শাদাব ফারুখের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে তেড়ে আসছে অভিযুক্ত। বৃহস্পতিবার।
জামিয়া চত্বরে গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরের পাশে দাঁড়াল হিন্দু মহাসভার একাংশ। তাকে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের মতো দেশপ্রেমিক বলে বর্ণনা করে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন সংগঠনের উত্তরপ্রদেশের এক শীর্ষ নেতা। যদিও হিন্দু মহাসভার জাতীয় সভাপতি চক্রপাণি মহারাজ জানিয়েছেন, ওই কিশোরকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং যাঁরা তা দেওয়ার কথা বলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। ধৃত ওই কিশোরকে এ দিন ১৪ দিনের জন্য পুলিশের নিরাপদ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিশোরের গুলিতে আহত জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাদাব ফারুখ আজই এমস থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
ধৃতকে আজ জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে পেশ করে দিল্লি পুলিশ। বোর্ড তাকে ১৪ দিন প্রোটেকটিভ কাস্টডি-তে রাখার নির্দেশ দেয়। ওই কিশোরকে গত কালই নাবালক বলে দাবি করেছিল দিল্লি পুলিশ। সে সত্যিই নাবালক, না কি দিল্লি পুলিশ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে লঘু করে দেখাতে চাইছে, তা নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়। আজ সেই বিতর্ক থামাতে জুভেনাইল বোর্ডের কাছে ওই কিশোরের ‘অসিফিকেশন’ পরীক্ষার অনুমতি চেয়েছে দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। হাড়ের ওই পরীক্ষার মাধ্যমে যে কোনও ব্যক্তির প্রকৃত বয়স জানা সম্ভব। দিল্লি পুলিশের দাবি, পরীক্ষার তথ্য সামনে এলেই বয়স সংক্রান্ত ধোঁয়াশা কেটে যাবে।
গত কাল কিশোরের দশম পাশ শংসাপত্রের ভিত্তিতে তাকে নাবালক বলে দাবি করেছিল দিল্লি পুলিশ। কিন্তু সেই দাবি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আজ ওই মার্কশিট আসল বলে দাবি করেন উত্তরপ্রদেশের জেবরে কিশোরটির স্কুলের ম্যানেজার নরেন্দ্র শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘ও ২০১৩ সালে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। ২০১৮ সালে সিবিএসই-র দশম শ্রেণির পরীক্ষা পাশ করে। শংসাপত্র অনুযায়ী, সে এখনও নাবালক।’’
জামিয়া-কাণ্ডে সরব রাহুল গাঁধী এ দিন বলেন, ‘‘বন্দুকবাজদের কে টাকা জোগাচ্ছে?’’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল বলেন, ‘‘আমরা
পড়ুয়াদের হাতে পেন তুলে দিচ্ছি, আর বিজেপি দিচ্ছে বন্দুক ও ঘৃণা।’’ বিরোধীরা যা-ই বলুক, হত্যাকারী ‘গডসের মতো প্রকৃত দেশপ্রেমিক’ বলে আজ জানিয়েছেন হিন্দু মহাসভার উত্তরপ্রদেশের নেতা গজেন্দ্র পাল সিংহ। ওই কিশোরকে সংবর্ধনার কথাও বলেছেন তিনি। সংগঠনের মুখপাত্র অশোক পাণ্ডে বলেন, ‘‘ওই কিশোরের জন্য হিন্দু মহাসভা গর্বিত।’’ যদিও চক্রপাণি মহারাজের দাবি, তাঁরা এমন হিংসা সমর্থন করেন না।
কাল থেকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই কিশোর যখন পড়ুয়াদের উদ্দেশে দেশি পিস্তল তুলে শাসাচ্ছিল, তখন কেন তাকে আটকানো হয়নি, সেই প্রশ্ন উঠেছে। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপেরও দাবি ওঠে। আজ একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ওই কিশোর যখন পিস্তল তুলে শাসাচ্ছে, তখন তাকে আটকানোর পরিবর্তে দু’জন পুলিশকর্মী মোবাইলে সেই ঘটনার ছবি তুলছেন! প্রশ্ন উঠেছে, মোবাইলে ভিডিয়ো না তুলে কেন ওই কিশোরকে আটকানোর চেষ্টা হল না? অনেকেই বলছেন, গুলি শাদাবের হাতে না লেগে অন্য কোথাও বা পিছনে দাঁড়ানো অন্য কারও দেহে লাগলে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারত। দিল্লি পুলিশের দাবি, তারা কিছু বোঝার আগেই ঘটনাটি ঘটেছে। তা ছাড়া ওই কিশোর জামিয়ার ছাত্রদের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে ওই কাণ্ড ঘটায়। তাই তাকে আটকানো সম্ভব হয়নি। ভিডিয়ো প্রশ্নে পুলিশের যুক্তি, যে কোনও জমায়েতেই কিছু পুলিশ কর্মীকে ভিডিয়ো করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, দু’জন পুলিশ না হয় দায়িত্ব মেনে সেই ভিডিয়ো করছিলেন। বাকিরা কেন পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন? এর কোনও জবাব অবশ্য দেয়নি দিল্লি পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy