নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ে ফের পথে নেমেছেন কৃষকরা। ফের দিল্লি সীমান্তে ব্যরিকেড করে বসে রয়েছেন কৃষকেরা। ফি বছর কেন কৃষকদের এ ভাবে পথে নামতে হচ্ছে তা নিয়ে কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। উপরাষ্ট্রপতির প্রশ্ন, “কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কেন পূরণ করা যাচ্ছে না? বছর ঘুরে যাচ্ছে, কিন্তু কেন আমরা কিছু করতে পারছি না।...কেন কৃষকেরা অসহায়, পীড়িত!” গত কাল লোকসভার পরে আজ রাজ্যসভায় কৃষকদের সমর্থনে কক্ষত্যাগ করেন বিরোধীরা। ধনখড়ের কথায়, যা কুম্ভীরাশ্রু ছাড়া কিছু নয়।
এ দিকে ধনখড়ের মুখে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর ওই প্রকাশ্য সমালোচনা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। বিরোধীদের দাবি, শিবরাজের নামে এ ভাবে ধনখড়ের সমালোচনার পিছনে সম্ভবত পরিকল্পিত পদক্ষেপ রয়েছে। শিবরাজ চার বার মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। গত ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলকে নিজের রাজ্যে জিতিয়ে এনেছেন তিনি। যদিও দলের নির্দেশে ছাড়তে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর পদ। স্থান হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। শিবরাজ শেষ সময়ে মধ্যপ্রদেশে ‘লাডলি বহেনা’ যোজনা চালু করে নিজের রাজ্যে যেমন দলকে জিতিয়েছেন, তেমনি মহারাষ্ট্র বিজেপি নেতৃত্বের প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি, শিবরাজের দেখানো পথে মহিলাদের হাতে নগদ তুলে দেওয়ার যোজনার মাধ্যমে মরাঠাভূমে ক্ষমতায় ফিরতে সক্ষম হয়েছে গেরুয়া জোট। সমর্থকদের কাছের মানুষ শিবরাজকেই তাই জে পি নড্ডার পরে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হিসাবে দেখতে চাইছিলেন আরএসএসের বড় অংশ। তাঁদের পছন্দের বিষয়টি বিজেপি নেতৃত্বকে ঘরোয়া ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন আরএসএস নেতৃত্ব।
বিরোধীদের মতে, শিবরাজের কাছে সমস্যার হল বর্তমানে যারা বিজেপি দলকে নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁদের আদৌ পছন্দের লোক নন তিনি। ফলে আরএসএস শিবরাজের নাম সুপারিশ করা ভাল ভাবে নেননি দলের ওই অংশ। এ দিকে সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতার স্বাদ পেয়েছেন শিবরাজ। সদ্য হয়ে যাওয়া ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে দলকে জেতাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী হিসাবে কৃষক সমাজের বিক্ষোভ সামলাতেও তিনি অসফল। বিরোধী এক কংগ্রেস নেতার মতে, “তাই কৃষক আন্দোলন ঠেকাতে তাঁর অসফলতার কাহিনী সর্বসমক্ষে নিয়ে আসা সম্ভবত শিবরাজের পদ প্রাপ্তি আটকানোর কৌশল। ঠিক যে ভাবে মহারাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে বিনোদ তাউড়ের অর্থ বিতরণের ভিডিয়ো সামনে আসায় সভাপতির দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছেন ওই মরাঠা নেতা।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)