প্রতীকী চিত্র।
দরজা হাট করে দিয়েছে ভারত সরকার। কিন্তু তার পরে প্রায় ছয় সপ্তাহ কেটে গেলেও এ দেশে প্রতিষেধক বিক্রিতে এগিয়ে আসতে আগ্রহী নয় কোনও বিদেশি সংস্থা। উল্টে ফাইজ়ার বা মডার্নার মতো সংস্থাগুলির কাছে সরাসরি করোনার প্রতিষেধক চেয়েও হতাশ হয়েছে রাজ্যগুলি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, ওই সংস্থাগুলির কাছে অন্য দেশের তরফে প্রতিষেধকের বরাত থাকায় ভারতের শিকে ছিঁড়ছে না। ফলে এখনই এ দেশে প্রতিষেধকের সমস্যা মেটার কোনও আশা দেখছেন না স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা। এর জন্য সরকারের ত্রুটিপূর্ণ প্রতিষেধক নীতিকেই দায়ী করেছেন বিরোধীরা।
গত ডিসেম্বরে প্রথম সংস্থা হিসেবে ভারতে তাদের প্রতিষেধক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছিল ফাইজ়ার। কিন্তু সেই সময়ে মোদী সরকারের নীতি ছিল, বিদেশি প্রতিষেধক সরাসরি প্রয়োগ করা যাবে না। এ দেশে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শেষে প্রতিষেধকটি সুরক্ষিত বলে প্রমাণিত হলে তবেই তা বিক্রি করার অনুমতি মিলবে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ও লাল ফিতের ফাঁসে আটকে যাওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে নিজেদের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয় ফাইজ়ার। তার পর থেকে ভারতের বাজার ধরার আগ্রহ দেখায়নি কোনও বিদেশি প্রতিষেধক সংস্থাই। রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি যদিও ছাড়পত্র পেয়েছে, তবে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দু’টি ধাপ শেষ করার পরে।
মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দু’টি ধাপ সময়সাপেক্ষ হওয়ায় কোনও সংস্থা এগিয়ে আসছে না বুঝতে পেরে গত ১৫ এপ্রিল প্রতিষেধক নীতি পরিবর্তন করে কেন্দ্র। তত দিনে দেশ জুড়ে প্রতিষেধকের হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে। বাধ্য হয়েই এ দেশে বিদেশি প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শর্তটি প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্র। পরিবর্তে বলা হয়, আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্বারা স্বীকৃত যে কোনও প্রতিষেধক সরাসরি এ দেশের বাজারে ছাড়া যাবে। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে প্রায় ছয় সপ্তাহ কেটে যাওয়া সত্ত্বেও ভারতে ব্যবসা করতে আগ্রহ দেখায়নি কোনও সংস্থা।
এ দিকে প্রথমে পঞ্জাব, তার পরে দিল্লি ও মহারাষ্ট্র দাবি করেছে যে, ফাইজ়ার ও মডার্নার মতো সংস্থাগুলি তাদের সরাসরি প্রতিষেধক বিক্রিতে আগ্রহী নয়। তারা কেবল কেন্দ্রের সঙ্গেই লেনদেন করতে চায়। রাজ্যগুলির অভিযোগ, প্রতিষেধক বণ্টন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ দেখে সম্ভবত কেন্দ্রের সঙ্গে তিক্ততা এড়াতেই রাজ্যগুলিকে প্রতিষেধক বিক্রি করতে চাইছে না বিদেশি সংস্থাগুলি। যদিও কেন্দ্রের যুক্তি, ভারতের আগেই অন্তত চার ডজন দেশ ওই দুই সংস্থার কাছে বরাত দিয়ে রেখেছে। সেই দেশগুলিকে প্রতিশ্রুতি মাফিক প্রতিষেধক জোগাতে ২০২৩ সাল কেটে যাবে। এই অবস্থায় সংস্থাগুলি যাতে উৎপাদন বাড়িয়ে ভারতকে প্রতিষেধক জোগাতে পারে, তার আবেদন করা হয়েছে। আমেরিকায় গিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর টিকা নিয়ে সে দেশের সরকার ও প্রতিষেধক নির্মাতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলেও ঠিক হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, টিকার আকালের জন্য দায়ী সরকারের ভুল নীতি। ফাইজ়ারের প্রতিষেধক আমেরিকায় ছাড়পত্র পেতেই ভারতে আসার আগ্রহ দেখিয়েছিল তারা। সেই সময়ে মোদী সরকার তাদের ছাড়পত্র দিলে এত দিনে দেশের অর্ধেক মানুষের টিকাকরণ হয়ে যেত। তবে ফাইজ়ারের টিকা সংরক্ষণের জন্য দেশ জুড়ে কোল্ড চেন তৈরি করতে হত। কংগ্রেসের এক নেতার অভিযোগ, সরকারের বোঝা উচিত ছিল, কেবলমাত্র কোভিশিল্ড আর কোভ্যাক্সিন দিয়ে ১৩০ কোটি মানুষের টিকাকরণ সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy