কাশ্মীরের মনে সত্যিই কি এত ঘৃণা সেনার বিরুদ্ধে? না কি অনেকটাই বাড়িয়ে বলা? বিতর্ক তীব্র। ছবি: পিটিআই
শুনশান রাস্তাঘাট। কার্ফুর দাপটে দোকানপাটের ঝাঁপ বন্ধ। গাড়ি-ঘোড়ারও দেখা নেই। মাঝে-মধ্যে ভারী বুটের শব্দ আর উদ্যত কালাশনিকভের ভ্রূকুটি। পথের বাঁকে হঠাৎ সশস্ত্র বাহিনীর মুখোমুখি বছর চারেকের একটা ছেলে। একলা, হাতে উদ্যত গুলতি। লক্ষ্যস্থির নিরাপত্তকর্মীর মুখে।
এই ছবি নিয়ে আপাতত তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া।
কাশ্মীর উপত্যকা গত ৮ জুলাই থেকেই উত্তাল। যার মৃত্যুকে ঘিরে এই আগুন ভূস্বর্গে, সেই বুরহান ওয়ানির খাসতালুক ত্রাল থেকে জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর, উত্তাপের আঁচ সর্বত্র। প্রায় এক মাস ছুঁতে চলা আগুনে বিক্ষোভের টুকরো টুকরো ছবি ভেসে উঠছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সে সব রুখতে জম্মু-কাশ্মীরে ইন্টারনেট পরিষেবাতেও রাশ টেনেছে প্রশাসন। কিন্তু বজ্রমুষ্টির ফাঁকফোকর দিয়েই ভেসে উঠেছে এমন এক কাশ্মীরি শিশুর ছবি, যা নিয়ে টুইটার, ফেসবুক তোলপাড়। পথে পথে বিক্ষোভের মুখ হয়ে উঠেছিল যে কাশ্মীরি তরুণরা, টানা কার্ফুর জেরে তাঁরাও রাস্তাঘাট থেকে উধাও। কিন্তু বছর চারেকের একটা ফুটফুটে বাচ্চা একা বেরিয়েছে রাস্তায়, গুলতি নিয়ে বাহিনীর উপর আঘাত হানতে উদ্যত সে!
সংবাদ সংস্থা পিটিআই ছবিটা প্রকাশ করেছিল। সঞ্জীব ভট্ট নামে এক অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস ছবিটি নিজের টুইটার হ্যান্ডলে পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, ‘‘যখন এইটুকু একটা বাচ্চা নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে তার গুলতি তাক করছে, তখন বুঝতে হবে আমরা কাশ্মীরে স্পষ্টতই হেরে গিয়েছি।’’ সঞ্জীব ভট্টের এই পোস্টকে কেন্দ্র করে বিতর্কের ঝড় আরও তীব্র হয়েছে। কেউ বলেছেন, ভারতীয় সেনা তীব্র অত্যাচার চালাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরে। কেউ বলেছেন, কাশ্মীরের হৃদয়ে ভারতের প্রতি যে তীব্র ঘৃণা জমেছে, তার প্রতিফলন এই ছবিতে। এক জন লিখেছেন, শুধু ক্যামেরাটা বন্ধ হতে দিন, এই শিশুর কণ্ঠস্বর চিরতরে থেমে যাবে।
কিন্তু এই ছবিটার একটা দ্বিতীয় পর্বও রয়েছে:
এই দ্বিতীয় পর্বে দেখা যাচ্ছে গুলতি ছেড়েছে বাচ্চাটা। পুলিশের সঙ্গে ভাব জমেছে তার। সতর্ক নজরদারি চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। তাঁদের পাশে পরম নিশ্চিন্তে, হাসিমুখে বসে রয়েছে বছর চারেকের বাচ্চাটা। সেই ছবিও সামনে এসেছে টুইটারের মাধ্যমেই। স্তুতি মিশ্র নামে এক জন এই ছবিটি টুইট করেছেন। যাঁরা কাশ্মীরের মনে ভারতের সম্পর্কে ঘৃণার উল্লেখ করছিলেন, মূলত তাঁদের জবাব দিতেই স্তুতি মিশ্রর এই টুইট। ছবিটি টুইট করে তিনি লিখেছেন, ‘‘আসল ছবিটা দেখার জন্য মাঝে মাঝে ঘৃণাটা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয়...।’’
স্তুতি মিশ্রর টুইট করা এই ছবি কিন্তু অনেক সমালোচকের মুখই বন্ধ করে দিয়েছে। শিশুটি যখন বাহিনীর দিকে গুলতি তাক করে রেখেছিল, সেই মুহূর্তের ছবিতেও নিরাপত্তা কর্মীদের হেসে, আদরের ঢঙে শিশুকে থামানোর চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই। কিন্তু ছবিটির দ্বিতীয় পর্বটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে ওঠার আগে পর্যন্ত খুব কম লোকই নিরাপত্তা কর্মীদের সেই মানবিক মুখটার দিকে তাকিয়েছেন। স্তুতি মিশ্রর টুইট সামনে আসার পর অনেকের টনক নড়ে।
তবে বিতর্ক কি তাতেও শেষ হয়? এক ব্যক্তি টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আপনারা কি বুঝতে পারছেন না, এই ছেলেটাই বড় হয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের নিশানা বানাবে?’’
আরও পড়ুন: বুলন্দশহরের পর বরেলী, বন্দুক ঠেকিয়ে গাড়িতে তুলে শিক্ষিকাকে গণধর্ষণ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy