Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Rajasthan

বিপুল গুপ্তধনের খোঁজে এই কেল্লায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তল্লাশি চালায় সেনা

অস্ত্র নির্মাণ প্রসঙ্গে আকর্ষণীয় আর এক দিক হল এই কেল্লার বাতাস-সুড়ঙ্গ। সে পথে আরাবল্লী পাহাড়ের বাতাস প্রবেশ করত দুর্গের কামারশালার চুল্লিতে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:১০
Share: Save:
০১ ১২
কেল্লার সঙ্গে গুপ্তধনের রহস্য নতুন নয় ভারতে। কিন্তু রাজস্থানের এক কেল্লায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর নির্দেশে তল্লাশিও চালানো হয়েছিল গুপ্তধনের সন্ধানে। ইতিহাসে বিতর্কিত সেই অধ্যায় ঘিরে দু’টি দাবি শোনা যায়। এক পক্ষের দাবি, ইন্দিরা গাঁধী বহুমূল্যের ধনসম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। অন্য সূত্রের দাবি, তল্লাশিতে কোনও গুপ্তধনই পাওয়া যায়নি। এই রহস্যের কুয়াশা এখনও ঘিরে আছে জয়গড় কেল্লাকে।

কেল্লার সঙ্গে গুপ্তধনের রহস্য নতুন নয় ভারতে। কিন্তু রাজস্থানের এক কেল্লায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর নির্দেশে তল্লাশিও চালানো হয়েছিল গুপ্তধনের সন্ধানে। ইতিহাসে বিতর্কিত সেই অধ্যায় ঘিরে দু’টি দাবি শোনা যায়। এক পক্ষের দাবি, ইন্দিরা গাঁধী বহুমূল্যের ধনসম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। অন্য সূত্রের দাবি, তল্লাশিতে কোনও গুপ্তধনই পাওয়া যায়নি। এই রহস্যের কুয়াশা এখনও ঘিরে আছে জয়গড় কেল্লাকে।

০২ ১২
১৭২৬ খ্রিস্টাব্দে এই কেল্লার শাসক ছিলেন রাজা দ্বিতীয় জয় সিংহ। আরাবল্লী পাহাড়ের ‘চিল কা টিলা’ অংশে এই কেল্লা তৈরি করা হয়েছিল জয়পুরের আমের বা অম্বর কেল্লাকে পাহারা দেওয়ার জন্য। জয়গড় কেল্লা নির্মাণের মূল উদ্দেশ্যই ছিল আমের কেল্লাকে সুরক্ষিত রাখা।

১৭২৬ খ্রিস্টাব্দে এই কেল্লার শাসক ছিলেন রাজা দ্বিতীয় জয় সিংহ। আরাবল্লী পাহাড়ের ‘চিল কা টিলা’ অংশে এই কেল্লা তৈরি করা হয়েছিল জয়পুরের আমের বা অম্বর কেল্লাকে পাহারা দেওয়ার জন্য। জয়গড় কেল্লা নির্মাণের মূল উদ্দেশ্যই ছিল আমের কেল্লাকে সুরক্ষিত রাখা।

০৩ ১২
আমের এবং জয়গড়, দু’টি কেল্লাকেই সংযুক্ত করা আছে সুড়ঙ্গপথ দিয়ে। প্রশাসনিক কাজে সুবিধের জন্য অতীতে দু’টি কেল্লাকে ধরা হত একটি নির্মাণ হিসেবেই। প্রথম থেকেই জয়গড় কেল্লা ছিল পাহারা দেওয়ার বিন্দু, আমোদপ্রমোদের প্রাসাদ নয়। দশম শতাব্দীর আগে এর অধিকার ছিল মীনা রাজপুতদের হাতে। তার পর দীর্ঘ দিন এই কেল্লা ছিল কচ্ছওয়াহ রাজপুত বংশের।

আমের এবং জয়গড়, দু’টি কেল্লাকেই সংযুক্ত করা আছে সুড়ঙ্গপথ দিয়ে। প্রশাসনিক কাজে সুবিধের জন্য অতীতে দু’টি কেল্লাকে ধরা হত একটি নির্মাণ হিসেবেই। প্রথম থেকেই জয়গড় কেল্লা ছিল পাহারা দেওয়ার বিন্দু, আমোদপ্রমোদের প্রাসাদ নয়। দশম শতাব্দীর আগে এর অধিকার ছিল মীনা রাজপুতদের হাতে। তার পর দীর্ঘ দিন এই কেল্লা ছিল কচ্ছওয়াহ রাজপুত বংশের।

০৪ ১২
পরে আমের কেল্লা অধিকার করেন মুঘলরা। মুঘল শাসনের শেষ দিকে মুঘল সম্রাট মহম্মদ শাহ এই কেল্লার ভার দিয়ে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় জয় সিংহকে। তিনি এর বহু সংস্কারসাধন করেছিলেন। কেল্লার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর অস্ত্রনির্মাণশালা। স্থানীয় খনি থেকে সংগ্রহ করা হত উৎকৃষ্ট লৌহ আকরিক। তার পর লোহা নিষ্কাশন করে কেল্লাতেই তৈরি হত কামান।

পরে আমের কেল্লা অধিকার করেন মুঘলরা। মুঘল শাসনের শেষ দিকে মুঘল সম্রাট মহম্মদ শাহ এই কেল্লার ভার দিয়ে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় জয় সিংহকে। তিনি এর বহু সংস্কারসাধন করেছিলেন। কেল্লার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর অস্ত্রনির্মাণশালা। স্থানীয় খনি থেকে সংগ্রহ করা হত উৎকৃষ্ট লৌহ আকরিক। তার পর লোহা নিষ্কাশন করে কেল্লাতেই তৈরি হত কামান।

০৫ ১২
এই দুর্গে এখনও সাজানো আছে ‘জয়বন কামান’। ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই কামান ছিল তৎকালীন সময়ে সবথেকে বড় ‘চাকায় বসানো কামান’।

এই দুর্গে এখনও সাজানো আছে ‘জয়বন কামান’। ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই কামান ছিল তৎকালীন সময়ে সবথেকে বড় ‘চাকায় বসানো কামান’।

০৬ ১২
অস্ত্র নির্মাণ প্রসঙ্গে আকর্ষণীয় আর এক দিক হল এই কেল্লার বাতাস-সুড়ঙ্গ। সে পথে আরাবল্লী পাহাড়ের বাতাস প্রবেশ করত দুর্গের কামারশালার চুল্লিতে। সেখানেই গলানো হত লোহা। বেলেপাথরের তৈরি ৩ কিমি দৈর্ঘ্যের প্রাচীর ঘিরে আছে এই দুর্গকে। সুরক্ষিত এই কেল্লা এক সময়ে ছিল জয়পুরের শাসকদের কোষাগার। কচ্ছওয়াহ রাজপুত থেকে দ্বিতীয় জয় সিংহ— বিভিন্ন কালপর্বে এখানেই নাকি লুকিয়ে রাখা হয়েছে লুঠ করে আনা ধনঐশ্বর্য।

অস্ত্র নির্মাণ প্রসঙ্গে আকর্ষণীয় আর এক দিক হল এই কেল্লার বাতাস-সুড়ঙ্গ। সে পথে আরাবল্লী পাহাড়ের বাতাস প্রবেশ করত দুর্গের কামারশালার চুল্লিতে। সেখানেই গলানো হত লোহা। বেলেপাথরের তৈরি ৩ কিমি দৈর্ঘ্যের প্রাচীর ঘিরে আছে এই দুর্গকে। সুরক্ষিত এই কেল্লা এক সময়ে ছিল জয়পুরের শাসকদের কোষাগার। কচ্ছওয়াহ রাজপুত থেকে দ্বিতীয় জয় সিংহ— বিভিন্ন কালপর্বে এখানেই নাকি লুকিয়ে রাখা হয়েছে লুঠ করে আনা ধনঐশ্বর্য।

০৭ ১২
কেল্লার জয়বন কামান তার আকারের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু পরিহাস হল, কোনও যুদ্ধেই সেটি ব্যবহার করা হয়নি। এই জয়বন কামানের পিছনেই আছে কেল্লার বিশাল জলাধার। একসঙ্গে সেখানে ৬০ লক্ষ গ্যালন অবধি জল ধরে রাখা সম্ভব। জনশ্রুতি, এই জলাধারের নীচেই আছে গুপ্তধন ভাণ্ডার। কয়েকশো বছর ধরে সযত্নে লুকিয়ে রাখা আছে গুপ্ত প্রকোষ্ঠে।

কেল্লার জয়বন কামান তার আকারের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু পরিহাস হল, কোনও যুদ্ধেই সেটি ব্যবহার করা হয়নি। এই জয়বন কামানের পিছনেই আছে কেল্লার বিশাল জলাধার। একসঙ্গে সেখানে ৬০ লক্ষ গ্যালন অবধি জল ধরে রাখা সম্ভব। জনশ্রুতি, এই জলাধারের নীচেই আছে গুপ্তধন ভাণ্ডার। কয়েকশো বছর ধরে সযত্নে লুকিয়ে রাখা আছে গুপ্ত প্রকোষ্ঠে।

০৮ ১২
স্বাধীনতার পরেও সেই কিংবদন্তি পিছু ছাড়েনি এই কেল্লার। ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময় সেই ছবি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জয়পুরের রাজমাতা গায়ত্রী দেবীর সঙ্গে ইন্দিরা গাঁধীর দ্বন্দ্ব সে সময়ে শিরোনামে। জরুরি অবস্থায় গায়ত্রীদেবী সে সময় কারাবন্দি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন জয়গড় কেল্লা থেকে লুকিয়ে রাখা সম্পত্তি নিয়ে আসতে।

স্বাধীনতার পরেও সেই কিংবদন্তি পিছু ছাড়েনি এই কেল্লার। ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময় সেই ছবি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জয়পুরের রাজমাতা গায়ত্রী দেবীর সঙ্গে ইন্দিরা গাঁধীর দ্বন্দ্ব সে সময়ে শিরোনামে। জরুরি অবস্থায় গায়ত্রীদেবী সে সময় কারাবন্দি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন জয়গড় কেল্লা থেকে লুকিয়ে রাখা সম্পত্তি নিয়ে আসতে।

০৯ ১২
এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ঘিরে সে সময় যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছিল। ইন্দিরার গুপ্তধন অভিযানের কথা জানতে পেরে পাকিস্তানও নড়েচড়ে বসেছিল। তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী তথা প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো দাবি করেছিলেন ওই সম্পত্তিতে পাকিস্তানেরও অধিকার আছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, দেশভাগের আগে যেহেতু ওই সম্পত্তি সঞ্চিত করা হয়, তার অংশ পাকিস্তানকেও দিতে হবে।

এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ঘিরে সে সময় যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছিল। ইন্দিরার গুপ্তধন অভিযানের কথা জানতে পেরে পাকিস্তানও নড়েচড়ে বসেছিল। তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী তথা প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো দাবি করেছিলেন ওই সম্পত্তিতে পাকিস্তানেরও অধিকার আছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, দেশভাগের আগে যেহেতু ওই সম্পত্তি সঞ্চিত করা হয়, তার অংশ পাকিস্তানকেও দিতে হবে।

১০ ১২
ভারতের তরফে পাকিস্তানের এই দাবির কোনও জবাব দেওয়া হয়নি প্রথমে। এ দিকে, ৩ মাস ধরে জয়গড় কেল্লায় অনুসন্ধান চালিয়েও খালি হাতে ফিরে আসে সেনাবাহিনী। ১৯৭৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভুট্টোকে চিঠিতে ইন্দিরা জানান, তিনি আইন বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের দাবি পর্যালোচনা করতে। কিন্তু তাঁরা জানিয়েছেন তাঁদের এই দাবি ভিত্তিহীন। গুপ্তধন পাওয়া গেলে তার উপর পাকিস্তানের কোনও দাবি থাকবে না। একইসঙ্গে নেহরুকন্যা পাকিস্তানকে এও জানিয়ে দেন, জয়গড় কেল্লায় গুপ্তধনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

ভারতের তরফে পাকিস্তানের এই দাবির কোনও জবাব দেওয়া হয়নি প্রথমে। এ দিকে, ৩ মাস ধরে জয়গড় কেল্লায় অনুসন্ধান চালিয়েও খালি হাতে ফিরে আসে সেনাবাহিনী। ১৯৭৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভুট্টোকে চিঠিতে ইন্দিরা জানান, তিনি আইন বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের দাবি পর্যালোচনা করতে। কিন্তু তাঁরা জানিয়েছেন তাঁদের এই দাবি ভিত্তিহীন। গুপ্তধন পাওয়া গেলে তার উপর পাকিস্তানের কোনও দাবি থাকবে না। একইসঙ্গে নেহরুকন্যা পাকিস্তানকে এও জানিয়ে দেন, জয়গড় কেল্লায় গুপ্তধনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

১১ ১২
তবে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, গুপ্তধন না পাওয়ার যে দাবি ইন্দিরা গাঁধী সরকার করেছিল, তা সত্য নয়। তাদের অভিযোগ, পুরনো রাজকর্মচারীদের পারিবারিক উত্তরাধিকারীদের চাপ দেওয়া হয়েছিল, যাতে তাঁরা কোষাগারের পুরনো মানচিত্র বার করে দেন।

তবে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, গুপ্তধন না পাওয়ার যে দাবি ইন্দিরা গাঁধী সরকার করেছিল, তা সত্য নয়। তাদের অভিযোগ, পুরনো রাজকর্মচারীদের পারিবারিক উত্তরাধিকারীদের চাপ দেওয়া হয়েছিল, যাতে তাঁরা কোষাগারের পুরনো মানচিত্র বার করে দেন।

১২ ১২
জয়গড় কেল্লা থেকে নিয়ে যাওয়া সম্পত্তির মধ্যে যশোরেশ্বরী কালীর অলঙ্কার ছিল বলেও অভিযোগ। রাজা প্রথম মান সিংহ সপ্তদশ শতকে বাংলা থেকে যশোরেশ্বরী কালীর বিগ্রহ নিয়ে গিয়ে স্থাপন করেছিলেন তাঁর আমের প্রাসাদে। আজও দেবী পূজিত হন সেখানে। সেখানে তাঁর নাম ‘শিলাদেবী’ এবং পূজিত হন দুর্গার এক রূপ হিসেবে। তবে এই সম্পত্তি হরণের দাবির পিছনে কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। কিন্তু রহস্য ও কিংবদন্তির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারেনি পাহারারত জয়গড় কেল্লা।

জয়গড় কেল্লা থেকে নিয়ে যাওয়া সম্পত্তির মধ্যে যশোরেশ্বরী কালীর অলঙ্কার ছিল বলেও অভিযোগ। রাজা প্রথম মান সিংহ সপ্তদশ শতকে বাংলা থেকে যশোরেশ্বরী কালীর বিগ্রহ নিয়ে গিয়ে স্থাপন করেছিলেন তাঁর আমের প্রাসাদে। আজও দেবী পূজিত হন সেখানে। সেখানে তাঁর নাম ‘শিলাদেবী’ এবং পূজিত হন দুর্গার এক রূপ হিসেবে। তবে এই সম্পত্তি হরণের দাবির পিছনে কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। কিন্তু রহস্য ও কিংবদন্তির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারেনি পাহারারত জয়গড় কেল্লা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy