—ফাইল চিত্র।
দু’দিন আগে জম্মুর নাগরোটায় জইশ ই মহম্মদের চার জঙ্গির কাছ থেকে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের পরে শনিবারও জম্মুর একাধিক সেক্টরে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে গোলাগুলি ছুড়েছে পাকিস্তানি বাহিনী। লাম সেক্টরে ভারতীয় এক জওয়ান পাকিস্তানের গোলায় নিহত হয়েছেন। কাঠুয়া সেক্টরে জখম হয়েছেন আরও এক সেনা জওয়ান। পাল্টা ‘মুখের মতো জবাব’ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। শনিবার সন্ধ্যায়ও জম্মুর সাম্বা সেক্টরে সীমান্ত পেরিয়ে পাক বাহিনীর ‘গুপ্তচর ড্রোন’ উড়তে দেখা গিয়েছে। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক এই মরিয়া ও বেপরোয়া আচরণ থেকেই ভারতীয় গোয়েন্দারা আঁচ করছেন, শীতের আগে কাশ্মীরে বড় কোনও নাশকতার চক্রান্ত করছে তারা।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান দূতাবাসের শার্জে দ্য’ফেয়ার-কে তলব করল নয়াদিল্লি
শীতে বরফ পড়ে কাশ্মীরে অনুপ্রবেশের রাস্তাগুলি দুর্গম হয়ে ওঠার আগেই যত জন সম্ভব প্রশিক্ষিত জঙ্গিকে সেখানে ঢুকিয়ে দেওয়াটা পাকিস্তানের পরিচিত চাল। ফি বছরের মতো এ বারেও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা তাই নজরদারি বাড়িয়েছে। সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণরেখার ও-দিকের ‘লঞ্চ প্যাড’-গুলিতে বহু জঙ্গি অনুপ্রবেশের জন্য তৈরি হয়ে রয়েছে বলে কয়েক সপ্তাহ ধরেই নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য আসছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। দিন কয়েক আগে পাকিস্তানি গোলাগুলিতে ৫ ভারতীয় জওয়ান-সহ ১১ জন মারা যান। জঙ্গি অনুপ্রবেশে ‘কভার দেওয়া’-র জন্যই যে পাকিস্তানি বাহিনী সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করছে, দিল্লি সে বিষয়ে নিশ্চিত। অর্থাৎ, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা যখন পাক বাহিনীর গোলাগুলির মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকবে, অস্ত্রশস্ত্র-সহ জঙ্গিদের ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে। শুক্রবার রাতেও পাকিস্তান বিনা প্ররোচনায় গোলাবর্ষণ শুরু করে বলে জানিয়েছে জম্মুতে মোতায়েন সেনাবাহিনীর হোয়াইট নাইট কোর। গুলি লাগে জম্মুর রাজৌরি জেলার নওশেরা সেক্টরে ফরোয়ার্ড পোস্টে মোতায়েন হাবিলদার পাতিল সংগ্রাম শিবাজির মাথায়। পরে মারা যান তিনি। মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের নিগাভে গ্রামের বাসিন্দা হাবিলদার শিবাজি। রাজৌরির লাম সেক্টরে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আর এক জওয়ানও। সামরিক হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
সামনে মুম্বই হামলার বর্ষপূর্তি, সঙ্গে কাশ্মীরে স্থানীয় স্তরের নির্বাচন। কাশ্মীর পুলিশের এক কর্তার কথায়, “নাগরোটার সংঘর্ষ আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। শুধু চার জন জঙ্গি নিহত হওয়াটা বড় কথা নয়, তাদের কাছ থেকে যে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র মিলেছে, তাতে স্পষ্ট— পাকিস্তানের বড় কোনও পরিকল্পনা রয়েছে।” চার জঙ্গি যে গাড়িটিতে জম্মু থেকে কাশ্মীরের দিকে যাচ্ছিল, তা থেকে ১১টি অ্যাসল্ট রাইফেল, ২৪টি ম্যাগাজিন, সাড়ে ৭ কেজি আরডিএক্স, ২০ মিটার ফিউজ় তার, ৬টি ডিটোনেটর, একটি আন্ডার ব্যারেল গ্রেনেড লঞ্চার, ৩৪টি গ্রেনেড, ৩টি পিস্তল ও ছ’টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে। ওই পুলিশ কর্তার কথায়, চার জঙ্গির কাছ থেকে ১১টি অ্যাসল্ট রাইফেল উদ্ধারের অর্থ, আরও অনেকে এই পরিকল্পনায় যুক্ত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে— প্রথমিক তদন্তে স্পষ্ট, জম্মুর কোনও জায়গা দিয়েই ভারতে ঢোকে চার জঙ্গি। সেখান থেকে ছোট ট্রাকে চড়ে সাম্বা রোড ধরে তারা কাশ্মীরের দিকে রওনা দেয়। কিন্তু নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নাগরোটায় চেক পোস্ট তৈরি করে পুলিশ। তাতেই আটকে গিয়ে কাশ্মীরে পৌঁছনোর ছক বানচাল হয়ে যায় জঙ্গিদের। নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে বেশ কিছু ওষুধ বাজেয়াপ্ত হয়েছে, যা পাকিস্তানের পাঁচটি সংস্থার তৈরি। এগুলি হল— লাহৌর মেডিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট, কারশি ইন্ডাস্ট্রিজ়, শামি ফার্মাসিউটিক্যালস, রেহমান রেনবো এবং সানোফি-অ্যাভেন্টিস পাকিস্তান। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জঙ্গিরা স্মার্টফোনে পাকিস্তানে বসে থাকা তাদের পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গিয়েছে। সেই ফোনগুলিও পাকিস্তানের কিউফোন সংস্থার তৈরি।
পুলিশ কর্তাদের কথায়, সব মিলিয়ে পাকিস্তানি চক্রান্তের বিষয়টি নিয়ে লুকোছাপার অবকাশই নেই। নিরাপত্তা বাহিনী কড়া নজরদারির মধ্যেও সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিরা। কোনও ভাবে তারা কাশ্মীরে পৌঁছতে পারলে কী হতো, তা নিয়েই এখন আলোচনা পুলিশ মহলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy