Advertisement
০৯ নভেম্বর ২০২৪
Left

জেএনইউ: মোদীর নিশানায় বামেরা

প্রথমত, এই মূর্তি নিয়ে আগে বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়ে এবিভিপি-র অভিযোগ ছিল, এই মূর্তির বেদিতে অশ্লীল কথা লিখেছিলেন বাম ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ০৪:১৯
Share: Save:

এক বারও কোনও দলের নাম করেননি। উল্লেখ করেননি কোনও নির্দিষ্ট ঘটনা। কিন্তু বাম ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুর্গ জেএনইউয়ের ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়েই চিনের সঙ্গে সংঘাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে বামেদের বিরোধিতাকে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মতে, দেশের মঙ্গল চিন্তার উপরে কোনও মতাদর্শের স্থান হতে পারে না। কোনও ভাবধারার জন্যই আপস করা যায় না দেশের একতা এবং অখণ্ডতার সঙ্গে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রশ্ন, কৃষক-শ্রমিক-দরিদ্র-পড়ুয়াদের অধিকারের দাবিতে আওয়াজ তোলার থেকে বেশি দেশহিত আর কিসে? সামাজিক ও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য গত ছ’বছরে কী করেছে তাঁর সরকার?

বৃহস্পতিবার ভিডিয়ো-অনুষ্ঠান মারফত জেএনইউ ক্যাম্পাসে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি উন্মোচন করেন মোদী। সেখানে তিনি বলেন, “যদি কোনও একটি জিনিস দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রভূত ক্ষতি করে থাকে, তা হল, নিজের মতাদর্শকে রাষ্ট্রহিতের থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। ‘আমি’ একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী বলে, শুধু সেই খাতেই ভাবব, এই রাস্তা ঠিক নয়। নিজের মতাদর্শ নিয়ে গর্ব থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু রাষ্ট্রহিতের জন্য সেই মতাদর্শকেও দেশের পাশে থাকতে হবে।…যখন দেশের একতা, অখণ্ডতা ও মঙ্গলের প্রশ্ন, তখন নিজের মতাদর্শের নীচে চাপা পড়ে সিদ্ধান্ত নিলে, লোকসান হয় দেশেরই।”

আফজল গুরুর পক্ষে স্লোগান ওঠার সময় থেকেই জেএনইউয়ের ক্যাম্পাসে তীক্ষ্ণ নজর মোদী সরকারের। এ জন্য কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদকে জেলে যেতে হয়েছে, বামপন্থী ছাত্রনেতাদের ‘টুকরে-টুকরে গ্যাং’ বলে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। সিএএ-এনআরসি বিরোধী মিছিল থেকে শাহিনবাগের ধর্না— সর্বত্র জেএনইউয়ের ছায়া খুঁজে পেয়েছে তারা। জেএনইউএসইউয়ের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রকের সম্পর্কও আরও তেতো হয়েছে ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়ে পুলিশের লাঠিচালনায়। জেএনইউএসইউয়ের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ-সহ প্রতিবাদী পড়ুয়াদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি তাণ্ডব চালানোর পরে এক জন অভিযুক্তও গ্রেফতার হননি। উল্টে হেনস্থা করার চেষ্টা হয়েছে আক্রান্ত পড়ুয়াদেরই। এই পরিস্থিতিতে জেএনইউয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সরকারের একাংশ মনে করে, সীমান্তে চিনা আগ্রাসনের সময়েও সরকারের পাশে দাঁড়ায়নি বাম দলগুলি। বরং সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নিজেদের মতাদর্শের কারণে জঙ্গি হানার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির নামে স্লোগান তুলতেও পিছপা হয়নি। যে মাওবাদী সন্ত্রাসের কথা বিজেপি বিহার ভোটের প্রচারেও বার বার বলেছে, তার মতাদর্শের শিকড়ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মিলবে বলে শাসক দলের অনেকে নিশ্চিত। তাই এই ক্যাম্পাসে বিবেকানন্দের মূর্তি উন্মোচন এবং সেখানে এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ ঠেকেছে অনেকের কানে।

প্রথমত, এই মূর্তি নিয়ে আগে বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়ে এবিভিপি-র অভিযোগ ছিল, এই মূর্তির বেদিতে অশ্লীল কথা লিখেছিলেন বাম ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা। চেষ্টা হয়েছিল মূর্তি ভাঙার। উল্টো দিকে বাম শিবির গত কাল পর্যন্তও প্রশ্ন তুলেছে, হস্টেলের মেসে যেখানে ঠিক মতো খাবার মিলছে না, সেখানে মূর্তি বসানোর টাকা এল কোথা থেকে? আগে পড়ুয়াদের বৃত্তির টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হল না কেন? কেন এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ প্রাক্তন পড়ুয়া নাজিব? উপাচার্যের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ জানিয়ে এ দিন প্রধানমন্ত্রীকে লম্বা চিঠি লিখেছে জেএনইউএসইউ। ক্যাম্পাসে স্লোগান উঠেছে, ‘মোদী গো ব্যাক।’ সম্ভবত এবিভিপি-র তরফে তার জবাব দিতেই ‘বন্দেমাতরম’ এবং ‘ভারতমাতা কি জয়ের’ স্লোগান ওঠে বক্তৃতার আগে।

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, কৃষি-সহ যাবতীয় ক্ষেত্রে সাহসী সংস্কার সফল হওয়ার কারণ, তার উদ্দেশ্য সৎ। আর তা কার্যকর করতে অক্লান্ত পরিশ্রমও করছে সরকার। দরিদ্রদের জন্য তৈরি হচ্ছে আর্থিক সুরক্ষা-কবচ। পড়ুয়াদের প্রশ্ন, তা হলে অর্থনীতি আর কাজের বাজারের এই হাল কেন? কেনই বা ক্ষুধা সূচকে শেষ সারিতে ভারত?

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Left JNU Delhi Swami Vivekananda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE