Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ঢল আধাসেনা ছাড়ার, চাপে কিছুটা সুরাহা

অশনিসঙ্কেত এসেছিল আধাসেনার অন্দরমহল থেকেই। এখন সংসদে হিসেব দিয়ে কেন্দ্রও স্বীকার করে নিল, চাকরির মাঝপথেই আধাসামরিক বাহিনী ছাড়ছেন জওয়ান ও অফিসাররা। ফি বছর সংখ্যাটা বাড়ছে লাফিয়ে।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫০
Share: Save:

অশনিসঙ্কেত এসেছিল আধাসেনার অন্দরমহল থেকেই। এখন সংসদে হিসেব দিয়ে কেন্দ্রও স্বীকার করে নিল, চাকরির মাঝপথেই আধাসামরিক বাহিনী ছাড়ছেন জওয়ান ও অফিসাররা। ফি বছর সংখ্যাটা বাড়ছে লাফিয়ে।

আধা সেঁকা বা পোড়া রুটি, ট্যালটেলে ডাল— গত বছর ভিডিয়ো তুলে খাবারের এই হাল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন বিএসএফ জওয়ান তেজবাহাদুর যাদব। নরেন্দ্র মোদী সরকার কেন্দ্র দায় এড়িয়ে বলেছিল, বিক্ষিপ্ত ঘটনা। কিন্তু ওই জওয়ানের অভিযোগে সিলমোহর বসায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ওই কমিটির পর্যবেক্ষণ, আধাসেনার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে বাহিনীর মনোবল ধরে রাখা কঠিন হবে।

কমিটির রিপোর্টকে সত্য প্রমাণ করে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু গত বুধবার স্বীকার করে নেন, আধাসেনা থেকে ইস্তফা দেওয়ার হার কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। ২০১৫-তে ছেড়েছিলেন ৩ হাজার ৪২৫ জন। ২০১৭-তে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৫৮৭। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, শুধু জওয়ান (হেড কনস্টেবল থেকে কনস্টেবল) নন, চাকরি ছাড়ছেন এসআই, বা গেজেটেড অফিসাররাও। শুধু বিএসএফ থেকেই গত বছর ইস্তফা দিয়েছেন ৬,৪১৫ জন। এর পরেই সিআরপিএফ, ৫ হাজার ১২৩ জন।

সরকারের মতে কারণটা কী?

রিজিজুর বক্তব্য, ‘‘মূলত ব্যক্তিগত সমস্যার কথাই বলা হচ্ছে। পারিবারিক সমস্যাও একটি বড় কারণ।’’ এ ছাড়া রয়েছে পরিবারের কারও স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা, সামাজিক দায়-দায়িত্ব, ফৌজের নিয়মানুবর্তিতা, অনুশাসন মেনে চলা জীবনের সঙ্গে অনেকেই মানাতে না পারার মতো বিষয়। তবে সাংসদদের অনেকে ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, পাওনাগণ্ডা বুঝে পেতে অসুবিধে হতে পারে ভেবে চাকরি ছাড়ার সময়ে ক’জনই বা আসল কারণটি লেখেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার মনে করেন, মূল কারণ পরিকাঠামোর সমস্যা। তাঁর পর্যবেক্ষণ, সীমান্তে ও প্রত্যন্ত এলাকায় যাঁরা মোতায়েন রয়েছেন তাঁদের ন্যূনতম বুনিয়াদি পরিকাঠামো দিতে সরকার ব্যর্থ। অতীতেও এ বিষয়ে সরব হয়েছিলেন কাকলি। আজ তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তে যাঁরা মোতায়েন থাকেন ভরপেট খাবার ও পরিশুদ্ধ পানীয় জল পাওয়াটা তাঁদের কাছে কার্যত বিলাসিতা। উপদ্রুত এলাকাগুলিতে জওয়ানদের হাতে আধুনিক অস্ত্র পর্যন্ত তুলে দিতে ব্যর্থ সরকার।’’

চিন্তিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক খামতি স্বীকার করে নিয়ে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছতা আনা হয়েছে বদলির নীতিতে। যাঁরা উপদ্রুত এলাকায় এক বার কাজ করেছেন, তাঁদের পছন্দসই এলাকায় বদলির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষোভ নিরসনে সিনিয়র অফিসারের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক, প্রয়োজনে সরাসরি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও শীর্ষকর্তাদের কাছে আবেদনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে অপেক্ষাকৃত শান্ত এলাকায় পরিবারকে কাছে রাখার সুযোগ দেওয়া, উন্নত চিকিৎসার বন্দোবস্তের পাশাপাশি শিবিরগুলিতে মনোরঞ্জন ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE