ফাইল চিত্র।
বছর চারেক আগে হাইকোর্টের নির্দেশে দরজা খুলেছিল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কিংবদন্তিমুখর রত্নভান্ডারে। সেবার রত্নভান্ডারের তিনটি চাবির একটির ‘অন্তর্ধান’ নিয়েও কেলেঙ্কারি বাধে। হাইকোর্টের নির্দেশে সে-বছর রথযাত্রার সময়ে ভান্ডারের কিছু সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)। এ বার ফের জগন্নাথদেবের গর্ভগৃহের দেওয়ালের অংশ খসে পড়ার জেরে সেই রত্নভান্ডার খোলার পথে সায় দিতে পারে মন্দির প্রশাসন।
গত বুধবার জগন্নাথ মন্দিরের গর্ভগৃহে রত্নবেদীতে আসীন তিন বিগ্রহের মধ্যে বলভদ্রের পিছনে দেওয়ালের অংশ ভেঙে পড়ে। তাতে দুশ্চিন্তা ছড়ায় সেবায়েত থেকে ভক্তকুল সবার মধ্যেই। পরে অবশ্য জানা গিয়েছে, সমস্যা তেমন গুরুতর নয়। মন্দিরের দেওয়ালে চুনের পুরু আস্তরণ খসে পড়েই বিপত্তি। হয়তো কোনও ইঁদুর, আরশোলার নড়াচড়ার জেরেই এমনটা ঘটতে পারে। তবে সাবধানের মার নেই! তাই গোটা গর্ভগৃহ থেকে শুরু করে লাগোয়া রত্নভান্ডারের অবস্থা ফের খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করছে মন্দির প্রশাসন। শনিবার জগন্নাথ মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির বৈঠক ছিল। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে ফের এএসআই-কে দিয়ে সব কিছু পরিদর্শন করানো হবে।
কিন্তু জগন্নাথের রত্নভান্ডার খোলাখুলি মুখের কথা নয়! নানা ঝকমারি তাতে। তা কবে সম্পন্ন করা যাবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। এএসআই-এর ওড়িশা সার্কলের সুপারিন্টেনডেন্ট অরুণ মল্লিক অবশ্য শনিবারই জগন্নাথ মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির উপস্থিতিতে গর্ভগৃহের পরিস্থিতি দেখেন। তা এএসআই উদ্বেগজনক নয় মনে করছে বলেই মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটি সূত্রের খবর। কিন্তু শুধু এটুকু দেখেই পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে রাজি নন মন্দির কর্তৃপক্ষ। তাঁদের অভিমত ফের রত্লভান্ডারও খুলে দেখা হোক।
এখন শ্রী মন্দিরের গর্ভগৃহে এমনিতে সংশ্লিষ্ট সেবায়েত ছাড়া কারও ঢোকা বারণ। রত্নভান্ডারে এএসআইয়ের পরিদর্শন চললে তা কখন করা যায় এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। রত্নভান্ডার খোলার সময়ে মন্দিরে দর্শনও বন্ধ রাখা হতে পারে। এর আগের বার হাইকোর্টের নির্দেশে পুরীর দ্বাদশ শতকীয় মন্দির সংস্কারের জন্য রত্নভান্ডার খোলা হয়েছিল। তখন আবার পুরীর কালেক্টরের কাছে থাকা চাবি হারানো নিয়ে গোলমাল বাধে। রত্নভান্ডারের আরও দু’টি চাবি মন্দিরের সেবায়েত ভান্ডার মেকাপ এবং পুরীর গজপতি রাজার কাছে থাকে। সে-বছর (২০১৮ সালে) ৩৪ বছর বাদে রত্নভান্ডার খোলা হয়। রহস্যময় রত্নভান্ডারের হিরে-জহরত নিয়ে নানা কিংবদন্তী রয়েছে। যাঁরা গত বার ঢুকেছিলেন, তাঁদের জগন্নাথ মন্দিরের ভান্ডারের রক্ষক লোকনাথের কাছে গোপনীয়তা রক্ষার শপথ নিয়ে সাপের ভয়ে খালি গায়ে গামছা পরে ঢুকতে হয়েছিল। সে-বার অবশ্য রত্নভান্ডারের সম্পদের খতিয়ান নেওয়া হয়। মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েতরা বলেন রত্নভান্ডারের সম্পদের অনেকটাই কাল্পনিক। তবে জগন্নাথদেবের অঙ্গাভরণ ব্রহ্মজ্যোতি হিরে বা অন্য রত্নরাজি এমনিতেই অলৌকিক বিচ্ছুরণে চোখ ধাঁধায়। সংশ্লিষ্ট সব মহলের অনুমতিনিয়েই এ বার রত্নভান্ডার খুলতে চান মন্দির কর্তৃপক্ষ।
মন্দিরে আগুন: শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ জগন্নাথদেবের ভোগ রান্নার কাঠ থেকে আগুন ছড়িয়ে মন্দিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। তবে পাশেই বিমলা মন্দিরের জলাধার থেকে জল এনে তা নিভিয়ে ফেলেন সেবায়েতরা। পরে দমকল এসে সব কিছু দেখে যায়। জগন্নাথদেবের শুকনো খাবার খাজা, গজা, লাড্ডু তৈরির একটি ছোট হেঁশেলে ব্যবহৃত কাঠ কাজ শেষে কাঠ রাখার নির্দিষ্ট ঘরে (সরাঘর) রাখা হয়েছিল। সম্ভবত সেখানে রাখা কোনও একটি কাঠ তখনও পুরোপুরি নেভেনি। তা থেকেই আগুন লাগে। তবে পরিস্থিতি দ্রুত আয়ত্তে আসে। রাতে মন্দিরে দর্শনার্থীর ঢল কমে এসেছিল। তা ছাড়া, ঘটনাটিমন্দিরের এক কোণে ঘটনায় বেশির ভাগই টের পাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy