জেএনইউ-র উপাচার্য মামিডালা জগদীশ কুমার।
বর্ধিত ফি পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন শুরুর পরে এই প্রথম মানবসম্পদ মন্ত্রকে গিয়ে উচ্চশিক্ষা সচিব অমিত খারের সঙ্গে দেখা করলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) বিতর্কিত উপাচার্য মামিডালা জগদীশ কুমার। সেখান থেকে ফিরে টুইট করা ছাড়াও মুখ খুলেছেন কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সামনে। মন্ত্রক সূত্রে খবর, জেএনইউ ক্যাম্পাসে শান্তি ফেরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপাচার্যকে। কিন্তু তার পরেও তাঁর উপরে পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের এক বড় অংশের ক্ষোভ এতটাই প্রবল যে একমাত্র তিনি পদ থেকে সরলে তবেই ক্যাম্পাস স্বাভাবিক হতে পারে বলে দাবি করছে শিক্ষক সংগঠন জেএনইউটিএ। আরও এক ধাপ এগিয়ে জেএনইউএসইউয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাকেত মুনের দাবি, ‘‘ইস্তফাও নয়, আমাদের প্রথম দাবি, বরখাস্ত করা হোক উপাচার্যকে।’’ হামলায় মাথায় চোট পাওয়ার পরে প্রথম বার সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে সবার আগে উপাচার্যকে সরানোর দাবি তুলেছিলেন জেএনইউ ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষও।
ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনে ক্যাম্পাস প্রায় সত্তর দিন অচল থাকার সময়ে এক বারের জন্যও মুখ খোলেননি কুমার। ব্যতিক্রম গোটা কয়েক টুইট। আলোচনার টেবিলে বসা দূর, নির্বাচিত ছাত্র সংসদ হিসেবে জেএনইউএসইউ-কে স্বীকৃতি দেওয়ার আগ্রহ পর্যন্ত দেখায়নি তাঁর নেতৃত্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রবিবার ক্যাম্পাসে মুখ ঢাকা দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের পরে আহত পড়ুয়াদের দেখতে তো যানইনি, উল্টে তাঁদের অনেকের নামেই এফআইআর দায়ের করেছেন কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা এবং বুধবার সারা দিনে উপাচার্যের বার্তা, ‘‘অতীতকে পিছনে ফেলে ক্যাম্পাসে ফিরুন পড়ুয়ারা।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে যা ঘটেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। এই ক্যাম্পাস আলোচনা-বিতর্কের জন্য পরিচিত। হিংসা সমাধান নয়।’’ স্কুল সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ শিক্ষক সংগঠন জেএনইউটিএফের সদস্য অশ্বিনী মহাপাত্রের অবশ্য প্রশ্ন, ‘‘উপাচার্য সরে গেলেই ক্যাম্পাসে আর গোলমাল না-হওয়ার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেন কি?’’
বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন জেএনইউটিএ-র সম্পাদক সুরজিৎ মজুমদারের দাবি, ‘‘শুধু রবিবারের ঘটনার জন্য নয়। প্রশাসনিক ব্যর্থতা, সেখানে স্বচ্ছতার অভাব, কারও সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই নিজে একা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতার কারণে অনেক আগে থেকেই তাঁকে সরানোর দাবি তুলেছি আমরা।’’ গত চার বছরে কুমার বার বার জেএনইউয়ের আত্মায় আঘাত করতে চেয়েছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। ইঙ্গিত, বাম দূর্গ বলে পরিচিত জেএনইউয়ে সঙ্ঘের পতাকা ওড়াতেই ‘পাঠানো হয়েছে’ তাঁকে।
আরও স্পষ্ট ভাবে সিপিআই নেতা ডি রাজা, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদবদের অভিযোগ, আসলে জেএনইউয়ের চরিত্র বদলের দায়িত্ব দিয়েই আইআইটি-দিল্লির ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক কুমারকে এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি। সঙ্ঘ ও বিজেপি মনে করে, দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তের সাধারণ ঘর থেকে এই ক্যাম্পাসে আসা অনেক পড়ুয়ার মাথায় নিজেদের মতাদর্শ গেঁথে দেয় বামপন্থী দলগুলি। তাই এই সরকারের বিরুদ্ধে এত প্রতিবাদের আওয়াজ তোলেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, সেই প্রশ্ন করার জায়গাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিতেই কুমারের নিয়োগ।
শিক্ষক-পড়ুয়াদের বড় অংশের প্রশ্ন, তা না-হলে, ৪০% পড়ুয়ার পারিবারিক আয় অত্যন্ত কম জানা সত্ত্বেও কেন এক তরফা ফি বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছেন উপাচার্য? কেন তার আগে কথা বলেননি ছাত্র-প্রতিনিধিদের সঙ্গে? কেনই বা এ নিয়ে আন্দোলন চলাকালীন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ইউনিয়নকে কথা বলতে ডাকলেও, তাদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি? কেন তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত চার বছরে এত বার বিতর্কিত খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে এই ক্যাম্পাস? সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠদের নিয়োগের জন্য শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি বদলানোর অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেছিলেন, ‘‘তিন বছরের জন্য জেএনইউতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হোক। তার পরে তা ফের খোলা হোক নতুন করে।’’ অভিযোগ উঠেছিল, সেই সুপারিশও করেছিলেন কুমার। কিন্তু এ দিন তা খারিজ করেছেন তিনি।
বাম-সহ বিরোধীদের বড় অংশের দাবি, উপাচার্য এবং তাঁর প্রশাসনের যোগসাজশ না-থাকলে, রবিবার অমন অবাধে ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালাতে পারত না মুখ ঢাকা দুষ্কৃতীরা। তাঁকে জেএনইউ-ধ্বংসের লক্ষ্যে পাঠানো হয়েছে বলেই সব কিছুর পরেও তাঁর পাশে রয়েছে কেন্দ্র। কুমারের অবশ্য দাবি, যাঁরা পড়তে বা পরীক্ষা দিতে চান, রাজনীতির নামে জোর করে তাঁদের বাধা দেওয়ার বিরোধী তিনি। অনলাইনে বহু ছাত্র এখন নাম নথিভুক্ত করছেন। তা আটকাতেই মুখ ঢেকে সার্ভার রুম ভাঙচুর করে পড়ুয়াদের একাংশ। তাই এফআইআর।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম অবশ্য বলেছেন, ‘‘পড়ুয়াদের অতীত ভুলতে বলেছেন উপাচার্য।...উনিই এখন অতীত। ওঁর উচিত, ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়া।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy