Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Sanjib Banerjee

‘কোনও বিচারপতির রাজনীতিতে যোগ দেওয়া সমীচীন নয়’

কলকাতা হাই কোর্ট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই হাই কোর্টকে বাতিল লোকেদের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ কলকাতা দেশের প্রথম হাই কোর্ট।

Sanjib Banerjee

মেঘালয় হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ ০৫:৩০
Share: Save:

কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নিষ্ঠা নিয়ে নিসঃন্দেহ হলেও তড়িঘড়ি কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়াটা তাঁর উচিত হয়নি বলে মনে করেন মেঘালয় হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, এর ফলে বিভিন্ন মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিচার উদ্দেশ্যমূলক বলে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকে যায়। একই সঙ্গে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে এত তাড়াতাড়ি রাজনীতিতে টেনে নেওয়াটাও কোনও দলের উচিত কাজ হয়নি। তাঁর কথায়, “রাজনৈতিক দলগুলিরও একটা দায়িত্ববোধ থাকা প্রয়োজন।”

একটি আইনের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছেন, মাদ্রাজ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন কয়েক জন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রমাণ-সহ দুর্নীতির অভিযোগ লিখিত ভাবে তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছিলেন। সেই কারণেই তাঁকে মাদ্রাজ থেকে মেঘালয় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই সব দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রভাবশালী বন্ধুরা উঁচু উঁচু জায়গায় বসে আছেন। তাঁদের দিয়েই আমাকে মেঘালয়ে বদলি করে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।” সেই সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় অংশে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান— তবে মেঘালয়ে গিয়ে তিনি দেখেন, সেখানে বহু কাজ করার রয়েছে। তাই আন্তরিক ভাবেই সেখানে নানা গুরুত্বপূর্ণ মামলা বিচার করেন, মানুষের বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেখানকার মানুষও তাঁকে ভালবাসা ঢেলে দিয়েছেন। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অবসর নেওয়ার কয়েক মাস পরে এখনও প্রতিদিন তিনি তামিলনাড়ু ও মেঘালয় থেকে নানা জনের ফোন এবং বার্তা পান। তা থেকে বুঝতে পারেন, মানুষের জন্য কিছু করতে পেরেছেন। এই সাক্ষাৎকারের তিনি যেমন বিচারপতি নিয়োগে আমাদের দেশে প্রচলিত কলেজিয়াম পদ্ধতিকে ‘অকার্যকর’ বলেন, একই সঙ্গে জানান— এই ব্যবস্থার বিকল্প কিছু রয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, “যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমাদের দেশ চলছে, সেটি নিয়েও অনেক প্রশ্ন ও আপত্তি রয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থার পরিবর্তে আর একটি কার্যকর ব্যবস্থা যত দিন উঠে না আসছে, এই নিয়েই চলতে হবে।” বিচারপতিদের দুর্নীতি এবং প্রমোশন ও বদলিতে স্বজনপোষণের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়।

কলকাতা হাই কোর্ট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই হাই কোর্টকে বাতিল লোকেদের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ কলকাতা দেশের প্রথম হাই কোর্ট। অনেক ঐতিহ্য তার। কিন্তু যে সব বিচারপতিদের উত্তর-পূর্বের ছোট ছোট হাই কোর্টে পাঠানো উচিত হলেও করা যাচ্ছে না, তাদের কলকাতায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এঁরা আলেকালে আদালতে বসেন। তার পরে নিজের রাজ্যে চলে গিয়ে সময় কাটান। অবসরের মুখে হওয়ায় ঢালাও ছুটি হাতে থাকে এঁদের, তাই কাজ নিয়ে বিশেষ ভাবেন না তাঁরা।”

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে আর এক বিচারপতি সৌমেন সেনের প্রকাশ্য বিরোধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলেও মুখ খোলেননি বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিষয়টিতে দুর্ভাগ্যজনক বলেন। তার পরেই চলে যান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে। বলেন, “বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নিষ্ঠা ও সততা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু যে ভাবে ইস্তফা দিয়েই তিনি একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিলেন, তা উচিত কাজ হয়নি বলে আমি মনে করি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Meghalaya high Court Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy