ছাত্র সংসদের আহত প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ। ছবি: পিটিআই।
কাপড়ে মুখ ঢাকা দুষ্কৃতীরা জেএনইউ ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালানোর ৪৮ ঘণ্টা পরেও এক জনকেও গ্রেফতার করেনি অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ। আহত পড়ুয়াদের খোঁজও নেননি উপাচার্য এম জগদেশ কুমার। উল্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে একাধিক এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের আহত প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ-সহ ২০ জনের নামে! রবিবারের হামলায় দুষ্কৃতীদের রডের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন ঐশী।
রবিবার তাণ্ডবের পর থেকেই অভিযোগের আঙুল উঠছে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র বিরুদ্ধে। কিন্তু তার পরেও তাদের কাউকে এখনও গ্রেফতার করেনি দিল্লি পুলিশ। তার মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অমিত শাহের ডেপুটি তথা দিল্লি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই আজ জেএনইউ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিজেপির কোনও নেতা বা কর্মী এমন কোনও কথা ভাবতেই পারেন না। কাউকে উস্কানিও দিতে পারেন না। এ সব কমিউনিস্ট, কংগ্রেস ও কেজরীবালদের কাজ।’’ খোদ মন্ত্রীর মুখে এ কথা শুনে চক্ষু চড়কগাছ বিরোধীদের। তাঁরা বলছেন, ‘‘বাম ছাত্র সংসদের আক্রান্ত নেত্রী ঐশী ঘোষের বিরুদ্ধে এফআইআর করছে পুলিশ। অথচ এখনও এভিবিপির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপের নামগন্ধ নেই! মন্ত্রী কি এবিভিপি-কে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে বামেদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করারই ইঙ্গিত দিলেন?’’
এফআইআরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের এড়িয়ে ইচ্ছুক পড়ুয়ারা যাতে সিমেস্টার পরীক্ষার জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে অনলাইন নথিভুক্তি চালু করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাতে বাধা দিতে ১ জানুয়ারি সার্ভার রুম ভাঙচুর করেন আন্দোলনকারীরা। তা সারিয়ে দেওয়া হলে ৪ জানুয়ারি ফের তা তছনছ করা হয়। সেই কারণেই ঐশী-সহ২০ জনের নামে ওই অভিযোগ।
প্রশ্ন উঠছে, ১ এবং ৪ জানুয়ারি ভাঙচুরের জন্য কর্তৃপক্ষ হঠাৎ ৫ তারিখ রাত পৌনে ৯টা নাগাদ এফআইআর করলেন কেন? বিশেষত যেখানে তার আগের তিন ঘণ্টা ধরে কার্যত তাণ্ডব চলেছে ক্যাম্পাসে। যে তাণ্ডবে গুরুতর আহত ঐশী-সহ অন্তত ৩৪ জন পড়ুয়া ও
শিক্ষক। আজ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘৪ জানুয়ারির ভাঙচুরের দায়ে এফআইআর দায়ের করা হল ৫ তারিখে! তা-ও যিনি আহত, তাঁর নামে! অথচ যারা অবাধে ক্যাম্পাসে লাঠি হাতে ঘুরে বেড়াল, শিক্ষকদেরও মারল,
তাদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ! কর্তৃপক্ষের মুখেও তা নিয়ে কুলুপ! আশ্চর্যের নয় কি?’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, অভিযোগ
তারা আগেই দায়ের করেছিল। নথিভুক্তিতে হয়তো সময় নিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
অভিযুক্তের তালিকায় অন্যতম ঐশী নিশ্চিত, তাঁর বা তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ। পুরো বিষয়টিই মনগড়া। তাই কোনও প্রমাণই জোগাড় করতে পারবে না তারা।
এবিভিপি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজিত শর্মার দাবি, ঐশী শুধু সার্ভার রুম ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেননি, রবিবার সকালে প্রায় ৩০০ জনকে নিয়ে পেরিয়ার হস্টেলে এবিভিপি সমর্থকদের ঘরে-ঘরে চড়াও
হচ্ছিলেন। কাপড়ে মুখ ঢেকে বিভিন্ন ঘরে ঢুকে পড়ুয়াদের মারধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঐশী। তার প্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিয়ো-ক্লিপিং সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া হয়েছে বলে এবিভিপি-র দাবি। গেরুয়া শিবিরের মূল লক্ষ্য যে
বামেরাই, তা এ দিন বুঝিয়ে দিয়ে কর্নাটকের বিজেপি টুইট করেছে, ‘‘বহু বছর ধরে বামেদের নরম ভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে। সময় এসেছে জেএনইউ-তে ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-কে চিহ্নিত করে হিংসার জন্য শাস্তি দেওয়া।’’ একই দিনে আহত ঐশীকে কটাক্ষ করে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘জেএনইউয়ের ঘটনা সাজানো বলে জানা গেছে। ঐশীর মাথায় রক্ত না লাল রং, তাও এখনও জানা যায়নি।’’
এফআইআর নিয়ে সরব জেএনইউএসইউ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কাপুরুষোচিত হামলার শিকার ঐশী, সাকেত মুন, সতীশ চন্দ্র সমেত ২০ জনের নামে এফআইআর করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অথচ যারা রড-লাঠি-হকি স্টিক হাতে তিন ঘণ্টা ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশি মদতে তাণ্ডব চালাল, তাদের চিহ্নিত করার বা শাস্তির বন্দোবস্তের কোনও আগ্রহ উপাচার্য বা প্রশাসনের নেই।’
এ দিন ক্যাম্পাসে জেএনইউয়ের শিক্ষক সংগঠন জেএনইউটিএ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইয়েচুরি, ডি রাজা থেকে যোগেন্দ্র যাদব— প্রায় সকলেই বলছিলেন, এ থেকেই স্পষ্ট যে, এই তাণ্ডবের পিছনে কোথাও হাত মিলিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং এবিভিপি। না হলে গেটে মোতায়েন পুলিশ এবং ক্যাম্পাসের ভিতরে নিজেদের প্রায় ৩০০ রক্ষীর চোখ এড়িয়ে এমন ঘটনার পরে দুষ্কৃতীদের পালানো অসম্ভব। বিশেষত যেখানে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করতে সেই খাতে বাজেট ৯ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ কোটি করা হয়েছে বলে জেএনইউটিএ-র নেতা ডি কে লোবিয়ালের দাবি। ক্যাম্পাসে এমন বর্বর আক্রমণ এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায়ে উপাচার্যকে অবিলম্বে সরানোর দাবি ফের তুলেছেন তাঁরা।
উপাচার্য প্রবল চাপের মুখে পড়ুয়াদের ‘অতীত ভুলে ক্লাসে ফেরার আর্জি’ জানিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, তাঁকে আগামিকাল ডেকেছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy