গুজরাত ক্যাডারের আইপিএস অফিসার রাকেশ আস্থানাকে সিবিআই প্রধানের অস্থায়ী দায়িত্ব কেন দেওয়া হল, সরকারের কাছে তার জবাবদিহি চাইল সুপ্রিম কোর্ট।
বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতার অভিযোগ বারে বারেই উঠছে। সিবিআই প্রধানের মতো পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিরোধী দলের লোকসভার নেতার মত নেওয়াটা আইনি হলেও তা এড়িয়ে নিজের অনুগত লোককে বসিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার তা নিয়ে বেকায়দায় পড়ল সরকার।
সিবিআইয়ের শীর্ষ স্তরে, অতিরিক্ত অধিকর্তা আস্থানা ছিলেন তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। গত ২ ডিসেম্বর অনিল সিন্হা সিবিআই অধিকর্তার পদ থেকে অবসর নেন। তার ঠিক দু’দিন আগে, অনিলের পরে দ্বিতীয় ব্যক্তি, বিশেষ অধিকর্তা রূপককুমার দত্তকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে নতুন পদ তৈরি করে বদলি করে মোদী সরকার। এর পর আস্থানাকে সিবিআইয়ের অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়।
রূপক টু-জি কেলেঙ্কারি ও কয়লা খনি কেলেঙ্কারির তদন্ত দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট ওই দু’টি তদন্তেরই নজরদারি করছে। আদালতের অনুমতি ছাড়া কেন তাঁকে বদলি করা হল, আজ তাঁর ব্যাখ্যা চেয়েছেন সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা। বদলির ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়েছে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ ও রোহিংটন নরিম্যানের নির্দেশ— ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রকে এর জবাব দিতে হবে।
সিবিআই শীর্ষ পদ পাওয়ার কথা ছিল রূপককুমার দত্তের। সিন্হার বদলির দু’দিন আগে তাঁকে বদলির পরেই স্পষ্ট হয়ে যায়, মোদী তাঁকে ওই পদে চান না। কিন্তু ১৯৮৪-র ব্যাচের আইপিএস রাকেশ আস্থানা কোনও ভাবেই সিবিআই অধিকর্তার দৌড়ে আসেন না। তা সত্ত্বেও কেন তাঁকে সিবিআইয়ের শীর্ষ পদের দায়িত্ব দেওয়া হল? রাজনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, মোদী-অমিত শাহ দু’জনেরই অনুগত আস্থানা। গোধরা কাণ্ডের প্রাথমিক তদন্ত করে তিনিই ঘোষণা করেছিলেন— রীতিমতো পরিকল্পনা করে, চক্রান্ত কষে সাবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন ধরানো হয়। ফলে ৫৯ জন করসেবক মারা যান। গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ উঠলে ঢাল হিসেবে আজও আস্থানার সেই রিপোর্টই তুলে দেখান বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
আইন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও বৃহত্তম বিরোধী দলের লোকসভার নেতাকে নিয়ে তৈরি কলেজিয়াম সিবিআই প্রধান বাছাই করে। কিন্তু অনিল সিন্হার অবসরের দিন পেরিয়ে গেলেও কেন্দ্র সেই বৈঠক ডাকেনি। এর আগে বাজপেয়ী ও মনমোহনের জমানায় আইনি বাধ্যবাধকতা না-থাকলেও বিরোধী নেতার সঙ্গে কথা বলেই সিবিআই প্রধান নিয়োগ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মোদী সরকার এই পথ এড়াতেই বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছে। সরকারি সূত্রের অবশ্য ব্যাখ্যা, সরকারের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের সংঘাত চরমে। তাই ঠাকুর ৩ জানুয়ারি অবসর নেওয়ার পরেই বৈঠক ডাকার পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু এর মধ্যেই সংসদে সরব হন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে। তিনি ওই তিন জনের কমিটির সদস্য। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তিনি অভিযোগ করেন, নিয়মের ফাঁক দিয়ে এক জন জুনিয়র অফিসারকে সিবিআইয়ের শীর্ষ পদে বসানো হচ্ছে। ওই পদে নিয়োগের জন্য অবিলম্বে কলেজিয়ামের বৈঠক ডাকার দাবি তোলেন খাড়্গে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন প্রশান্ত ভূষণ। শুক্রবার তারই শুনানি ছিল।
সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন থেকে বাঁচতে কাল রাতে খাড়্গে ও প্রধান বিচারপতিকে চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। জিতেন্দ্র জানতে চান, ১৬ ডিসেম্বর সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পর কবে বৈঠক হলে সুবিধা হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট দিন ক্ষণ জানানো হয়নি। কেন অনিল সিন্হার অবসরের আগেই বৈঠক ডাকা হয়নি, তারও ব্যাখ্যা দেননি জিতেন্দ্র। কংগ্রেসের অভিযোগ, আসলে বিরোধীদের সঙ্গে ঐকমত্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মোদী সরকারের ধাতে নেই। সরকারের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে গুজরাত ক্যাডারের নিজের অনুগত অফিসারদের বসাচ্ছেন মোদী। সিবিআই শীর্ষ পদেও সেই ধারা বজায় রাখতে চাইছেন তিনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর অবশ্য যুক্তি, ‘‘কোনও অফিসারকে শুধু তাঁর রাজ্যের ভিত্তিতে দেখাটা ঠিক নয়।’’
গুজরাত পসন্দ
• রাজীব টোপনো: প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব
• অরবিন্দ শর্মা: প্রধানমন্ত্রীর যুগ্মসচিব
• পি কে মিশ্র: প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত প্রিন্সিপাল সচিব
• হাসমুখ আঢ়িয়া: রাজস্ব সচিব
• তপন রায়: কর্পোরেট বিষয়ক সচিব
• প্রদীপ পূজারী: বিদ্যুৎ সচিব
• অসীম খুরানা: চেয়ারম্যান, স্টাফ সিলেকশন কমিশন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy