ত করছেন। তা ভিডিও রেকর্ডিং করা হবে। তবে ব্যাপমের তদন্ত হাইকোর্টের নজরদারিতে টাস্ক ফোর্স করছে। এই মামলা এখন আর রাজ্য সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে পারে না।
বিরোধীদের চাপের মুখে তিনি যে নতিস্বীকার করবেন না, সেই ইঙ্গিত আজ দিয়েছেন শিবরাজ। নানা অভিযোগে নাজেহাল বিজেপির অবস্থানও মোটের উপর একই। অর্থাৎ, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তির, তাঁদের কাউকেই সরাতে নারাজ দল। এ নিয়ে সংসদের বাদল অধিবেশনে বিরোধীরা হইচই করবে জেনেও এখনও পর্যন্ত মাথা নোয়ানোর ইঙ্গিত দেননি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ-অরুণ জেটলিরা। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, অভিযুক্ত এক জনকেও সরালে রক্তের স্বাদ পেয়ে যাবে বিরোধীরা। তাই দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী নৈতিকতার প্রসঙ্গ তুললেও সুষমা, বসুন্ধরা কাউকেই বিদায় করার পথে হাঁটেনি বিজেপি। উল্টে বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে আন্দোলনের ঝাঁঝ কমানোর ছক কষছেন দলের নেতারা। বিজেপি শীর্ষ সূত্রের ইঙ্গিত, প্রয়োজনে বিরোধী নেতাদের নানা ‘কীর্তিকলাপ’ও এ বার প্রকাশ্যে তুলে ধরা হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy