নিশান্ত কুমার।— নিজস্ব চিত্র।
মোটামুটি আড়ালেই থেকেছেন এত দিন। অবশেষে এ বার কি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ছেলে নিশান্তও আসতে চলেছেন রাজনীতিতে? জল্পনা কিন্তু জমে উঠেছে।
লালুপ্রসাদের পুত্র-কন্যা বাহিনী ইতিমধ্যেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু নীতীশ-পুত্র চিরকালই ছিলেন পর্দার আড়ালে।
অথচ এ দেশে নেতা-মন্ত্রীদের সন্তানেরা রাজনীতিতে আসবেন, এটাই রেওয়াজ বলা চলে। গাঁধী পরিবারকে যদি আলোচনার বাইরেও রাখা হয়, তা হলেও আক্ষরিক অর্থেই কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, মরাঠা রাজ্য থেকে ওডিশার উপকূল— বাবাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন সন্তানেরা। ওমর আবদুল্লা-মেহবুবা মুফতি, অখিলেশ যাদব, স্ট্যালিন-আলাগিরি-কানিমোজি, উদ্ধব ঠাকরে, নবীন পট্টনায়করা সকলে অভিন্ন পথের পথিক। তুলনায় বামেদের মধ্যে এই দস্তুর কিছুটা কম।
কিন্তু নীতীশের দীর্ঘ মুখ্যমন্ত্রিত্বের জীবনে তাঁর পাশে পাশে তাঁর ছেলে দেখাই যায়নি। অথচ এ বার নীতীশের নির্বাচনী কেন্দ্র নালন্দায় চার দিক ছয়লাপ নিশান্তের ছবিতে। পোস্টার, ব্যানার, এমনকী বিলবোর্ডও।
এই নালন্দা থেকেই লোকসভায় গিয়েছেন জেডি(ইউ)-এর কৌশলেন্দ্র কুমার। তিনি বললেন, ‘‘আমরা তো চাইছিই নীতীশবাবুর ছেলে রাজনীতিতে আসুন। এ রাজ্যে নেতাদের যত জন ছেলেমেয়ে রাজনীতিতে এসেছেন, শিক্ষাগত যোগ্যতায় নিশান্ত তাঁদের সবার উপরে।’’
মেসরার বিড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পাশ করা প্রযুক্তিবিদ। বিদেশে পড়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। নিশান্তের রাজনীতিতে আসার পক্ষে সওয়াল করে কৌশলেন্দ্রর প্রশ্ন, ‘‘এক বার চাইলেই কি অতি সহজে লোকসভার সদস্য হতে পারতেন না নীতীশ-পুত্র? কিন্তু কখনও তিনি তা করেননি। পর্দার আড়ালেই থাকতে চেয়েছেন।’’ এখন দলের মধ্যে থেকেই দাবি উঠছে, তাঁকে নিয়ে আসা হোক রাজনীতিতে। লালুপ্রসাদ যে রকম তাঁর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এখনই নেতৃত্বের পরের প্রজন্ম তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন, লালুর ছেলে তেজস্বী নীতীশের সরকারে উপমুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন। তেজপ্রতাপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেখানে নীতীশ হাত গুটিয়ে থাকবেন কেন, এ প্রশ্ন নীতীশের দলেও জমছে।
নিশান্ত অবশ্য ছোটবেলা থেকে যতটা না পিতৃভক্ত, মাতৃভক্ত তার চেয়ে বেশি। বড় হয়েছেন মায়ের কাছেই। নালন্দার পাশেই কল্যাণবিঘা নামে একটি গ্রামে নীতীশের জন্ম ও বড় হওয়া। সেই গ্রামের বাসিন্দারাও বলেন, নীতীশের স্ত্রী মঞ্জু সিন্হা চিরকাল নিজেকে পাদপ্রদীপের আলো থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন। মঞ্জুদেবী ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা। এবং অবসর গ্রহণের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বাস-এ করে স্কুলে যেতেন। দীর্ঘদিন ধরেই নীতীশ তাঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে এত ব্যস্ত থেকেছেন যে, স্ত্রী-পুত্রের জন্য বেশি সময় দিতে পারেননি। সে কথা তিনি আজ নিজেও স্বীকার করেন।
সেই স্ত্রী ২০০৭ সালের মে মাসে প্রয়াত হন। সে দিন বাবা-ছেলে মঞ্জুদেবীর মরদেহ কাঁধে করে একসঙ্গে শ্মশানে গিয়েছিলেন। সে দিন নীতীশকে মানুষ দেখেছিলেন হাউ-হাউ করে কাঁদতে। আরও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, পরিবারের সেই শোকের মধ্য দিয়েই এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় বাবা-ছেলের সম্পর্কে। ছেলে এসে মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে থাকতে শুরু করেন। অনেকে অবশ্য বলেন, নীতীশের একদা ঘনিষ্ঠ ললন সিংহের সঙ্গে নীতীশ-পুত্রের সম্পর্ক ছিল খুব খারাপ। সেই ললন শেষ পর্যন্ত নীতীশকে ছেড়ে দেওয়ার পর সম্পর্কের উন্নতি হয়।
মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে থাকতে শুরু করার পর থেকে নিশান্ত প্রশাসনের নানা ব্যাপারে বাবাকে পরামর্শও দিতে থাকেন। নীতীশের দলের প্রাক্তন রাজ্যসভার সদস্য এন কে সিংহ জানাচ্ছেন, নিশান্তই নগরায়ণ, বিদ্যুৎ আনার মতো আধুনিক চিন্তাভাবনা নিয়ে নীতীশকে পরামর্শ দিয়েছেন। প্রযুক্তির ছাত্র হিসেবে বাবাকে নতুন ভাবনায় সাহায্য করেছেন।
সম্প্রতি মঞ্জুদেবীর মৃত্যুবার্ষিকীর একটি অনুষ্ঠান হয় নালন্দায়। সেই অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষেই নিশান্তের ছবি-সহ প্রচুর পোস্টার-ব্যানার ছড়িয়ে দেওয়া হয় নালন্দার পথেঘাটে। মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নিশান্ত সক্রিয় ভূমিকা নেন। বাবার পাশে থাকেন সব সময়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমেও তা ধরা পড়ে। এ বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নীতীশের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও হাজির ছিলেন তাঁর পুত্র।
নিশান্তের রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে নীতীশ অবশ্য মুখে বলছেন, ‘‘আমার পুত্র প্রাপ্তবয়স্ক। সে কী করবে, সেটা তার ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমার কোনও অভিমত থাকতে পারে না। ও রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছে, এমন খবর আপনাদের কাছে থাকলেও আমার কাছে তো নেই।’’ রাজনীতির লোকেরা
বলছেন, রাহুল গাঁধীর ব্যাপারেও সনিয়া গাঁধী অতীতে এমনটাই বলতেন। এটি হয়তো নীতীশের ‘মনের কথা’ নয়।
জেডি(ইউ)-এর প্রবীণ নেতাদের অনেকের বক্তব্য, লালুর ছেলেমেয়েরা আছেন। রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ রাজনীতিতে এসেছেন। নিশান্ত এলে ক্ষতি কী? রাজনীতিতে পূর্ণচ্ছেদ বলে তো কিছু নেই। বরং নিশান্ত এলে একটু অন্য ধরনের মুখ পেতে পারে বিহার।
এই সংক্রান্ত ছবির গ্যালারি দেখতে • রাজনীতির মাঠে পারিবারিক উত্তরাধিকার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy