রাহুল গাঁধী
রাফাল-দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগকে আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে যেতে চাইছেন রাহুল গাঁধী। তিন দশক আগে বফর্স নিয়ে ঠিক যেমনটি ঘটেছিল প্রয়াত রাজীব গাঁধীর জমানায়, এ যেন তারই পাল্টা!
বফর্স কামান কেনা নিয়ে ঘুষের অভিযোগ ওঠায় পড়ে গিয়েছিল রাজীবের সরকার। আদালতে কিছু প্রমাণ না হলেও বিজেপির মতো বিরোধীরা আজও তার প্রচার চালিয়ে যায়। এ বার রাজীব-পুত্র রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে গদিচ্যুত করতে চাইছেন। এত দিন একাই এই রাফাল কেনা নিয়ে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলে এসেছেন তিনি। এ বারে অন্যান্য বিরোধী দলকেও এই অভিযানে সামিল করতে চাইছেন রাহুল। বফর্সের মতো রাফালেও যাতে একটি যৌথ সংসদীয় কমিটি তৈরি হয়, তার জন্য বোঝাচ্ছেন অন্য বিরোধীদের।
রাহুল নিজেও চালিয়ে যাচ্ছেন ক্ষুরধার আক্রমণ। ‘‘রাফাল চুক্তি ঘোষণা করার ১০ দিন আগে রিলায়্যান্স ডিফেন্স তৈরি করেছেন অনিল অম্বানী’’ — খবরের এই শিরোনাম উদ্ধৃত করে রাহুল আজ টুইট করেছেন, ‘‘মিস্টার ৫৬ কাউকে তো অন্তত ভালবাসেন...।’’
গুজরাতের গত বিধানসভা ভোটেও রাফাল বড় প্রসঙ্গ হয়ে উঠেছিল। প্রচারের শেষ দিনে অনিল অম্বানী ২০১৭-র ১২ জানুয়ারি রাহুলকে দু’পাতার একটি চিঠি দিয়ে কংগ্রেসের তোলা অভিযোগ খারিজ করেন। তাঁর দাবি ছিল, প্রতিরক্ষা উৎপাদনের বহু ক্ষেত্রেই বিশ্বে তাঁরা প্রথম সারিতে। অম্বানীদের সংস্থার সঙ্গে ফ্রান্সের শিল্পগোষ্ঠীর গাঁটছড়া বাঁধার পিছনে মোদী সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। চিঠিতে গাঁধী পরিবারের সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন অনিল। রাহুল যে তাতে আমল দিতে নারাজ, এ দিনের টুইটেই তা স্পষ্ট। তিনি বেশি দামে রাফাল কেনার অভিযোগ করলেও বিজেপির দাবি, সরকার আসলে ৫৯ কোটি টাকা বাঁচিয়েছে। এ নিয়ে কংগ্রেস সভাপতিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে এখন আলোচনা করব না। আগে আমার টুইটটা দেখুন।
গত কালই লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের কাছে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের নোটিস দিয়ে এসেছে কংগ্রেস। আজ তা নিয়ে লোকসভায় ফের হল্লা করেন কংগ্রেস সাংসদেরা। চাপের মুখে স্পিকারকে বলতে হয়, বিষয়টি তাঁর বিবেচনাধীন রয়েছে। এখানেই থামছেন না রাহুল। আজ দলের লোকসভার নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘বফর্সের সময় সংসদের একটি যৌথ কমিটি গড়া হয়েছিল। রাফাল দুর্নীতির জন্যও যৌথ কমিটি তৈরি করতে হবে।’’
মোদীকে আড়াল করতে দুই মন্ত্রী, অরুণ জেটলি ও রবিশঙ্কর প্রসাদ আসরে নেমেছেন গত দু’দিনে। তাঁদের বক্তব্য, এটি কোনও দুর্নীতিই নয়। ভারত ও ফ্রান্স সরকারের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। কংগ্রেস জমানার থেকে কম দামে এই যুদ্ধবিমান কেনা হচ্ছে। খড়্গের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘যদি কম দামেই কেনা হয়, প্রধানমন্ত্রী কেন তা সংসদে বললেন না? আসলে মুখোশে দুর্নীতি ঢাকতেই সংসদ এড়িয়ে বাইরে এ সব বলা হচ্ছে।’’
বিজেপির বক্তব্য, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই সরকার শুধু মূল খরচটি বলেছে। এবং একই কারণে বিমানে আনুষঙ্গিক কী কী যন্ত্রাংশ লাগানো হচ্ছে, তা বলা হচ্ছে না। ইউপিএ জমানাতেও বলা হয়নি।
মিস্টার ৫৬ কাউকে তো অন্তত ভালবাসেন।
• অবশ্যই সুট পরতে হবে।
• অবশ্যই ৪৫ হাজার কোটি টাকা দেনা থাকতে হবে।
• অবশ্যই জীবনে একটিও বিমান তৈরি করেননি।
আপনি এই শর্তগুলি পূরণ করলে পুষিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার মিলবে ৪০০ কোটি ডলারের চুক্তি।
কংগ্রেস ছাড়াও বিরোধী দলগুলি এখন বলতে শুরু করেছে, সরকার যদি দামের বিষয়টি প্রকাশ্যে বলতে না-ও চায়, অন্তত সংসদীয় কমিটিতে তো বলতেই পারে। রাজীব গাঁধীর সময়ে বফর্স নিয়েও ঠিক একই ভুলটি হয়েছিল। মন্ত্রীকে সরকারি তথ্য প্রকাশ না করার শপথ নিতে হয়। সংসদীয় গরিমা রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে সাংসদদেরও। সংসদে পেশ করা সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট তাঁরা বাইরে প্রকাশ করতে পারেন না। কিন্তু মোদী সরকার নিজেদের ঔদ্ধত্যের কারণে সংসদীয় কমিটির কাছেও গোপনে রাফাল বিমান ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশের দাম বলছে না। দুর্নীতির আশঙ্কা বাড়ছে এই কারণেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy