প্যারিস হামলার প্রেক্ষিতে ফের এক দফা সতর্কবার্তা জারি করল কেন্দ্র। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে সবক’টি রাজ্যকে একপ্রস্থ সতর্ক করে বলা হয়েছে, লোন উল্ফ মডেল অর্থাৎ জনবহুল এলাকায় একা হামলা চালাতে পারে আইএস ভাবধারায় বিশ্বাসী যুবকেরা। এই কারণে সংখ্যালঘু যুব সমাজের একাংশ আইএস ভাবধারায় প্রভাবিত হচ্ছে কিনা তাও নজরে রাখতে বলা হয়েছে।
‘‘আইসিস কোনও নির্দিষ্ট দেশ নয়, সারা পৃথিবীর কাছেই আশঙ্কার। ভারতেও আক্রমণ চালাতে পারে এই জঙ্গি গোষ্ঠী।’’ মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
বর্তমানে গোটা দেশের মধ্যে ১২টি রাজ্যে আইএসের প্রভাব রয়েছে বলে জানতে পেরেছে কেন্দ্র। এর মধ্যে মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতেই আইএসের প্রভাব সবথেকে বেশি। পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গ বা অসম। ইতিমধ্যেই দমদমের এক যুবককে আইএস ভাবধারা ছড়ানোর অপরাধে আটক করে পুলিশ। কেন্দ্র মনে করছে, ধীরে ধীরে এ দেশের একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টায় রয়েছে আইএস। আর এই কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে শিক্ষিত যুবকদের। যাদের কাজ হল আরও দশ জনের মধ্যে সেই ভাবধারা ছড়িয়ে দেওয়া।
আইএসের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের উদ্বেগের বিষয়টি হল, লস্কর বা আল কায়দার জঙ্গিদের নিজেদের প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে এসে প্রশিক্ষণ দিয়ে তারপর তাদের ফিদায়েঁ হিসাবে ব্যবহার করত। কিন্তু আইএস স্রেফ ইন্টারনেট ব্যবহার করে যুবকদের নিজেদের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত করছে। কী ভাবে বোমা বানানো যায়, এবং তা জনবহুল এলাকায় ব্যবহার করলে সবথেকে বেশি ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে বাড়িতে বসেই ওয়েবসাইট থেকে জানতে পেরে যাচ্ছেন কট্টর ভাবধারায় বিশ্বাসী যুবকেরা।
সম্প্রতি আরও একটি তথ্য চিন্তায় ফেলে দিয়েছে কেন্দ্রকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জেনেছে, গোটা পৃথিবীতে আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যে ভারতেই আইএস সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সবথেকে বেশি বার দেখা হয়েছে। যা দেখে কেন্দ্রের বিশ্লেষণ, এ দেশেও আইএস সম্পর্কে ক্রমশ আগ্রহ বাড়ছে। এই আগ্রহ শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যুবকদের একাংশকে আইএস-র কট্টর ভাবধারায় যে একেবারে অনুপ্রাণিত করবে না এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্র।
সিরিয়া-তুরস্কের সাফল্যে এমনিতেই উজ্জীবিত আইএস। এর মধ্যে হয়েছে প্যারিসে হামলা। সমীক্ষা বলছে, গোটা বিশ্বে ক্রমশ বাড়ছে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর জনসমর্থন। পিছিয়ে নেই ভারতও। খিলাফত বা ধর্মীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সমর্থনে অস্ত্র তুলে নিতে ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়েছেন বেশ কিছু যুবক। প্রত্যক্ষ সংগ্রামে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি দেশের কোনও একটি সম্প্রদায়ের যুব সমাজের একাংশের পরোক্ষ সমর্থনও যে আইএসের পিছনে রয়েছে এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও। কেন্দ্রের আশঙ্কা বাড়িয়ে, এক বৃহত্তর খিলাফত বা ধর্মীয় সাম্রাজ্যের গঠনের লক্ষ্যে তাদের পরবর্তী নিশানা হল ভারত এমনটাই ইতিমধ্যেই দাবি করতে শুরু করেছে ওই সংগঠনটি। মার্কিন গোয়েন্দাদের আশঙ্কা ইতিমধ্যেই ভারত অভিযানের লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তারা। তাই অদূর ভবিষ্যতে আইএস যে ভারতের নিরাপত্তার জন্য বড় সমস্যা হতে চলেছে তা বুঝতে পেরেই আর দেরি না করে আইএসের মোকাবিলায় রাজ্যগুলির সমর্থন নিয়ে এক জোট হয়ে লড়াইতে নামতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
কাশ্মীরে কিছু বিক্ষিপ্ত অংশে আইএসের পতাকার উপস্থিতি ছাড়া এখনও পর্যন্ত ভারতের মাটিতে সেই অর্থে ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর সক্রিয় কোনও উপস্থিতি নেই। তবে বর্তমানে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে আশঙ্কার বিষয় হল প্রধানত দু’টি। প্রথমত, আইএসের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ধর্মীয় সাম্রাজ্য গঠনের লড়াইতে অংশ নিতে ভারত ছেড়েছেন প্রায় দু’ ডজন যুবক। এদের অর্ধেক ইতিমধ্যেই সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন বলে জানতে পেরেছে কেন্দ্র। বহু যুবক যে ওই লড়াইতে অংশ নিতে সিরিয়া-তুরস্কে যেতে চান এমন প্রমাণও এসেছে কেন্দ্রের কাছে। চলতি বছরে ১৭ জন যুবক কেবল তেলেঙ্গানা থেকে ও চার জন মহারাষ্ট্র থেকে তুরস্ক যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল। যাদের শেষ মুহূর্তে আটকানো হয়। দ্বিতীয়ত, সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে না পারলেও, আইএসের ভাবধারা যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে তৎপর রয়েছে একাংশ। এদের অধিকাংশ শিক্ষিত, ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ। শিক্ষিত সমাজের এই অংশ বেশি চিন্তায় রেখেছে মন্ত্রককে।
তবে সমস্যা এখনও যেহেতু প্রাথমিক স্তরে রয়েছে এর মোকাবিলায় জঙ্গি দমনের কঠোর নীতির পরিবর্তে আপাতত অপেক্ষাকৃত নরম নীতি নেওয়ার পক্ষপাতী কেন্দ্র। তাই আইএসের ভাবধারায় বিশ্বাসী ওই বিপথগামী যুবকদের সরাসরি গ্রেফতার না করে বরং তাদের পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে ওই যুবকেরা নিজেদের চরমপন্থী বিশ্বাস থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। মন্ত্রকের বক্তব্য, অনেকেই উৎসাহের বশে আইএসের ভাবধারা কী জানতে চান। তার মানেই তারা অপরাধ করছেন এমন নয়। যদি সেই ভাবধারা প্রচার করে সঙ্ঘবদ্ধ গোষ্ঠী তৈরি করার মতো প্রচেষ্টায় নামে একমাত্র সে ক্ষেত্রেই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তা না হলে তাদের সতর্ক করে পরিবারকে বলা হচ্ছে ওই যুবকের উপর নজর রাখতে।
তবে কেন্দ্র মনে করছে, একা তাদের পক্ষে এই সমস্যা রোখা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। বিশেষ করে ইন্টারনেটের ব্যবহার যে হারে বাড়ছে তাতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একা সব কিছু নজরদারি সম্ভব নয়। তাই আইএস প্রভাব রয়েছে এমন সব ক’টি রাজ্যকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy